ঢাকা: ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন’ আবারও সংশোধনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে খসড়া উপস্থাপন করায় ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাদের স্বার্থে আবারও এ আইনের সংশোধনীর প্রস্তাব আনা হয়েছে সেটাও তিনি বৈঠকে জানতে চান।
এ আইনের সংশোধনীর খসড়া বৈঠকে তোলার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে তা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন এবং প্রত্যাহার করান। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে এ আইনের কোনো সংশোধনী আনা হলে তা বৈঠকে তোলার আগে তাকে দেখিয়ে নেওয়ারও নির্দেশনা দেন।
বৈঠক শেষে একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (সংশোধন) আইন-২০১৬’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদনের জন্য তোলা হয়েছিল। সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সূত্র জানায়, আইনের খসড়া প্রস্তাবটি বৈঠকে তোলার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তিনি বলেন, ‘এটা বার বার তোলা হচ্ছে কেন? এর আগে ৬ বার সংশোধন করা হয়েছে। কার স্বার্থে এটা আবার সংশোধনের প্রস্তাব আনা হচ্ছে? যে মানুষদের জন্য এ আইন করা হয়েছে, সংশোধনে তাদের কি কোনো স্বার্থ আছে? কাদের স্বার্থে আইনটির আবার সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হলো’।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কি উদ্দেশ্যে এটা আবার সংশোধনের প্রস্তাব আনলেন, আমাকে বোঝান। যাদের স্বার্থে এ আইন করা হয়েছিলো, তারা কি কোনো অসুবিধায় পড়েছেন?’
প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব বলেন, সারা দেশের জেলা প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনাররা (ভূমি) বার বার সংশোধনের সুপারিশ করেছেন। তাই এ খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের এ কথা শোনার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বুঝেছি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) স্বার্থে এটা করা হয়েছে। যে উদ্দেশ্যে এ আইনটি করেছি, সেটি আপনারা বাস্তবায়ন করতে দেবেন না। এটা প্রত্যাহার করেন, আর কতোবার সংশোধন লাগবে?’
এ সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এটা সংশোধন করা মানে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) ঘুষ খাওয়ার, টাকা নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া’।
আইনমন্ত্রীসহ অন্য দুই একজন মন্ত্রীও আলোচনায় অংশ নিয়ে এই আইনের সংশোধনী প্রস্তাবের সমালোচনা করেন।
সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সময় এটি নিয়ে কথা বলতে চান যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন সিকদার। প্রধানমন্ত্রী তাকে অনুমতি দিলে এই আইনের যে সংশোধনী প্রস্তাবগুলো আনা হয়েছে, তা অনুমোদন হলে কি কি সমস্যা হবে সেগুলো তুলে ধরে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনিও। বীরেন সিকদার বলেন, ‘ভবিষ্যতে এ আইনের সংশোধনী আনতে হলে খসড়া তৈরির সময় আইনমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী, আমি (যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী) ও আইন সচিব বসে সিদ্ধান্ত নেবো। তারপর খসড়া তৈরি হবে’।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বিতরণ নীতিমালা-২০১৬’ এবং খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারবর্গের মাসিক সম্মানী ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। সূত্র জানায়, এ সময় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম বলেন, ‘খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সিভিলে কম, আর্মিতে বেশি। আর্মিতে ৯৮ জন খেতাবপ্রাপ্ত। কিন্তু সিভিলে মাত্র ৮ জন’।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিমন্ত্রী, পানিসম্পদমন্ত্রী, নৌ-পরিবহনমন্ত্রী এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদমন্ত্রীকে অপরিকল্পিতভাবে বালুমহালের ইজারা যেন না দেওয়া হয়, সে নির্দেশ দিয়েছেন। তাদেরকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে বালু কাটার ফলে ব্রিজগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। পরিকল্পিতভাবে বালুমহাল ইজারা দিতে হবে। অপরিকল্পিত বালু কাটা বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৬
এসকে/এএসআর