ঢাকা: ‘স্তন ক্যান্সার’ রোগটির সঙ্গে বেশির ভাগ নারীই কম-বেশি পরিচিত। যেসব নারীরা এ রোগে আক্রান্ত তারা লজ্জায়, কখনও কখনও ভয়ে ভোগান্তির কথা নিজেদের মধ্যে চেপে রাখেন।
ক্যান্সার প্রতিরোধ ও গবেষণা কেন্দ্রের (সিসিপিআর) তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন ১৪ হাজার ৮২২ জন, মারা যান ৭ হাজার ১৩৫ জন। এদের মধ্যে নারী আক্রান্তের হার ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ।
সিসিপিআর বলছে, যাদের ১২ বছর বয়সের আগেই ঋতুস্রাব শুরু হয় এবং যাদের ৫০ বছর বয়সের পরে ঋতুস্রাব বন্ধ হয়- তাদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে।
জরিপে দেখা গেছে, এই রোগের চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে প্রতিবছর ১৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যায়।
২০১৪ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, নারী ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। নারী পুরুষ নির্বিশেষে এই ক্যান্সারের স্থান দ্বিতীয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। স্তন ক্যান্সারের রোগীদের গড় বয়স ৪৩ বছর।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সাবিরা খাতুন বলেন, ক্যান্সারের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। জরিপে উঠে এসেছে, চিকিৎসা করাতে গিয়ে ১৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যান। এছাড়া সংসার ভাঙার অন্যতম কারণ এই ক্যান্সার।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যান্সার ইপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাস্কিন বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের ডিম্বাশয় কার্যকারিতা হারাতে থাকে। ঋতুস্রাব, গর্ভধারণ এবং লিঙ্গসংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য গঠনে সহায়ক হরমোন ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন তৈরি একবারে বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাবে নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন।
তিনি বলেন, ঋতুস্রাব একটি প্রাকৃতিক ব্যাপার। গর্ভাবস্থায় ও জন্মের পরে শিশুর পুষ্টিহীনতা, জিনগত বৈশিষ্ট্য, বৃদ্ধির হার, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি কারণে উপযুক্ত বয়সের আগেই ঋতুস্রাব হয়ে থাকে।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা নীরব ঘাতকের ভূমিকা পালন করে। শরীরের তাপমাত্রা ওঠা-নামা, ওজন বেড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত রাগ, অরুচি, অতিরিক্ত গরম লাগা, মানসিক অস্বস্তি, অনিয়মিত ঘুম- ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ। সাধারণত ৪০-৫০ বছরের নারীদের হরমোন চক্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। তবে শুরুতেই চিকিৎসা নিতে শুরু করলে মারাত্মক রোগের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
একজন নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেও যৌনজীবনে এর কোনো প্রভাব পড়ে না। কেউ স্বীকার না করলেও অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, আমাদের কাছে অনেক রোগী আসেন স্তন ক্যান্সারের কারণে তাদের সংসার ভেঙে গেছে।
এক্ষেত্রে মনোভাবের পরিবর্তন হওয়া দরকার। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা এবং ওষুধ ব্যয়বহুল হওয়ায় পারিবারিক জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে, যোগ করেন তিনি।
রাস্কিন বলেন, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পরিবারিক সহযোগিতা। আর এ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হলে সভা, সেমিনার ও কাউন্সিলিং জরুরি।
বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের মানসিক সহায়তা দিতে ক্যান্সার রোগী ও স্বজন সমাজ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, দিগন্ত মেমোরিয়াল ক্যান্সার ফাউন্ডেশন, আশিক ফাউন্ডেশন, সিসিপিআর, মোসাব্বির ক্যান্সার কেয়ারসহ প্রায় ১৫টি প্রতিষ্ঠান কাজ করে।
রোগী ও স্বজন সমাজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, রোগী ও স্বজন সমাজ ফাউন্ডেশন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের আর্থিক, মানসিক ও পরামর্শ দিয়ে সহয়তা করে। একইভাবে অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে আসছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের খুঁজে বের করে রোগী ও স্বজন সমাজ ফাউন্ডেশন তাদের সহায়তা দেয়।
বাংলাদেশ চিকিৎসা সেবাখাতে অনেক এগিয়েছে। স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা আরও সুশৃঙ্খল করতে সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সমন্বয় এখন সময়ের দাবি, বলেন খোরশেদ আলম।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৬
আরএটি/এটি