ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ জুন ২০২৪, ২০ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

আগুনের কথা শুনে ভেবেছিলাম দুঃস্বপ্ন দেখছি!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০১৭
আগুনের কথা শুনে ভেবেছিলাম দুঃস্বপ্ন দেখছি! আগুনের ঘটনায় দোকানদারদের আহাজারি/ ছবি-বাদল

ঢাকা: রাত তখন ২টা ৪০ মিনিট। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ষাটোর্ধ্ব আব্দুল হাকিম। হঠাৎ ছেলের চিৎকার ‘আব্বা মার্কেটে আগুন লাগছে’। প্রথমে দুঃস্বপ্ন মনে করে চোখবোজার চেষ্টা করি। পরক্ষণেই ‘আব্বা আমাদের তো সবশেষ হয়ে যাবে’, ছেলের ফের আর্তনাদে বিছানা থেকে ধরফড়িয়ে ওঠি। 

কোনো রকমে একটা গেঞ্জি শরীরে জড়িয়ে দুই ছেলের সঙ্গে বাড্ডা থেকে ছুটতে ছুটতে গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটে আসেন আব্দুল হাকিম। এসে দেখেন মার্কেটের একাংশে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে।

আর সেই আগুনে পুড়ছে সারাজীবনের সঞ্চয়ে করা ক্রোকারিজের দোকান।
  
কোটি টাকার মালামাল মজুদ এ দোকানই আব্দুল হাকিম ও তার দুই ছেলের উপার্জনের একমাত্র সম্বল।  

সোমবার (০২ জানুয়ারি) দিবাগত রাত আড়াইটায় ডিএনসিসি মার্কেটে আগুনের ঘটনায় শুধু আব্দুল হাকিম নয়, প্রায় পাঁচশ’ ব্যবসায়ীরা কপাল পুড়েছে।

ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, মধ্যরাতের আগুনে একাংশ ধসে পড়ার সঙ্গে প্রায় আড়াইশ’র মতো কাঁচাবাজারে দোকান ও দোতলায় অবস্থিত শ’খানেক ফার্নিচার ও কসমেটিকসের দোকান পুড়ে ছাই হয়েছে। অপর অংশে আরো কয়েকশ’ দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  আগুনে নিঃস্ব ব্যবসায়ীর আহাজারি

জ্বলতে থাকা দোকানের দিকে তাকিয়ে আব্দুল হাকিম বাংলানিউজ বলেন, ছেলেকে দারোয়ান ফোন দিয়েছে। আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, ছেলের চিৎকার শুনে মনে হচ্ছিল দুঃস্বপ্ন দেখছি। ভাবতে পারি নাই, আমাদের কপাল এভাবে পুড়বে। জমি-জমা বিক্রি করে এ দোকান দিয়েছিলাম। ছেলেদের নিয়ে দোকানটা চালাতাম-এক আগুনে সব শেষ করে নিলো।

ধোয়ার কুণ্ডলীর দিকে তাকিয়ে বারবার মাথার চুল টানতে টানতে আহাজারি করছেন ‍মসলার দোকানদার জুলহাস মিয়া। ডিএনসিসি মার্কেটে কাঁচাবাজারে মসলার দোকান ছিলো তার।

ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসেছিলেন জুলহাস। রিকশা চালিয়ে, ভ্যানে সবজি বিক্রি করে ডিসিসি মার্কেটে মসলার দোকান সাজান।

জুলহাস বলেন, কি কমু আপা, আমার তো সব শ্যাষ হইয়্যা গেলো, বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রফিক নামে এক আত্মীয় বলেন, জীবনের রোজগার দিয়ে দোকানটা দিছিলো। ও কানবে না তো কে কানবে? ‌এ আগুন আমাগো সরানোর জন্য লাগাইছে, আল্লাহ এর বিচার করবো।
  
মধ্যরাতে আকস্মিক আগুনের শতশত ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। মার্কেট চত্বরে তাদের দিশেহারা হয়ে আহাজারি করতে দেখা যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসে ১৭টি ইউনিট প্রাথমিক কাজ শুরু করে। ভয়াবহ এ আগুন নিয়ন্ত্রণে পরবর্তীতে যোগ দেয় আরো ৫টি ইউনিট।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৭
এমসি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।