ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ভূমিকম্প ঝুঁকিতে ঢাকার ৮৮ হাজার ভবন, সুরক্ষায় প্রকল্প

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৭
ভূমিকম্প ঝুঁকিতে ঢাকার ৮৮ হাজার ভবন, সুরক্ষায় প্রকল্প ভূমিকম্প ঝুঁকিতে ভবন/ছবি- ফাইল ফটো

ঢাকা: ৬ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকায় ধসে পড়তে পারে ৮৮ হাজার ভবন। এসব ভবন ভূমিকম্প সহনীয় করে নির্মিত না হওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

দ্রুত নগরায়নের কারণে ঢাকা ও অন্যান্য বড় নগরে পরিকল্পিত ও ভূমিকম্প সহনীয় করে ভবন নির্মাণ করা হয়নি। এসব ভবন সুরক্ষায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জরুরি সভা ডেকেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব নগরে ভূমিকম্প ঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। ‘দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে ভবন সুরক্ষা উন্নতিকরণ’ শীর্ষক এ প্রকল্পে প্রায় ৪৯ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য দেবে জাইকা।

প্রকল্পের আওতায় ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সুরক্ষায় জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। ভৌত অবকাঠামো বিভাগে আগামী ১১ জানুয়ারি (বুধবার) গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত অধিদফতর, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এইচবিআরআই), জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রতিনিধিদের নিয়ে সভাটি অনুষ্ঠিত হবে। সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য জুয়েনা আজিজ

 

ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন উইংয়ের যুগ্ম-প্রধান মতিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঢাকার প্রায় ৮৮ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সুরক্ষা দেওয়া হবে। প্রথমে আমরা জাপানি স্টাইলে সুরক্ষা দেওয়ার কথা চিন্তা করেছিলাম। কিন্তু আসলে ভবন নির্মাণের যে অবস্থা, তাতে জাপানি স্টাইলে সুরক্ষা দেয়া সম্ভব নয়। এমনকি কোনো ভবন ধসে পড়লে জরুরি মুহুর্তে ফায়ার সার্ভিসসহ প্রয়োজনীয় যানবাহনও ভবনের কাছে পৌঁছানোর অবস্থা নেই।  আগামীতে ভূমিকম্প মোকাবেলার বিকল্প চিন্তা ও বিল্ডিং কোড মেনে ভবন তৈরির বিষয়ে সভায় আলোচনা হবে’।

গণপূর্ত অধিদফতর সূত্র জানায়, কারিগরি সক্ষমতা মূল্যায়ন করে প্রকল্পের সফলতা নিরুপণে ‘বেইজ লাইন’ সমীক্ষা করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সুরক্ষায় নতুন নতুন কর্মপরিকল্পনা করা হবে। নকশা ও নির্মাণ তদারকির ওপর প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল তৈরির ক্ষেত্রে পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের (পিডব্লিউডি) কর্মকর্তাদের আধুনিক প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।

এর পাশাপাশি নির্মাণকাজ অ্যাসেসমেন্ট, ডিজাইন ও তদারকিতে ম্যানুয়াল গাইডলাইন অথরাইজড এবং ভবন নির্মাণের সমাপ্তি বিষয়ে সার্টিফিকেশন করা হবে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুসারে ভবন নির্মাণে উৎসাহী করতে পরিকল্পনা ও নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।

সরকারি-বেসরকারি প্রকৌশলীদের ভূমিকম্পের আগাম সতর্কবার্তা জারির প্রশিক্ষণ দেবে পিডব্লিউডি’র ট্রেনিং একাডেমি। প্রকৌশলীদের লাইসেন্স দেওয়ার পাশাপাশি ভূমিকম্প সহনীয় ভবন তৈরির ক্ষেত্রে সরাসরি সহায়তা করবে জাইকা। বাংলাদেশের সামগ্রিক ভবন সুরক্ষা কৌশল পরিকল্পনার জন্য স্টান্ডিং অর্ডার অন ডিজাস্টারের ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় গাইডলাইনও তৈরি করা হবে। ভূমিকম্পসহ ভবন সুরক্ষা উন্নীতকরণে বাধা-বিঘ্নগুলোকে চিহ্নিত করা হবে।

সমস্ত প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নে গণপূর্ত ও অন্যান্য বিভাগের প্রকৌশলীদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেবেন জাপানি বিশেষজ্ঞরা

গণপূর্ত অধিদফতর সূত্র জানায়, ভবন নির্মাণে জাতীয় মানদণ্ড ২০০৮ সাল থেকে কার্যকর হয়। আগের নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছিল ১৯৯৩ সালে।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধস ও ২০১৫ সালে নেপালে ভূমিকম্পের পর সাম্প্রতিক সময়ে বার বার ভূমিকম্পের কারণে ভবন নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করা হচ্ছে। ভূ-তাত্ত্বিকভাবে বাংলাদেশ ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়া এবং বার্মিজ টেকটোনিক প্লেটের ওপর অবস্থিত। এগুলোতে অনেক ফল্ট জোন রয়েছে, যা ভূমিকম্পের উৎস। গত ১৫০ বছরে সাতটি বড় আকারের (৭ মাত্রার বেশি) ভূমিকম্প হয়েছে এ দেশে। ১৯৯৭ সালে দক্ষিণে চট্টগ্রামের কাছে ৬ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রাণ হারান ২৩ জন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।