ঢাকা: প্রতি বছরের মতো আগামী বছরের ০১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে আগেই।
এবার ৩টি বিদেশি প্রতিষ্ঠানসহ ৩০টি প্রতিষ্ঠানকে ১০ কোটি ৫২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৭ কপি প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দু’টি বিদেশি প্রতিষ্ঠানসহ মোট ৬টি প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৫ লাখ ৫ হাজার ৮৩২ কপি টিচিং ম্যাটেরিয়াল মুদ্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে দু’টি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ৬০ লাখ ১ হাজার ৭২৪ কপি শিক্ষক নির্দেশিকা মুদ্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কার্যাদেশ অনুসারে দেশি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রাথমিক স্তরের ৫০ শতাংশ পাঠ্যপুস্তক আগামী ১৪ নভেম্বরের মধ্যে সরবরাহ করা কথা। ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে শতভাগ বই সরবরাহ করার নির্দেশনা রয়েছে।
বিদেশি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও সরবরাহের বিষয়টি এলসি’র ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এখন পর্যন্ত এলসি খোলা সম্পন্ন না হওয়ায় এখনো বিদেশ থেকে কোনো পাঠ্যপুস্তক আমদানি করা সম্ভব হয়নি। তবে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ১৮টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহের কাজ শুরু করে দিয়েছে।
সর্বশেষ তথ্যানুসারে দেশি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো ৮ কোটি ৭১ লাখ ৯ হাজার ১৫ কপি পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে ১ কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার ৬৫২ কপি সরবরাহ করেছে। যা বরাদ্দকৃত পাঠ্যপুস্তকের ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। ৯টি দেশি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান এখনো কোনো পাঠ্যপুস্তক মাঠ পর্যায়ে সরবরাহ করেনি। তবে মুদ্রণ কাজ শুরু করে নির্দিষ্ট সংখ্যক পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রাথমিক স্তরের টিচার্স গাইড মুদ্রণের দায়িত্বে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে কলকাতার কৃষ্ণা ট্রেডার্স। এ প্রতিষ্ঠানের ৫৩ হাজার ৩৬৯ কপি টিচার্স গাইড সরবরাহ করা কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো গাইড সরবরাহ করেনি তারা। এছাড়া চীনের মেসার্স হুনান তাইয়ানুয়েন জিনহুয়া প্রিন্টিং কো.লি. এর ৫০ হাজার ৯৯ কপি গাইড সরবরাহ করার কথা রয়েছে।
প্রি প্রাথমিক টিচার্স প্যাকেজের কাজ পেয়েছে সিডিসি প্রিন্টার্স লিমিটেড। কলকাতার এ প্রতিষ্ঠানের ১০ লাখ ৩১ হাজার ৫৪৯ কপি গাইড সরবরাহ করার কথা। স্বপ্না প্রিন্টিং ওয়ার্কার্স লিমিটেডকে ১০ লাখ ৫৫ হাজার ১০৮ কপি গাইড সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক স্তরের তিনটি বিদেশি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৭৮২ কপি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কলকাতার সুদর্শন পেপার অ্যান্ড বোর্ড লিমিটেডকে ১১ লাখ ২৯ হাজার ৫৪২ কপি, কৃষ্ণা ট্রেডার্সকে ১১ লাখ ৭৬ হাজার ৮২৭ কপি, মুম্বাইয়ের শেশাসানি বিজনেস ফরমস লিমিটেডকে ৫৯ লাখ ২১ হাজার ৪১৩ কপি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত কোনো পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করেনি। কোন অবস্থায় আছে তাও জানায়নি।
দেশি যেসব প্রতিষ্ঠান এখনো বই সরবরাহ করেনি, তাদের মধ্যে রয়েছে ধলেশ্বরী লিমিটেড, বাংলাদেশ ডিজিটাল প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড, সরকার প্রেস লিমিটেড, লেটার অ্যান্ড কালার লিমিটেড, জুপিটার প্রিন্টার্স, করতোয়া প্রিন্টার্স অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, গ্লোবাল প্রিন্টিং ইকুপমেন্ট, নিউ পানামা প্রিন্টার্স, বলাকা প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস।
মঙ্গলবার (০৮ নভেম্বর) সংসদ ভবনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) উৎপাদন নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. আব্দুল মজিদ স্বাক্ষরিত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
প্রাথমিকের পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী মোতাহার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘এবার মোট পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে ১২ শতাংশ কাজ পেয়েছে বিদেশি ৩টি প্রতিষ্ঠান। বাকিগুলো দেশি প্রতিষ্ঠানেই করা হবে। এরই মধ্যে কিছু দেশি প্রতিষ্ঠান বই সরবরাহ শুরু করেছে। তবে বিদেশিরা এখনো কোনো বই সরবরাহ করেনি। আমাদের প্রত্যাশা, ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সব বই উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো। আশা করি, পারবো’।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৬
এসএম/এএসআর