ঢামেক বার্ন ইউনিট ঘুরে: চোখের পাতা নড়ছে না। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।
বুধবার (২৩ নভেম্বর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের দোতালার আইসিইউতে এমন দৃশ্য দেখা গেলো আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার ‘কালার ম্যাক্স (বিডি) লিমিটেড’ নামের কারখানায় আগুনে পোড়া শ্রমিক ছকিনার (২০) বেডের সামনে।
মঙ্গলবার বিকেলে ওই কারখানায় আগুন লাগলে ৩৯ জন দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে ২০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে আঁখি নামের একজনের মৃত্যু হয়।
বুধবার বার্ন ইউনিউনিটের সামনে তার আত্মীয় স্বজনের আহাজারিও চোখে পড়ে। বার্ন ইউনিটের উপরে নিচে কেবল স্বজনদের গুমোট জটলা আর উদ্বেগ। সঙ্গে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের আনাগোনারও শেষ নেই। আইসিইউর ভেতরে চলছে ডাক্তারদের অবিরাম সেবা।
এর মধ্যে দোতলায় আইসিউতে ঢুকেই পাওয়া গোলো ছকিনার বাবা রাকিব মণ্ডলকে। হাতে একটা খাম। আপনার কে দ্বগ্ধ হয়েছে এমন প্রশ্ন করার জবাব এলো-‘আমার মেয়ে’।
আবার প্রশ্ন করলাম হাতে কিসের খাম। তখন রাকিব মন্ডল খামটি উঁচু করে ধরে বললো-সকালে এই খাম সরকার দিছে। মনে হয় টাকা। এখনো খুলে দেখিনি।
তারপার রাকিব মণ্ডল জানালেন পেছনের কথা। রংপুরের বদরগঞ্জের নাগের হাটের বর্গাচাষি রাকিব মন্ডল। দুই মেয়ের মধ্যে বড়টা প্রতিবন্ধি। নিজের আয়ের টাকা জীবন চলে না। তাই মাস দুয়েক আগে ওই কারখানায় চাকরি নেয় ছোট মেয়ে ছকিনা। বেতন পাঁচ হাজার টাকা। আশায় বুক ভরে উঠে রাকিব মন্ডলের। এক মেয়ে প্রতিবন্ধী হলেও সমস্যা নেই। অপর মেয়ের আয় দিয়ে জীবন চলবে পরিবারের বাকী সদস্যদের। দুই মেয়ে বউ নিয়ে ভালোই কাটবে দিন।
কিন্তু প্রকৃতির লীলা খেলা। ঢুকরে কেঁদে উঠে রাকিব মন্ডল বললেন, ‘মগরেবের (মঙ্গলবার সন্ধ্যায়) সময় খবরটা এলো। তারপর ভাতিজাকে নিয়ে চলে আসলাম। এসেই দেখি সব শেষ। কি আর বলবো। আল্লাহর ইচ্ছা। আল্লাহ যা করেছে, তাই।
মেয়েতো প্রায় পুড়ে শেষ এখন চলবেন কিভাবে? প্রশ্ন শুনেই আবারও রাকিব মন্ডল বললেন, সেটাও আল্লাহর ইচ্ছা।
‘এখন পযন্ত কোনো টাকা খরচ হয়নি। সব সরকার দিচ্ছে। বাকীটা দেখা যাক। আমারতো আর কিছু নেই। ’
এসব কথার মধ্যে ছকিনা নড়ে উঠলেন। তখন বাবা এগিয়ে মেয়ের মুখের কাছে গেলেন। ইশারায় কি যেন বললেন। হালকা আওয়াজও শোনা গেলো।
কি বললেন ছকিনা। রাকিব মণ্ডল জানালেন, মেয়ের যন্ত্রণা হচ্ছে। নালিতে যন্ত্রণা। পরে ডাক্তাররা এলেন। রাকিব মণ্ডলসহ স্বজনদের বের করে দিলেন ডাক্তাররা।
এর কিছুক্ষণ পরে সাভারের সংসদ সদস্য ডা. মো. এনামুর রহমান এলেন এবং জানালেন আশুলিয়ায় গ্যাস লাইটার কারখানায় অগ্নিদগ্ধ রোগীদের সব ধরনের চিকিৎসা সেবার খরচ বহন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয়।
এর আগে একই দিন সকালে ঢামেকে দগ্ধদের ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা ও আশুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পক্ষ থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
ইএস/এসএইচ