ঢাকা: নৌ-চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে পুনঃখনন করা মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল।
বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি উন্মুক্ত করে দেন।
এর আগে, প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শিশুদের সুরক্ষায় ‘১০৯৮’ হেল্প লাইন’ ও মংলায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন শস্য ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন গুদামের উদ্বোধন করেন।
নৌ-রুটটি চালুর ফলে সুন্দরবনের ভিতরে শ্যালা নদী হয়ে যে নৌ পথটি ছিলো, এর থেকে ৮৬ কিলোমিটার দূরত্ব কমেছে। এখন আর সমুদ্রগামী জাহাজগুলোকে সুন্দরবনের ক্ষতি করে, ঘুর পথে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হবে না। মংলা-ঘষিয়াখালী এই নৌ রুটটির দৈর্ঘ্য ৩১ কিলোমিটার।
জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি খননের মাধ্যমে উন্মুক্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে মংলা-ঘষিয়াখালী সংযুক্ত খালগুলোর মুখ বন্ধ করে চিংড়ি চাষ ও বিভিন্ন পোল্ডার নির্মাণ করায় ভরাট প্রক্রিয়া শুরু হয়। মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলে ২শ ৩৪টি সংযোগ খাল ছিলো।
২০০১ সালের পর থেকেই এ চ্যানেলের নাব্যতা সংকট শুরু হয় এবং ২০১০ সাল থেকে এটি পুরোপুরি শুকিয়ে বন্ধ হয়ে যায়।
গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে গেলে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে জাহাজ চলাচল শুরু করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিদের্শনায় ২০১৪ সালের পহেলা জুলাই থেকে নৌ পথটি পুনরায় খনন শুরু করা হয়। নৌ পথটির ১৩-১৪ ফুট গভীরতা ও ২শ-৩শ ফুট প্রশস্ত করে খনন করা হয়েছে। একই সঙ্গে খনন করা হয়েছে সংযোগ খালগুলোকে।
নৌ পথটি পুনঃখনন করার পর ২০১৫ সালের মে মাসে পরীক্ষামূলভাবে খুলে দেওয়া হয় এবং ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন গভীরতায় মোট ৩৫ হাজার ১৫টি জাহাজ এ নৌ পথে চলাচল করেছে।
উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবিষ্যতে এই চ্যানেলটি যেনো সবসময় সচল থাকে সেজন্য নিয়মিত ড্রেজিংসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, মংলা বন্দরটা সচল রাখা একান্তভাবে প্রয়োজন। এটি ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানো থেকে শুরু করে অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে।
বাংলাদেশের প্রতিটি নদী সচল রাখতে প্রতি বছর মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং করার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নৌ পথ বাংলাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং খুব সস্তায় পণ্য পরিবহন নৌ পথেই হয়ে থাকে।
শ্যালা নদী দিয়ে জাহাজ চলাচলে সুন্দরবন ও পরিবেশের ক্ষতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্যালা নদী ডলফিনের একটা জায়গা। ওখানে ডলফিন আসে। ওই নদীর পানি আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগার খায়। ওই জায়গাটা বন্যপ্রাণির একটা অভ্যয়ারণ্য ছিলো।
তিনি বলেন, মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল বন্ধ হওয়ায় শ্যালা নদী দিয়ে আমাদের জাহাজগুলো চলাচল শুরু করে। এটা সুন্দরবনের জন্য ক্ষতিকর।
রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিরোধিতাকারী পরিবেশবিদদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে আমরা পাওয়ার প্ল্যান্ট করছি। সেটা নিয়ে তারা কেঁদে মরেন।
তিনি বলেন, ঘষিয়াখালী চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়া হলো। এর সঙ্গে সংযুক্ত ২শ ৩৪টি খালের মুখ বন্ধ করে চিংড়ি চাষ করা হলো। বন্যপ্রাণির অভয়াশ্রম নষ্ট হলো। এসব নিয়ে আমাদের পরিবেশবিদদের কখনও একটু টু শব্দও করতে শুনিনি। তাদের কোনো কান্নাকাটিও শুনিনি, কোনো আন্দোলনও শুনিনি। কেউ কোনো কথাও বলেননি।
নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল পুনঃখননের কাজ শুরু করা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক সমস্যা, ড্রেজার নেই। মাটি রাখার জায়গা নেই। তারপরও একরকম জোর করে, সোজাসুজি হুকুম দিয়ে আমরা এই খাল কাটার কাজ শুরু করি।
নৌ মন্ত্রণালয়ের প্রশংসা করে তিনি বলেন, নৌ মন্ত্রণালয় অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে কাজটি করেছে। ২শ ৩৪টি সংযোগ খালে দুই হাজারের বেশি বাঁধ অপসারণ করেছে।
খননের বাকি আরও ৮৩টি খাল খনন করতে গণভবনে উপস্থিত পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল হককে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বাকি খালগুলোর খনন শেষ করতে সেখানকার এলাকাবাসীরও সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। খুলনা শিপইয়ার্ডে জাহাজ নির্মাণের সফলতার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এসময় গণভবনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদসহ প্রধানমন্ত্রীর কয়েকজন উপদেষ্টা ও মন্ত্রী পরিষদের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৬
এমইউএম/এসএনএস