ঢাকা: দেখতে ঠিক রকেটের মতো। কাজটাও তার অনেকটা এমন; একের পর এক আঘাতে পানি বালু আর মাটির নানা স্তর ভেদ করে পাইলকে নদীর তলদেশে নিয়ে যাওয়া।
কাত করে শুইয়ে রাখা যন্ত্রটি পদ্মাসেতুর দ্বিতীয় শক্তিশালী হ্যামার।
এর আগে যে হ্যামারটি এসেছে, সেটি হলুদ রঙের। সেটি ছিল বিশ্বের সর্বোচ্চ ২৪০০ কিলোজুল শক্তির প্রথম কোনো হ্যামার। আর সাদা সাদা হ্যামারটি পরিপূর্ণ শক্তিতে পদ্মাসেতুর কাজের গতি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটি ২০০০ কিলোজুল শক্তির।
সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এই হাইড্রলিক হ্যামার দু’টি হলো পদ্মাসেতুর কাজে ব্যবহৃত সবচেয়ে ওজনদার যন্ত্র। আর নতুনটি পরিচালনার জন্য চার হাজার টন ক্ষমতার আরেকটি ক্রেন কিছুদিন আগে আসে পদ্মায়। সেতুর পাইল নদীর তলদেশে নিতে এ হ্যামার থেকে একের পর এক চাপ প্রয়োগ করতে হয়। একটি গাইডিং ফ্রেমের মধ্যে যখন পাইল বসিয়ে দেওয়া হয়, তখনই কাজ শুরু হয় হ্যামারের। যতোক্ষণ নির্দিষ্ট গভীরতায় পাইলটি না যায়, ততোক্ষণ পর্যন্ত হ্যামারের শক্তিশালী আঘাত অব্যাহত থাকে।
পদ্মাসেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান আবদুল কাদের বাংলানিউজকে জানান, সপ্তাহ খানেক আগে আসা হ্যামারটির কাজ ঠিক আগের হ্যামারের মতোই- পাইল ড্রাইভ করা, যা এখন চলছে। নতুন হ্যামার আসায় পদ্মার দুইপাশে মাওয়া ও জাজিরায় আলাদা আলাদা হ্যামার দিয়ে কাজ চলমান।
এতে কাজের গতি আরও বেড়েছে বলেও জানান দেওয়ান আবদুল কাদের।
সেতু প্রকল্প সূত্র জানায়, এর আগে গত বছর বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হ্যামার জার্মানি থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় তৈরি করে নিয়ে আসা হয়। যা শুধু এই সেতুর জন্যই তৈরি। সেতুর পাইল ৪০তলা ভবনের সমান গভীর তলদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্যই শক্তিশালী হ্যামার ব্যবহৃত হচ্ছে।
পদ্মাসেতু প্রকল্প নির্মাণকারী চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রকৌশলীরা জানান, ছয় কিলোমিটারের বেশি লম্বা পদ্মাসেতুর জন্য ২৬৪টি পাইল ড্রাইভ করতে হচ্ছে। কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে বার্জে তুলে পাইল নিয়ে আসার পর তা গোলাকার গাইডিং ফ্রেমে তোলা হয়। গাইডিং ফ্রেমের হাইড্রলিক জ্যাকের সাহায্যে তা ১/৬ অনুপাতে কোণ করে স্টেবল করা হয়। তারপর ক্রেনের সাহায্যে হ্যামার দিয়ে পাইল পদ্মার তলদেশে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়। সবশেষ পর্যায় হচ্ছে পাইল ড্রাইভিং বা হ্যামারের আঘাত।
একটি হ্যামার প্রতিটি পাইলে মিনিটে ৩৭ বার চাপ দিতে পারে। আঘাতের ভারে পাইল ইঞ্চি ইঞ্চি করে যেতে থাকে পদ্মার তলদেশে।
বাংলাদেশ সময়: ০২৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৬
এসএ/আইএ/এএসআর