ঢাকা, শনিবার, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না যশোর পাসপোর্ট অফিসে 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৬
ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না যশোর পাসপোর্ট অফিসে  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

যশোর: চিকিৎসার জন্য ভারতে যাবেন বলে দ্রুত পাসপোর্ট দরকার আমজেদ হোসেনের (৩০)। এজন্য কেশবপুরের জাহানপুর গ্রাম থেকে রোববার (২৩ অক্টোবর) যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আসেন প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র নিয়ে।

লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন আড়াই ঘণ্টা। জমা দিতে না পেরে কাউন্টার থেকে চলে যান ওই অফিসের বড় কর্তা (সহকারী পরিচালক) জামাল হোসেনের কক্ষে।  

তিনি জানালেন, আইডি কার্ডের ফটোকপি নেই। এজন্য জমা নেওয়া যাবে না। আমজেদ বাড়ি ফিরে যান। পরদিন নিয়ে আসেন ফটোকপি। কিন্তু এবার জমা দিতে গেলে জানানো হয় ট্রেড লাইসেন্স নেই। এবারও আবেদন জমা দিতে পারলেন না। তবে, এবার তিনি বাড়ি ফিরলেন না। দারস্থ হলেন ‘চ্যানেল সিস্টেম’ এর। এক হাজার ২০০ টাকার বিনিময়ে সহজেই তার আবেদনপত্র জমা হয়ে গেল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ২৫০টি আবেদনপত্র চ্যানেল সিস্টেমে জমা পড়ে। হিসাব অনুযায়ী এই অফিসে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা ঘুষ লেনদেন হয়। যা অফিসের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মহলে ভাগ হয়। যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন ৩০০টি আবেদন জমা হয়। যার প্রায় সবই এই চ্যানেল সিস্টেমের কল্যাণে।  

আমজেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘কাউন্টারে লেখা আছে সাড়ে ৯টা থেকে আবেদনপত্র জমা নেওয়া হয়। আমি দ্বিতীয় দিন কাউন্টারের সামনে ৯টা থেকে সাড়ে এগারটা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকি। যিনি আবেদন জমা নেবেন তিনি কাউন্টারে আসেন সাড়ে ১০টার পর। এসে পাঁচ মিনিট পর আবার চলে গেলেন। আড়াই ঘণ্টা পর আমার ফাইল দেখেই ফেরত দিয়ে দিলেন। গেলাম সহকারী পরিচালকের কাছে। তিনিও ট্রেড লাইসেন্স লাগবে বলে জানিয়ে দিলেন। আমার মতো যারা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাদের প্রায় সবার ফাইলে নানা ধরণের সমস্যা দেখিয়ে ফেরত দেওয়া হয়।  

তবে, সেই ফাইল আবার দালালের মাধ্যমে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা দিলে সহজেই জমা হয়ে যায়। জমা ওই ফাইলে স্বাক্ষরও করেন বড় কর্তা।

সরেজমিন যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে কথা হয় যশোর শহরের পুরাতন কাজিপাড়ার বাসিন্দার তাজউদ্দিনের সঙ্গে। পেশায় শ্রমিক। কাজ করেন ঢাকায় বিভিন্ন কোম্পানির হয়ে। তিনদিন ধরে ঘুরেও পাসপোর্টের আবেদনপত্র জমা দিতে পারেননি। কর্মকর্তাদের দাবি তাজউদ্দিনকে পেশার সার্টিফিকেট আনতে হবে। তাজউদ্দিন বলেন, ‘বলেন তো ? আমি শ্রমিক হিসেবে কাজ করি-আজ এখানে তো কাল ওখানে। আমাকে কে সার্টিফিকেট দেবে? তিনদিন ধরে ঘুরছি। অফিসের একজন আনসার বলেছে, এক হাজার ৫০০ টাকা দাও কোনো কিছু লাগবে না। ’

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মফিজ, সহকারী পরিচালকের পিএস পরিচয়দানকারী পিয়ন মিলন, কাউন্টারম্যান আল-আমিন, আনসার সাইফুল ইসলাম, ডেলিভারি কাউন্টারে দায়িত্বরত শাহীনের সমন্বয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এদের মধ্যে কাউন্টারম্যান আল-আমিন বিভিন্ন অজুহাতে পাসপোর্ট আবেদনপত্র ফেরত দেন। যা পরে দালালদের মাধ্যমে তার কাছে জমা হয়।  

হারানো পাসপোর্টের লস সার্কুলার, নাম-পেশা-জন্মতারিখ পরিবর্তন-সংশোধনসহ বিভিন্ন কাজের জন্য অর্থ ছাড়া কোনো কাজ করেন না ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মফিজ, পাসপোর্ট হয়ে গেলে ডেলিভারি দেওয়ার সময় নানা অজুহাতে অর্থ আদায় করেন শাহীন। আর এসব অনৈতিক কাজ তদারকি করেন সহকারী পরিচালক জামাল হোসেন।

এ বিষয়ে যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক জামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ সঠিক নয়। অফিসে আসেন বিস্তারিত কথা হবে। ’ 

বাংলাদেশ সময়: ০৬২১ ঘণ্টা, অক্টোবর  ২৬, ২০১৬
ইউজি/পিসি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।