ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

দুখু-আদর’র সঙ্গে মিরার সারাবেলা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০১৭
দুখু-আদর’র সঙ্গে মিরার সারাবেলা প্রবীণ নিবাসে মিরা চৌধ‍ুরী

প্রবীণ নিবাস থেকে ফিরে: ‘এই দুখু কেমন আছিস, বেশি দুষ্ট হয়েছে, একদম কথা শুনতে চায় না, মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে, ক্ষুধা লাগছে তোর, কী খাবি চল আমার সাথে।’ এ নিশ্বাসে কথাগুলো বলে ফেললেন ষাটোর্ধ্ব মিরা চৌধুরী।  

সোমাবার (০২ জানুয়ারি) দুপুর ২টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটি বিড়ালকে আদর করতে করতে এভাবে কথাগুলো বলেন তিনি।

কথাগুলো দুখু নামের বিড়ালটিকে কোলে তুলে নিয়ে প্রবীণ নিবাসের চতুর্থ তলার ১১৫ নম্বর কেবিনে ঢোকেন এই নারী।

তার পেছন হেঁটে ওই কক্ষে ঢুকতেই বিছানার একটি চেয়ারে বসতে বলেন মিরা চৌধুরী। স্বামী-সন্তান ও শেষ বয়সে প্রবীণ নিবাসের জীবন-যাপন নিয়ে বিভিন্ন কথা বলেন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে।

মিরা চৌধুরী বলেন, বেশকয়েক বছর আগেই স্বামী যোসেফ চৌধুরী মারা গেছেন। একমাত্র ছেলে অপূর্ব হাসান চৌধুরী পড়ালেখার জন্য চলে গেছেন আমেরিকায়। স্বামীর মৃত্যুর পর দেখভালের কেউ না থাকায় প্রবীণ নিবাসেই ঠাঁই নেন ।
প্রবীণ নিবাসে মিরা চৌধ‍ুরী
মিরা চৌধুরী জানান, আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে থাকা পছন্দ করেন না। কেউ তাকে বোঝা মনে করেন তা তিনি চাননা।

মিরা বলেন, ‘আমি কারো করুণার পাত্র হতে চাই না। মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত নিজের মতো করে বাঁচতে চাই। আমাদের সময়ে মুরুব্বীদের আমরা যেভাবে সম্মান করতাম, এখন আর তা দেখা যায় না। সিনিয়রদের সবাই আপদ মনে করে এখন। মরে গেলেই বেঁচে যায় এমনটিই চিন্তা-ভাবনা এখনকার ছেলে-মেয়েদের।

ছেলের কথা জিজ্ঞাসা করতেই কান্না করতে করতে বলেন, ‘ছেলে অপূর্ব আমেরিকাতে থাকে। সপ্তাহে দু’দিন ফোন করে। আর ছেলের কথা বেশি মনে হলে ঘরে রাখা ফটোটা দেখি। ’
প্রবীণ নিবাসে মিরা চৌধ‍ুরী
মিরা চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিরা শুধু দুখু (বিড়াল) নয় আদর নামে একটি পুতুলও রয়েছে। দুখু আর  আদর নামের বিড়ালের সঙ্গে কখা বলে তার সারা বেলা কেটে যায়। আদরকে সব সময় তিনি নিজের সঙ্গেই রাখেন।

 শৈশবের কথা উল্লেখ করে মিরা বলেন, ‘ছোট বেলাতে পুতুল খেলতে খুব পছন্দ করতাম। পুতুলের বিয়ে দিতাম। লাল শাড়ি পরাতাম। এখন সবই স্মৃতি হয়ে গেছে। কথাগুলো বলতে বলতে আচল দিয়ে চোখ মোছেন মিরা।

 মিরা আরো বলেন, ওই যে বিড়ালটা দেখছো ওর নাম দুখু। আমি যখন প্রবীণ নিবাসে আসি তখন অনেক ছোট। এই নিবাসে বড় হয়েছে। আমি আদর করে নাম দিয়েছে দুখু। সে আমার মতোই দুখী, ওর কেউ নেই।
দুখু নামে বিড়ালটির সঙ্গে সময় কাটান মিরা
প্রবীণ এই নারী বলেন, দুখু আর আদরের সঙ্গে খেলার পাশাপাশি বই পড়ে সময় কাটান তিনি। শরৎচন্দ্র, কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বই পড়তে পছন্দ করেন। নিয়মিত পত্রিকা পড়ারও অভ্যাস রয়েছে তার।

মিরার কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, সাদাকালো বেশ কয়েকটি ছবি দেয়ালে ঝোলানো রয়েছে। দুটি ছবি মিরা নিজের অন্য ছবিগুলো স্বামী ও ছেলের। ছবিগুলো দেখিয়ে তিনি স্বামী ও ছেলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

মিরার বাবা ও শ্বশুরের পৈতিক বাড়ি কলকাতার জাকারিয়ায়। এছাড়া তার দিলু রোডের পোষ্ট অফিসের পাশে তার নিজের একটি বাড়ি রয়েছে। বর্তমানে বাড়িটি ভাড়া দেওয়া রয়েছে।

 মিরা কামরুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ইডেন মহিলা কলেজ থেকে এসএসসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্ পাস করেন। তিনি খুলনা সরকারি কলেজে বেশ কয়েক বছর শিক্ষকতা করেন। তার স্বামী যোসেফ  আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও ) এর পরিচালক ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৭
আরএটি/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।