ঢাকা: গত ২৫ সেপ্টেম্বর ভাড়া বাড়ি ছেড়ে নতুন ভবনে উঠেছে রাজধানীর উত্তরা মডেল টাউনে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। বাইরে থেকে নতুন ও ঝকঝকে দেখালেও অফিসের ভেতরটা একদমই আলাদা।
রাজধানীর অন্যান্য আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের মতো উত্তরা অফিসে নেই তেমন জনসমাগম। তবে ভোগান্তি এড়াতে কারো সাহায্য নেওয়ার কথা ভাবলেই ভাগ্যে আছে নিশ্চিত দালালের চক্কর। একটি ভদ্রবেশী দালাল চক্র ধীরে ধীরে গ্রাস করার চেষ্টা করছে অফিসটিকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের শেষ মাথায় অবস্থিত নতুন ভবনের তিন পাশে নিম্নবিত্ত মানুষের বসবাসের জন্য বস্তি-ঘরের সারি। যাতায়াতের সড়কটির অবস্থাও সুবিধাজনক নয়। নতুন এই অফিসকে ঘিরে তাই এক শ্রেণীর অল্প শিক্ষিত মানুষ নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। তারা বেছে নিয়েছেন পাসপোর্ট অফিসে দালালির কাজ।
নতুন এই ভবনের উল্টো পাশে এদের জন্য প্রভাবশালীরা তৈরি করেছেন বাঁশ ও টিনের সারি সারি ঘর। ঘরগুলো ভাড়া নিয়ে বসেছে নানা ধরনের দোকান। আইনি বৈধতা না থাকলেও এইসব দোকানে টাকার বিনিময়ে মিলছে বিনামূল্যে সরবরাহকৃত পাসপোর্ট ফরম। আবার চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ফরম পূরণে সহায়তার আহবান রয়েছে। ফটোকপি ও অনলাইন ফরম পূরণেরও ব্যবস্থা ওখানেই!
মূলত এইসব দোকানেই আড্ডা দালালদের। তারা ওৎ পেতে থাকে ‘মুরগি’ (ক্লায়েন্ট) ধরার জন্য। এদেরই একজন রহুল আমিন। আড্ডায় আড্ডায় তিনি বলছিলেন, ক্লায়েন্টদের সাহায্য করেই তার সংসার চলে। কি ধরনের সহায়তা মেলে তার কাছে- জবাবে বলেন, ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া থেকে শুরু, কাগজপত্র জোগার, ফাইল তৈরি, ফরম পূরণ, লাইনে দাঁড়িয়ে তা জমা দেওয়া, পুলিশ ভেরিফিকেশন ও নির্দিষ্ট সময়ের আগে পাসপোর্ট ক্লায়েন্টের হাতে তুলে দেওয়া পর্যন্ত।
এমন কয়জন আছে এখানে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাড়া বাড়িতে অফিস থাকাকালে ব্যবসা ছিলো জমজমাট। এখন নতুন ভবনে আসায় ব্যবসা একটু কম। পুরাতন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বদলি হয়ে যাওয়া হয়েছে গোঁদের ওপর বিষ ফোঁড়া। তাদের ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল রয়েছে যারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত।
দলের আরেকজন মমতাজ বেগম। বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায়। বাংলানিউজকে তিনি বলছিলেন, “এমনিতেই উত্তরায় শিক্ষিত লোক বেশি। এরা সাধারণত নিজেরাই নিজেদের ফরম কম্পিউটার থেকে বের করে পূরণ করে। ব্যাংকেও নিজেরাই টাকা জমা দেন। ঝামেলা যারা ব্যাচেলর-মেসে থাকেন তাদের। তারাই ভোগান্তি কমাতে আমাদের সহায়তা নেন। আমরা তাদের ভেরিফিকেশনেও সহায়তা করি।
উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বলেন, আগারগাঁও অফিসের মতো ঝামেলা এখানে নেই। তবে যে সমস্যা রয়েছে তা চাইলেই মিটিয়ে ফেলা যায়। ফরম জমা নেওয়া আর পাসপোর্ট ডেলিভারির জন্য আটটা করে কাউন্টার বানানো হলেও তিনটা কাউন্টার জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। তাই লাইনও সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দীর্ঘ হচ্ছে। বিভিন্ন সেবার কথা বলে সারি সারি কাউন্টার খোলা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রায় সবগুলোই বন্ধ!
তিনতলায় ছবি তোলার কক্ষে গিয়ে দেখা গেলো নারী ও পুরুষদের জন্য দু’টি লাইনে ক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বৃদ্ধরা। শৌচাগারের অবস্থাও শোচনীয়। কোনো কোনো আবার ব্যবহৃত হচ্ছে গুদামঘর হিসেবে।
এসব প্রসঙ্গে আঞ্চলিক এই পাসপোর্ট অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম বলেন, সব কিছুর মূলেই আসলে জনবলের অভাব। পুরো ভবনের জন্য আছে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তার পক্ষে প্রতিদিন এই বিশাল ভবন পরিষ্কার রাখা সম্ভব হয় না। তারপরও আমি প্রায়ই পরিদর্শন করি। দেখা যায়, সে হয়তো ২টা ফ্লোর পরিষ্কার করতে পেরেছে, বাকিটা অপরিচ্ছন্ন থেকে গেছে।
একই অবস্থা সব বিভাগেই- উল্লেখ করে তিনি বলেন, আবেদন জমা নেওয়া এবং পাসপোর্ট ডেলিভারির জন্য একজন করে লোক দেওয়া হয়েছে। সেখানে আরো দু’জন করে আনসার দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। হয়তো এই সুযোগ কেউ নিয়ে থাকতে পারেন। তবে আমি সব সময়ই নজর রাখি যাতে ভোন্তির কিছু না ঘটে।
** মানুষ-মাছি এক প্লেটেই!
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৬
আরএম/এটি