ঢাকা: জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। যক্ষ্মা, অ্যাজমাসহ বুকের যাবতীয় রোগের চিকিৎসা করাতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে আসেন।
কিন্তু বেড সংকট থাকলেও বাড়তি অর্থ দিলেই মিলছে বেড। বেড নিয়ে এই দুর্নীতির কারণে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ঘুরে রোগীদের ভোগান্তির চিত্র চোখে পড়ে।
হাসপাতালের রোগী ও তাদের স্বজনেরা জানান, বেড বিনামূল্যে পাওয়ার কথা থাকলেও পিওন ও কর্মচারীদের ২০০ থেকে ১ হাজার টাকা দিলে তারা বেড ম্যানেজ করে দেয়।
হাসপাতালে ঢুকে টিকেট কাউন্টারের সামনে রোগীদের বেশ ভিড় দেখা গেলো। সেখানে ১০ টাকার বিনিময়ে টিকেট নিচ্ছেন রোগীরা।
মূল ফটকের ডান পাশেই জরুরি বিভাগ। সেখানকার একটি কক্ষে টিকিট পাওয়া রোগীরা অপেক্ষা করছেন। নির্দিষ্ট চিকিৎসকের কক্ষের সামনে থেকে অফিস সহকারী ক্রমিক অনুযায়ী রোগীর নাম ডেকে ভেতরে পাঠাচ্ছেন। রোগীকে দেখে চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। প্রয়োজন হলে তাকে ভর্তির পরামর্শ দেন, তবে বেড না থাকলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলেন।
ওয়েটিং রুমে অসহায় ভঙ্গিতে বসেছিলেন হোসনে আরা নামে এক নারী। ত্রিশোর্ধ্বে হোসনে আরা ঢাকার জুরাইন থেকে খালাকে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু ভাগনিকে নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছেন আখি। ৪ ঘণ্টা ধরে কোনো বেড ম্যানেজ করতে পারেননি।
আখি বলেন, ‘ওর একবছর হলো যক্ষ্মা ধরা পড়েছে। চিকিৎসা করার পর সেরে গিয়েছিল। একমাস হলো আবার বেড়েছে। হাসপাতালে ভর্তি করাবো বলে এসেছি। কিন্তু হাসপাতালে বেড না থাকায় ডাক্তার ওষুধ লিখে দিয়ে বলছে, এগুলো খেতে বা ঢাকা মেডিকেলে যেতে। শনিবারের আগে সিট ফাঁকা হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এতো দূর থেকে আসলাম, এতো বড় হাসপাতাল-বলে বেড নাই। রোগীর সিরিয়াস অবস্থা দেখেও ডাক্তার বলছেন কিছু করার নাই। এখানে চিকিৎসা করাতে হলে ফেরত যেতে হবে। ’
তবে চিকিৎসকের সহকারী আগামী শনিবার সকাল ৮টার মধ্যে আসলে বেড ম্যানেজ করে দেবেন বলেছেন বলে তিনি জানান।
ঝিনাইদহ থেকে বাবাকে নিয়ে এসেছেন সুবল দাস। বাবা-মাকে ওয়েটিং রুমে বসিয়ে রেখে সিট পাওয়ার আশায় বের হয়ে ঘণ্টাখানেক পরে এসে জানান, বেড ম্যানেজ হয়েছে। কিভাবে বেড পাওয়া গেলো জানতে চাইলে সুবল দাস বলেন, ‘সরকারি অফিস কিভাবে ম্যানেজ করেছি বুঝতেই পারছেন। এখানে সিট পাওয়া আর সোনার হরিণ পাওয়া এক কথা। একজনকে ৫০০ টাকা দিলাম, হয়ে গেল। ’
৪৬ নম্বর কেবিনে দেড় মাস ধরে রয়েছেন স্বপন। তিনি বলেন, ‘আমি কেবিনে থাকি বলে ১০ দিন পর ২৭০০ টাকা ফি দিচ্ছি। এছাড়া এক্সরে করাতে হয় নিজ খরচায়। তবে কফ পরীক্ষায় টাকা লাগে না। এখানে চিকিৎসা ভালো, কিন্তু সিট সংকট থাকায় পিওনদের ঘুষ দিতেই হয়। ’
বেড সংকট ও বাণিজ্যের অভিযোগ স্বীকার করে হাসাপাতালের সহকারী প্রফেসর ও আবাসিক চিকিৎসক বরকত উল্লাহ বলেন, ‘বক্ষ্যব্যাধি হাসপাতাল ৬৭০ বেডের, রোগীর তুলনায় যা খুব কম। ফলে খুব কষ্ট করে সমন্বয় করতে হচ্ছে। ’
তিনি বলেন, ‘সারাদিনে ৩০০-৪০০ লোক চিকিৎসা নিতে আসে। এর মধ্যে ৩৫ থেকে ৪০ জনের মতো জটিল রোগীকে ভর্তি করা প্রয়োজন। কিন্তু এখানে প্রতিদিন ১২-১৪টি বেড ফাঁকা হয়। ফলে বাকি রোগীদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে ঢামেকে পাঠাই। এটা খুব পেইনফুল ব্যাপার। ’
বেড বাণিজ্য বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জানি এটা হচ্ছে। আগেও কয়েকজন পিওনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আসলে বেড কম হওয়াতেই তারা এ সুযোগটা নিচ্ছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১২০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৬
এমসি/এসআর