মাগুরা থেকে ফিরে: সামনের জুন মাসেই স্বপ্নের সেতুতে পা পড়বে দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকা মানুষের। চলবে দূর পাল্লার বাস-ট্রাকসহ নানা যানবাহন।
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার মধুমতি নদীতে শেখ হাসিনা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। ইতোমধ্যে ৭৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০১৭ সালের জুন মাসে সেতুটির শতভাগ নির্মাণ কাজ শেষ হবে। আর জুনেই যাতায়াতের জন্য খুলে দেওয়া হবে সেতুটি।
‘শেখ হাসিনা সেতু’ চালু হলে একদিকে যেমন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। একই সঙ্গে মানুষের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে সময়-অর্থ সাশ্রয় হবে। মধুমতির দুই তীরের অসংখ্য মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে। গড়ে উঠবে নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অগ্রণী ভূমিকা রাখবে জীবনমান ও ভাগ্যোন্নয়নে।
মধুমতি নদীতে ‘শেখ হাসিনা সেতু’ ও পদ্মা নদীর মাওয়ায় ‘পদ্মাসেতু’ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগে আমূল পরিবর্তন আসবে। যাতায়াতে সব দিক দিয়ে বেশি সুবিধা পাবে মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, যশোর, ফরিদপুর, ঢাকা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও বরিশালসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর মানুষ।
মহম্মদপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মহম্মদপুরবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। এই সেতুটি উভয়পাড়ের মানুষের শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে আমূল পরিবর্তন আনবে। উভয়পাড়ে শিল্পকলকারখানা গড়ে ওঠার মধ্যদিয়ে বহু বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
মহম্মদপুর আর এস কে এইচ ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক এ. কে. এম নাসিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মধুমতি নদীতে শেখ হাসিনা সেতুটি চালু হলে এ অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। বদলে যাবে উভয়পাড়ের অসংখ্য মানুষের ভাগ্য। সেতুটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছি।
উপজেলা প্রকৌশলী মোহা. রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে শেখ হাসিনা সেতুর নির্মাণ কাজ। নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের প্রতি যত্নশীল হওয়ায় কাজের মানও সন্তোষজনক।
মাগুরার নির্বাহী প্রকৌশলী (এলজিইডি) মীর্জা মো. ইফতেখার আলী বাংলানিউজকে বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্থাৎ সামনের জুনের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষ হবে। ইতোমধ্যে সেতুর ৭৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করবো ২০১৭ সালের মে মাসে কাজ শেষ করার। যেন জুন মাসে সেতুটি উদ্বোধন করা যায়।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ও মাগুরা-২ (মহম্মদপুর, শালিখা ও মাগুরা সদরের ৪ ইউনিয়ন) আসনের সংসদ সদস্য ড. শ্রী বীরেন শিকদার বলেন, মহম্মদপুর উপজেলাবাসীর কাছে এটা ছিলো আমার নির্বাচনপূর্ব প্রতিশ্রুতি। যেটি এখন সফলতার দোরগোড়ায়। আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণের জন্য এরকম উন্নয়নমূলক কাজ অব্যাহত থাকবে।
২০১৩ সালের ৭ নভেম্বর উপজেলা সদরের মধুমতি নদীতে (বাঁশতলা খেয়াঘাট নামে পরিচিত) ৬০০ দশমিক ৭০ মিটার পিসি গার্ডার সেতুর নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মাগুরা-২ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য (বর্তমানে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী) শ্রী বীরেন শিকদার।
২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর কার্যাদেশ পায় ম্যাক্স-র্যানকেন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৫ সালের এপ্রিলে সেতু নির্মাণের মূল কার্যক্রম শুরু হয়। কার্যাদেশের ১৮ মাসের (দেড় বছর) মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য ৬০০ দশমিক ৭০ মিটার এবং প্রস্থ ৯ দশমিক ৮০ মিটার। ১৫০টি পাইল, ১৫টি স্প্যান এবং ৭৫টি পিসি গার্ডার রয়েছে সেতুটিতে। নির্মাণ ব্যয়ে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ৫৯ কোটি ৯০ লাখ ৩৪ হাজার ৭০৫ টাকা ২৫ পয়সা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৬
পিসি