ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ জুলাই ২০২৪, ২৪ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

বাংলানিউজকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

বাংলাদেশ এখন বাণিজ্যনির্ভর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১৭
বাংলাদেশ এখন বাণিজ্যনির্ভর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। ছবি: দীপু মালাকার

ঢাকা: এক সময় বিদেশি সহায়তা ও রফতানি নির্ভর ছিল বাংলাদেশের পরিচয়। তবে, সে পরিচয় পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এখন সম্পূর্ণরূপে বাণিজ্য নির্ভর একটি দেশ। যার সঙ্গে বিশ্বের উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোও এখন বাণিজ্যিক সম্পর্ক করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। 

মঙ্গলবার (০৩ জানুয়ারি) বাংলানিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তবে, নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে এই পর্যায়ে পৌঁছাতে হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

শাহরিয়ার আলম বলেন, বিশ্বের বৃহৎ অর্থনৈতিক রাষ্ট্রগুলি বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক তৈরিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন। আর এ ধরনের সম্পর্কে তখনই কেউ জড়ায় যখন মোটামুটি একই প্লাটফর্মে অবস্থান করা হয়।  

এ তালিকায় জার্মানি, ইতালি, মেক্সিকো, স্পেনসহ ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা একসময় শুধু রফতানির জন্য এসব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ধরে রাখার চেষ্টা করতাম, এখন তারাই বাংলাদেশে এসে ব্যবসা করতে চাচ্ছে।  

এটা বাংলাদেশের অসাধারণ এক পাওয়া বলে মনে করেন তিনি।

তার মতে, ২০১৭ সালে এই সম্পর্ক আরও বিস্তৃত এবং গভীর হবে। এছাড়া যুক্ত হবে আরও অনেক দেশের নাম।  

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্মের ৪৫ বছরের প্রথম তিন চতুর্থাংশ সময় আমরা বিদেশি সহায়তা নির্ভর দেশ ছিলাম। এখন আমরা বাণিজ্য নির্ভর দেশ। ধীরে ধীরে এই উন্নতি হয়েছে। তবে, সহজে নয়, অনেক কিছুর বিনিময়ে এ অর্জন এসেছে। ’

শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমাদের বাজেটে এখন বিদেশি সহায়তা শতকরা দুই ভাগেরও কম। এটাই সর্বনিম্ন। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে পৃথিবীর ৪৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। ’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমএ অর্জনের কারণ হিসেবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উন্নয়নের ধারাকে ধরে রাখতে পেরেছি। বিশ্ব অর্থনীতি যখন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখনও বাংলাদেশ প্রায় সাত ভাগের কাছাকাছি উন্নতি ধরে রেখেছে। ’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিশেষ দেশগুলোতে বাণিজ্য সুবিধার পরিবর্তে নতুন রফতানি বাজার অনুসন্ধান করা হচ্ছে। বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনগুলো এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ ঘোষণার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকে আবেদন করা হবে। তবে, তার আগেই বিশ্বব্যাংক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশকে নিম্নমধ্যম আয়ের রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এটা শুধু মাথাপিছু আয় ১৪শ ৬৬ ডলারের তথ্য না। এর সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত। যার সরাসরি সুফল ১৬ কোটি মানুষ পাচ্ছে। ’

বিদায়ী ২০১৬ সালকে নিকটতম অতীতের বছরগুলির ধারাবাহিকতায় সফলতম বছর হিসেবে উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিপাক্ষিকসহ বেশ কিছু সফরে গিয়েছেন। অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও বাংলাদেশ সফর করেছেন। এ ধরনের সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বৈশ্বিকভাবে আরও সম্পৃক্ত হয়েছে। ’

তবে, এতসব অর্জনের পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে স্বীকার করে শাহরিয়ার আলম বলেন, কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে, আবার সেগুলোর সঙ্গে নতুন চ্যালেঞ্জও যোগ হয়।  

উদাহরণ হিসেবে গত ১ জুলাইয়ের জঘন্য হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লে তার প্রভাব অর্থনীতি, ভাবমূর্তি সবখানেই পড়তে পারে। ’

হলি আর্টিজানের ঘটনা শঙ্কা তৈরি করলেও রফতানিতে প্রভাব ফেলতে পারেনি জানিয়ে তিনি বলেন, সে সময় সাময়িকভাবে কিছু সফর স্থগিত হয়েছিল। যার বেশির ভাগই ব্যক্তি পর্যায়ের। তবে, মাসিক রফতানি আয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রফতানিতে কোনো প্রভাব পড়েনি। ’

সন্ত্রাসবাদ জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ সফলতার ইতিহাস গড়ে তুলেছে দাবি করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে শুধু নিজেদের সীমান্তে নয়, পার্শ্ববর্তী সীমান্ত সুরক্ষাতেও আমরা সাহায্য করেছি। তবে, হলি আর্টিজানে হামলার মধ্য দিয়ে ভিন্ন ধরনের যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিলক্ষিত হলো, সেটা নতুন চ্যালেঞ্জের বোধ তৈরি হয়েছে। যদি মাত্র ছয় মাসের মধ্যে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে আমরা আস্থা পুনঃস্থাপিত করতে পেরেছি। ’

কূটনৈতিক নিরাপত্তা প্রশ্নে অনেক কিছু পুনঃসংযোজন করতে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের নতুন কিছু দাবি মানতে হয়েছে। তবে এসব বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। এটা একটা চ্যালেঞ্জ। এবং এটা থাকবে। পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রগুলোও এই চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ’

হলি আর্টিজানে হামলার পরে বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশ সফরে অ্যালার্ট দিয়েছিল। সেগুলো এখন শিথিল হয়ে আসছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।  

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমতিনি বলেন, ‘কাগজে লেখা থাকুক বা না থাকুক সেসব দেশের নাগরিক অধিক হারে বাংলাদেশে আসছেন। ’

বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত অভিবাসন বিষয়ক সবচেয়ে বড় সম্মেলন জিএফএমডি সামিটে সাতশ’রও বেশি বিদেশি অতিথির উপস্থিতির কথাও স্মরণ করেন শাহরিয়ার আলম।  

তবে এতে আত্মতুষ্ট হওয়া যাবে না জানিয়ে বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়ে কাজগুলো অব্যাহতভাবে আমাদের করে যেতে হবে। সিকিউরিটি ফোর্স, ইন্টেলিজেন্সগুলোকে আরও শক্তিশালী করার জন্য পৃথিবীর বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রগুলোর সহায়তা প্রস্তাবনা এসেছে, আমরাও অনেক প্রস্তাব দিয়েছি। সে কাজগুলো চলছে। সেখানে আরও কিছু প্রয়োজন হলে আমরা করবো। ’

সেই সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় পৃথিবীর যেকোনো উদ্যোগকে বাংলাদেশ সমর্থন জানাবে জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নিজেদের সক্ষমতা তৈরি হলে সেগুলিতে অংশ নেবে, সহায়তা দেবে বাংলাদেশ। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ জানুয়ারি ০৪, ২০১৭
জেপি/পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।