কেরানীগঞ্জ, ঢাকা: দখল আর দূষণে জৌলুস হারাতে বসেছে কেরানীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শুভাঢ্যা খাল। এক সময় এ খাল দিয়ে বড় বড় লঞ্চ ও স্টিমার চলাচল করতো।
কেরানীগঞ্জ উপজেলার শুভাঢ্যা, আগানগর ও তেঘরিয়া ইউনিয়নের প্রায় ৫০ গ্রামের মানুষের সুপেয় পানির প্রধান উৎস ছিলো এই শুভাঢ্যা খাল।
এই খালে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন উপজেলার অনেক বাসিন্দা। দেশীয় প্রায় সব প্রজাতির মাছের অভয়াশ্রম ছিলো শুভাঢ্যা খাল। তবে কালের বিবর্তনে আজ সে খাল মৃতপ্রায়। খালের আয়তন কমে ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে। ময়লা আর আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে খালটি।
এ খালে এখন লঞ্চ তো দূরের কথা খেয়া নৌকাও চলা দায়। খাল রক্ষায় সরকার বিভিন্ন সময় বরাদ্দ দিলেও খাতাপত্রেই তা সীমাবদ্ধ থেকেছে। স্থানীয়দের দাবি খালের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। জনগণের আইওয়াশের জন্য কিছু কাজ করেই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে কাজ।
বর্তমানে খালের প্রায় সম্পূর্ণ অংশে ময়লা আবর্জনা রয়েছে। এমনকি বিভিন্ন ওয়াশিং ডাইং কারখানার বর্জ্য মিশে খালের পনি কালো রং ধারণ করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যৌথবাহিনী শুভাঢ্যা খালে বুড়িগঙ্গা নদীর মুখ থেকে চর কালীগঞ্জ এলাকা থেকে গোলাম বাজার এলাকা পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ খালের উভয় পাশে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ১৮৬টি ছোট-বড় স্থাপনা উচ্ছেদ করে এবং খালটি পুনরায় খনন করে সেখানে পানির নাব্যতা সৃষ্টি করে।
খালটি পুনরায় দখল ও দূষণ হয়ে গেলে ২০১২ সালের জুলাই মাসের শেষের দিকে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ৫৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয়ে খালটি খনন ও উদ্ধারের কাজ শুরু করে। উদ্ধার কাজ শেষ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই আবার দখল ও দূষণের ফলে খালটি পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে।
গত বছর ৮ মার্চ পূনরায় খালটির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, পুনঃখনন ও তীর সংরক্ষণ কাজের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে খালের ১.৩ কিলোমিটার এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, পুনঃখনন ও তীর সংরক্ষণ করে খালের দু’পাশে ব্লক বসিয়ে পানি প্রবাহ সৃষ্টি করার পরিকল্পনা ছিল। ওই বছরের জুলাই মাসেই কাজ শেষ করার কথা থাকলেও কয়েক মাস কাজ করে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। এ বছরের শুরু থেকে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন দরিদ্র কর্মসূচি এবং কাবিখা প্রকল্পের আওতায় নির্ধারিত ১.৩ কিলোমিটারের পর থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে খালের বর্জ্য অপসারণ ও নাব্যতা সৃষ্টির কাজ করে। কিন্তু এর পরও খালের কোন পরিবর্তন হয়নি।
শুভাঢ্যা মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা বেলায়েত হোসেন (৬২) বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ছোটবেলায় এ খালে গোসল করেছি, খালের পানি পান করেছি। আর এখন এ খাল ময়লা আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়েছে। খালের পানি এখন এতোটাই দূষিত যে, এ পানি সেচ কাজেও ব্যবহার উপযোগী নয়।
কালিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা খেয়া নৌকার মাঝি তৈয়ব আলী বলেন, এ খালটিতে নৌকা চালিয়ে আমি একসময় জীবিকা নির্বাহ করতাম। খালের বর্তমান অবস্থার কারণে বাধ্য হয়ে আমাকে পেশা বদল করে গোলামবাজারে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, বর্তমানে শুষ্ক মৌসুম চলছে। শুষ্ক মৌসুমে খালে পানি প্রবাহ কম থাকে। তাছাড়া খাল উদ্ধারে যে বাজেট প্রয়োজন তা উপজেলা প্রশাসনের নেই। শুভাঢ্যা খাল নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৬
আরএ