ঢাকা, বুধবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের...

শরীফ সুমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৬
মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের...

‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না ও বন্ধু...’। রাজশাহীর গৌরহাঙ্গা গোরস্থানের পাশে ক্ষুধার্ত ও হতদরিদ্র মানুষদের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দেওয়ার অনন্ত চেষ্টার খণ্ড দৃশ্যগুলো যখন

রাজশাহী: ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না ও বন্ধু...’। রাজশাহীর গৌরহাঙ্গা গোরস্থানের পাশে ক্ষুধার্ত ও হতদরিদ্র মানুষদের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দেওয়ার অনন্ত চেষ্টার খণ্ড দৃশ্যগুলো যখন চোখের সামনে, ঠিক তখনই কানে ভাসছিল গানে গানে মানবতার কথা বলা ভূপেন হাজারিকার এ কালজয়ী গানটি।

মনে হচ্ছিল মানুষের প্রতি মানুষের হৃদয়টাকে স্ফিত করে মানবিকতাকে জাগিয়ে তুলতেই যেন গানটি গেয়েছিলেন উপমহাদেশের কিংবদন্তী এ গায়ক।

শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) জুমার নামাজের পর গোরস্থানের পশ্চিম গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখা গেলে একদল মানুষের হুড়োহুড়ি। কেউ আবার ফুটপাতের ওপর সারি হয়ে বসে পড়ছেন। কে কোন ধর্মের, কে পথচারী, কে ভিক্ষুক বা কে রিকশাচালক কোনো জাতপাত নেই। সবার একটাই পরিচয় তারা ক্ষুধার্ত।

খোঁজ নিতেই জানা গেলো গোরস্থানের পাশের সড়কের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ফারুক হোসেনের ভাসমান চায়ের স্টল থেকেই শুরু হয় এই নিরন্নদের মুখে একবেলা আহার তুলে দেওয়ার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার গল্প। নয় মাস থেকে দুঃস্থদের মুখে সপ্তাহে একদিন দুপুরের অন্ন তুলে দিচ্ছেন মুষ্টিমেয় ক’জন আলোর পথযাত্রী।
একটা সময় মহৎ কাজটি শুরু করেন চা বিক্রেতা ফারুকই। তবে এখন তার দল ভারী করেছেন আরও চারজন। এছাড়া তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন সময় পাশে দাঁড়াচ্ছেন সমাজের বিত্তবানরাও। ‘এরাও মানুষ, ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে এগিয়ে আসুন’ ছোট্ট একটি ব্যানারে মাত্র কয়েকটি শব্দের সংমিশ্রণ। কিন্তু এমনই মানবিক আহ্বান তাদের যা পড়তেই চোখ ভিজে আসে নরম হৃদয়ের মানুষগুলোর।

পাঁচজনের উদ্যোক্তা দলে আরও রয়েছেন মোটর শ্রমিক মুক্তার আলী লোলো, নিউমার্কেট এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী শিহাব উদ্দিন, সমাজ সেবক ওয়ালিউর রহমান ও স্থানীয় যুবক পল্লব।

ওয়ালিউর রহমান জানালেন, প্রতি শুক্রবার একটি বড় হাড়িতে আড়াইশ’ জনের দুপুরের খাবারের আয়োজন করেন তারা। কোনো দিন সবজি খিচুরী, কোনো দিন মাংস খিচুরী আবার কোনো দিন পোলাওয়ের চাল ও গরুর মাংস দিয়ে তেহেরি রান্না করেন তারা।

মূলত রান্নার আয়োজন নির্ভর করে তাদের এলাকাভিত্তিক সংগ্রহ ও দানের ওপর। আবার অনেক সময় টাঙানো ব্যানারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিত্তবান শ্রেণির মানুষও তাদের একদিনের আয়োজনের পুরো টাকাই দিয়ে দেন। ক্ষেত্র বিশেষ তারাই খাবার মেন্যু বলে দেন। সেই অনুযায়ী হয় রান্না-বান্না।
মুক্তার আলী লোলো জানান, তাদের সব কাজ হয় প্রকাশ্যেই। নিজেরাই বাজার করে গোরস্থানের পাশের ফুটপাতের কর্ণারে কাটা-বাছা এবং রান্না করেন। আড়াইশ’ জনের টার্গেট থাকলেও কোনো কোনো সময় এক হাড়ির রান্নায় তিনশ’ জনও খেয়ে ফেলেন। এটাকে আল্লাহ্’র বরকত হিসেবে দেখেন তারা।

মূল উদ্যোক্তা ফারুক হোসেন বলেন, ক্ষুধার জ্বালা কেবল ক্ষুধার্তরাই জানে। সেই জায়গা থেকেই ছোট্ট পরিসরে কাজটি শুরু করেছিলেন। তখন ছিল দশজনের আয়োজন। এখন আড়াইশ’ জনের। মানবতার সেবায় অনেকে হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় তাদের এ আয়োজনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই।

এর আগে গত রমজান মাসে তারা রাস্তার পাশের এ স্থানেই তিনশ’ মানুষের ইফতারের আয়োজন করেন। এতে পথচারী, রিকশাচালক, যাত্রী ও ছিন্নমূল মানুষ ছাড়াও অনেক বড়লোক মানুষও ফুটপাতের ওপর এক কাতারে বসে ইফতার করেছেন। খাবার থাকা পর্যন্ত তারা কখনও কাউকে ফেরান না।

ফারুক বলেন, এখন মোবাইল নম্বরে বিকাশ করেও অনেকে তাদের সহায়তা করেন। তারা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। হৃদয়বান মানুষ এগিয়ে আসায় তাদের মানুষ খাওয়ানোর এ কাজ এখন গতি পেয়েছে। কোনো প্রত্যাশা নেই। এভাবে আরও বেশি ক্ষুধার্ত মানুষকে খাওয়াতে পারলেই তারা খুশি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৬
এসএস/ওএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।