ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

১৫ দিনের ভিসায় ৭ বছর

ইন্দোনেশিয়ার নারীর ‘বাটপারি’!

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৬ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৬
ইন্দোনেশিয়ার নারীর ‘বাটপারি’!

ঢাকা: নানা মেয়াদের ভিসা নিয়ে বা অবৈধ পন্থায় বাংলাদেশে আসার পর স্থায়ীভাবে থেকে যেতে বিদেশিদের ফন্দি আঁটার খবর নতুন কিছু নয়। যাদের অনেকেই এদেশে নানা অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছেন।


 
অনেকেই আবার বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) গ্রহণের পর বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গিয়েও অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন বলে গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে। আর এতে দেশের ভেতরে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়া ছাড়াও বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।
 
এতোদিন মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগ উঠলেও সাম্প্রতিক সময়ে চীনসহ অন্য দেশের নাগরিকরাও এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছেন।
 
বেশ কয়েক মাস আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) বলা হয়েছিল, রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে এদেশে প্রবেশ করে স্থানীয়দের সঙ্গে যোগসাজশ করে প্রথমে ভোটার হন। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ ও পাসপোর্ট করে নেন। আর বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গিয়ে অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

সে সময় ওই প্রতিবেদনে শতাধিক রোহিঙ্গার ভোটার হওয়ার বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়। পরবর্তীতে সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেয় ইসি।

রোহিঙ্গারা ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের নাগরিকদেরও এদেশে অবৈধভাবে ভোটার হওয়ার অভিযোগ রয়েছে ইসিতে।
 
আবার সাম্প্রতিক সময়ে ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরি করে চীনা নাগরিকের টাকা তুলে নেওয়ার অপকর্মের কথাও গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।
 
মায়ানমার, চীনসহ অন্য দেশের নাগরিকদের সঙ্গে এবার ইন্দোনেশিয়ার এক নারী নাগরিকের নাম যুক্ত হয়েছে। যিনি অবৈধভাবে বাংলাদেশে সাত বছর ধরে অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যে একজনকে বিয়ে করে জাতীয় পরিচয়পত্রও সংগ্রহ করেছেন।
 
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) পাঠানো চাঁদপুরের পুলিশ সুপারের (এসবি) লিখিত অভিযোগপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। অভিযোগপত্রটিতে গত ০৪ জুন স্বাক্ষর করেছেন তিনি।
 
এতে তিনি উল্লেখ করেছেন- ‘ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক ইমি উইযাইয়ানিট (Emi Wijayanit), পিতা: সুপার্তু (Supartu), মাতা-সুয়াটি (Suyati), ঠিকানা: Rangan Barat, II KCKUARO KB PARIS, KAL-TIM, INDUNESIA। তিনি ইন্দোনেশিয়ার পাসপোর্ট জ৩৯৮৪৯৪ মূলে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ২০০৯ সালের ১৬ এপ্রিল ইস্যুকৃত ১৫ দিনের জন্য ১৯৫৩(টি)/০৯ নম্বর ভিসা নিয়ে একই বছরের ২৪ মে বাংলাদেশে আসেন’।
 
‘এদেশে আসার পর তিনি বাংলাদেশি নাগরিক চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার খারখাদিয়া (ঢালিবাড়ি) গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে মো. শাহ পরান ভূঁইয়ার সঙ্গে ২০০৯ সালের ১ জুন ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার ভিসার মেয়াদ ২০০৯ সালের ৮ জুন শেষ হয়। আর পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। কিন্তু পাসপোর্ট ও ভিসার মেয়াদ বাড়ানো ছাড়াই এদেশে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন ইমি’।
 
অভিযোগপত্রে তিনি আরো বলেছেন, ‘অনুসন্ধানে দেখা গেছে ইমি শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সহায়তায় বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন। যার এনআইডি নম্বর ১৯৭৭১৩১৪৫১১০০০০১২। এনআইডিতে ইমি তার স্বামীর নাম শাহ পরান ভূঁইয়া এবং মায়ের নাম মাহমুদা আক্তার উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ প্রকৃত মায়ের নাম উল্লেখ না করে কল্পিত/ভুয়া নাম উল্লেখ করেছেন’।

এজন্য চাঁদপুরের জেলা পুলিশ সুপার (এসবি) তার অভিযোগপত্রে ইমি’র এনআইডি বাতিল করারও অনুরোধ জানিয়েছেন ইসিকে। যা নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব সিরাজুল ইসলামকে দেওয়া হয়েছে।
 
এদিকে ইসি’র এনআইডি সার্ভার থেকে ১৯৭৭১৩১৪৫১১০০০০১২ নম্বরটি সার্চ দিয়ে ওই পুলিশ সুপারের অভিযোগে উল্লেখিত ইমি’র তথ্যগুলোর মিল পাওয়া গেছে।
 
ইসি’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বাংলানিউজকে জানান, ইন্দোনেশিয়ার নাগরিকের অবৈধভাবে বাংলাদেশের ভোটার হওয়া এবং এনআইডি সংগ্রহ করার বিষয়টি কমিশনের কাছে নথি আকারে উত্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন সচিব সিরাজুল ইসলাম। বিষয়টি যাচাইয়ের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদিও আপাতদৃষ্টি ইমি ‘বাটপারি’ করেছেন বলে মনে হচ্ছে। তবে অভিযোগটি নিয়ে সিদ্ধান্তের জন্য মাঠ পর্যায়ে তদন্তের প্রয়োজন হতে পারে।
 
২০০৮ সাল থেকে দেশের নাগরিকদের এনআইডি সরবরাহ করছে নির্বাচন কমিশন। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার অবৈধ এনআইডি বাতিল করেছে সংস্থাটি, যাদের বেশিভাগই মায়ানমারের নাগরিক। বর্তমানে দেশে ৯ কোটি ২০ লাখের মত নাগরিকের এনআইডি রয়েছে। আরো প্রায় ৭০ হাজার নাগরিকের এনআইডি সরবরাহের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন নির্বাচন কমিশনে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৬
ইইউডি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।