ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পিঠা-ই শীতের মিঠা!

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০১৭
পিঠা-ই শীতের মিঠা! বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে চলছে পৌষমেলা। ছবি: কাশেম হারুন

ঢাকা: নলেন গুড় আর ঘন দুধে ভেজানো চিতই, উনুনে চাপানো ভাঁপা। থরে থরে প্লেটে সাজানো আন্দেশা পিঠা, কুলি, পাটিসাপটা, চন্দ্রপুলি, ছড়া, দুধপলি, নকশি, পাকোয়ান, ছাঁচ, লবঙ্গ লতিকা পিঠাসহ বাহারি সব নামের পৌষালি পিঠা। সাজিয়ে রাখার আয়োজন দেখলে যে কারও জিভে জল গড়িয়ে পড়বে।

পৌষের শীতল সকালে এ দৃশ্য বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের। যেখানে চলছে আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী উৎসব পৌষমেলা।

তিন দিনব্যাপী এ মেলায় বিভিন্ন জেলার ঐতিহ্যবাহী শীতকালীন পিঠার পসরা নিয়ে বসেছে ২৭টি স্টল।

সকাল ৮টায় পৌষমেলা শুরুর কথা থাকলেও কুয়াশায় ঢাকা রাজধানীর মতো তখনও ঘুম ভাঙেনি  পৌষমেলারও।  

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে চলছে পৌষমেলা।  ছবি: কাশেম হারুনতবে এরমধ্যেই হই-হুল্লোড় করতে করতে আসে একদল তরুণী। বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে ঢুকে হতাশ হয়ে পড়ে। তখন স্টলগুলো ছিল কাপড় দিয়ে ঢাকা। দু’একজন পরিচ্ছন্নকর্মী ঝাড়ু-মোছার কাজ করছে।  

তরুণীদের দল থেকে একজন বলে ওঠেন, “জানিস না, ঢাকা শহরের মানুষের কি এতো সকালে ঘুম ভাঙে, তাই মেলাও ১১টার আগে ভালো করে শুরু হবে না। ”

তবে ৯টার পর থেকেই পৌষমেলা জমতে শুরু করে। আগমন ঘটতে থাকে দর্শনার্থীদেরও। কেউ কেউ স্টলের সামনে দাড়িয়ে গরম গরম ভাঁপা ও চিতইয়ের স্বাদ নিতে থাকেন। সঙ্গে ২-৩ আইটমের পিঠা পার্সেলও নিয়ে যেতে দেখা কাউকে কাউকে।  

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে চলছে পৌষমেলা।  ছবি: কাশেম হারুনঢাবির শিক্ষার্থী আফরিন তার বন্ধুদের নিয়ে মেলায় এসেছেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, “শীতের পিঠা মানে আমার কাছে আকর্ষণীয় খাবার। খেঁজুরের গুড় ও দুধে ভেজানো চিতই পুলি ‘মোস্ট’ ফেভারিট।  দু’দিন ধরে আসতে চাইছি, সেভাবে সুযোগ না হওয়ায় আসতে পারিনি। আজকে খাবো, কিছু শুকনো নকশি পিঠা কিনে নিয়ে যাবো। ” 

এ শীতে এখনও পিঠা খেতে বাড়ি যাওয়া হয়নি বলেও বেশ আফসোস করেন আফরিন।  

পৌষমেলা ঘুরে দেখা গেল, পাপড় পিঠা, ফুলঝুরি পিঠা, বরফি পিঠা, বড়া পিঠা, ভাঁপাপুলি পিঠা, মেরা পিঠা,  মালপোয়া পিঠা, রস পিঠা, শেওই পিঠা, সিদ্ধকুলি পিঠা, কলা পিঠা, নারকেল পিঠা, দুধরাজ পিঠা, বিবিয়ানা পিঠা (জামাই ভুলানো পিঠা) ইত্যাদি মুখরোচক স্বাদের সব পিঠা পাওয়া যাচ্ছে।  বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে চলছে পৌষমেলা।  ছবি: কাশেম হারুনবরিশাল পিঠাঘরের সত্ত্বাধিকারী মনোয়ার হোসেন জানালেন, এখানে ক্রেতা হিসেবে তরুণ-তরুণীর সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে তরুণীদের পছন্দ বিভিন্ন ধরনের ঝাঁল পিঠা, আর তরুণদের রসের পিঠা বেশি পছন্দ।

সকালে মেলায় তেমন বেচা বিক্রি না হলেও দুপুরের পর বিক্রি অনেক বেড়ে যায় বলেও জানান মনোয়ার।

দুই মেয়েকে নিয়ে বংশীবাজার থেকে এসেছেন কলেজের অধ্যাপক শাহিদা হাসান।

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে চলছে পৌষমেলা।  ছবি: কাশেম হারুন‘পিঠাই হচ্ছে শীতের মিঠা’ উল্লেখ করে এ নারী বলেন, শীতের মিঠা মানে পিঠা। আর এই শীতের পিঠার সঙ্গে শৈশবে আমার  স্মৃতি অনেক। এখন ব্যস্ততার কারণে মেয়েদের পিঠা বানিয়ে খাওয়ানো হয় না। তাই, সকাল সকাল চলে এলাম। এক সঙ্গে এতো পিঠা তো বানিয়ে খাওয়ানো বা দেখানো সম্ভবও না।  

শাহিদা হাসান বলেন, মেলায় এসে ভালো হলো, পিঠা যে আমাদের শীতের ঐতিহ্য তা বুঝতে পারবে ওরা। আমার মেয়েরা এতো পিঠা কখনও দেখেনি, এখন দেখলো নামও জানলো, ওরা খুব খুশি।

সারাবছর পিঠা পাওয়া গেলেও শীতকালে পিঠার স্বাদ অন্যরকম। তাই, তো শহুরে জীবনে অভ্যস্ত হওয়ার পরও পৌষমেলায় পিঠা উৎসবকে  ঘিরে নগরবাসীর উন্মাদনায় সত্যতা মিললো গ্রাম অঞ্চলের প্রচলিত প্রবাদের মতো, ‘পান পানি পিঠা তিনই শীতের মিঠা’।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৭
এমসি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।