ধামরাই (ঢাকা): স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শুকুর আলী ১৭-১৮ বছরের তরুণ। বিক্ষুব্ধ সে সময়ে তিনি তৎকালীন রাজশাহীর নওগাঁয় মুক্তিযোদ্ধাদের মূল ক্যাম্পে বাবুর্চির কাজ নিলেন।
প্রায় সাত মাস ওই ক্যাম্পে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার রান্না করেছেন। নয় মাস যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলেও এখনো প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ পাননি শুকুর আলী।
কিশোর বয়স থেকে সংসারের হাল ধরা শুকুর আলী আজও সে হাল বয়ে বেড়াচ্ছেন। তার সঙ্গের অনেকেরই মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি থাকলেও সার্টিফিকেট না থাকায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি নেই তার।
৪৩ বছর ধরে ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ে রিকশা চালিয়ে সংসার নির্বাহ করছেন শুকুর আলী। তিনি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থানার চরকাটারী গ্রামের বাসিন্দা। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। সংসারে স্ত্রী ও তিন কন্যা সন্তান রয়েছেন। সহায়-সম্বল বলতে তেমন কিছুই নেই।
শুকুর আলী বাংলানিউজকে জানান, তার চাচা মেরাজ মোল্লা (এখন মৃত) ঘর-বাড়ি, জায়গা জমি দখল করে নিয়েছেন। গ্রামের প্রভাবশালীদের হাত করে চাচা মেরাজ মোল্লা তাকে ঘর ছাড়তে বাধ্য করেন। এরপর থেকে তিনি ধামরাই পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডে এক আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে সংসার শুরু করেন।
সে সময় লোকমান হোসেন নামে এক ব্যক্তি তাকে পুরানো একটি রিকশা কিনে দেন। এরপর থেকে টানা ৪৩ বছর তিনি রিকশা চালাচ্ছেন। প্রতিদিন ১০০-১৫০ টাকা তার রোজগার হয়। ওই টাকা দিয়ে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ ও সংসার চালান তিনি।
শুকুর আলীর আক্ষেপ, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের রান্না করে খাওয়ালেও তার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি নেই। ফলে সরকারি কোনো সুবিধা ও অনুদান পান না তিনি।
তিনি জানান, এ বয়সে বয়স্ক ভাতা বা কোনো সহায়তা পেলে সংসারটা অন্তত কোনোমতে চালিয়ে নিতে পারতেন।
তিন-চার বছর আগে সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি তার।
ধামরাই পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, শুকুর আলী থানা রোডে রিকশা চালান। তিনি যে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন এটা আমাকে তিনি কখনো বলেনি। ওয়ার্ড কমিশনার হিসেবে তাকে যতটুকু সাহায্য করার সম্ভব তা করবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৬
এনটি/এসআর