ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শীতের সঙ্গে যুদ্ধ করে রাত কাটে ওদের

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৭
শীতের সঙ্গে যুদ্ধ করে রাত কাটে ওদের  শীতে অসহায় মানুষের রাত যাপনের প্রস্তুতি। ছবি-আরিফ জাহান

বগুড়া: ঢালাই মেঝে। এর ওপরিভাগ থেকে আস্তর ওঠে খসখসা হয়ে পড়েছে মেঝে। তার উপরেই চলে অসহায় মানুষগুলোর রাত যাপনের প্রস্তুতি। যেন-তেনভাবে প্লাস্টিক বা চটের ছালা বিছানো হয় মেঝের উপর। কেউ কেউ আবার বিছিয়ে নেন জোড়াতালির কাঁথা।

পাশাপাশি জড়োসড়ো হয়ে বসেছেন কয়েকজন বৃদ্ধা। শীতের ধাক্কা সামলে নিতে গায়ে জড়িয়েছেন চাদর।

তবে অত্যন্ত পাতলা। কয়েকজন চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েছেন।

 
একটা কম্বল টানাটানি করে গায়ে জড়িয়ে বসে রয়েছেন কয়েকজন। চারদিকটা ফাঁকা। মাঝে মাঝে তীব্র বেগে ছুটে আসছে হিমেল হাওয়া।
 
কাপড় ভেদ করে আঘাত হানছে হাঁড়ে। ঠাণ্ডায় কুকড়ে উঠছেন তারা। শরীরটা প্রচণ্ড কাপুনি দিয়ে থরথর করে উঠছে। দীর্ঘ সময় থাকছে সেই কাপুনি। থামতে না থামতেই আঘাত হানছে আবার। এভাবেই প্রতিটি শীতের রাত কাটছে এসব অসহায় দুস্থ মানুষগুলোর।
 
শুক্রবার (০৬ জানুয়ারি) দিনগত রাতে বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন ও আশপাশের এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই ওঠে আসে।
 
শীতে অসহায় মানুষের রাত যাপন।  ছবি-আরিফ জাহানআছিয়া বেওয়া, জমিলা বেগম, আছাতন বিবি, মজিদা বেওয়াসহ রেলওয়ে স্টেশনে আশ্রয় নেওয়া একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়।
 
এসব ব্যক্তিরা বাংলানিউজকে জানান, এখানে আশ্রয় নেওয়া বেশির ভাগ মানুষ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করতেন। এদের মধ্যে অনেকেই স্বামী হারা। স্বামী পরিত্যক্তা। বাস্তুভিটা হারা। আবার অনেকের স্বামী-সন্তান থেকেও নেই। অভাবের তড়ানায় এখানে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
 
তারা আরো জানান, এখান থেকেই চলে তাদের জীবিকার সন্ধান। তীব্র শীত উপেক্ষা করে কাকডাকা ভোরে প্রত্যহ তারা শহরের অলিগলি ছুটে বেড়ান। সারাদিন চেয়ে চিন্তে যা পান তাই নিয়ে সন্ধ্যায় আবার এখানে চলে আসেন। এরপর শীতের সঙ্গে অনেকটা যুদ্ধ করে রাত পারি দিতে হয় বলেও যোগ করে এসব ব্যক্তিরা। রাতে আগুন জ্বেলে শীত নিবারণ।  ছবি-আরিফ জাহান
 
স্টেশন থেকে সামান্য উত্তরে হাড্ডিপট্টি এলাকার অবস্থান। এ এলাকা ঘিরে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অসংখ্য ভাঙড়িসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জীবিকার তাগিদে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছেন বিপুল সংখ্যক ছিন্নমূল মানুষ।
 
এদের বেশির ভাগই আবার শিশু-কিশোর। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে স্থানে স্থান আগুন জ্বালিয়েছে তারা। আগুনের চারপাশে ঘিরে বসেছে সেসব শিশু-কিশোররা। একইভাবে বড়দেরও আগুন পোহাতে দেখা যায়।
 
শীতের রাতে ওরা ক’জন।  ছবি আরিফ জাহানমনির, হাসান, রফিক, শামীমসহ একাধিক শিশু-কিশোর বাংলানিউজকে জানায়, নানা ধরনের ভাঙড়ি সামগ্রী কুড়ানো তাদের পেশা। সংসারের অভাব তাদের এ পেশায় নামতে বাধ্য করেছে।
 
অনেকেই অভাবী মা-বাবার সঙ্গে এ কাজ করে। আবার অনেকের মা-বাবাও নেই। দু’মুঠো খাবারের জন্য প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তাদের এ কাজে কর্মব্যস্ত থাকতে হয়।
 
শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় বিত্তবান পরিবারের মানুষজনও প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া অনেকটা কমিয়ে দিয়েছেন। যারা আসছেন প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র ব্যবহার করছেন। কিন্তু অসহায় দুস্থ ও খেঁটে খাওয়া মানুষগুলো তীব্র শীত উপেক্ষা করেই জীবিকার সন্ধানে ছুটতে বাধ্য হচ্ছেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৭
এমবিএইচ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।