ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জেদের বশেই সন্তানদের হত্যা, অতঃপর আত্মহত্যা!

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৭
জেদের বশেই সন্তানদের হত্যা, অতঃপর আত্মহত্যা! দারুস সালামে দুই সন্তানসহ মায়ের লাশ

ঢাকা: দুই সন্তান নিয়ে আনিকা-শামীমের ১২ বছরের সংসার জীবন। সংসারে কিছু আর্থিক সমস্যা ছিল, তারপরও সব ছিল গোছানোই। হঠাৎ স্বামীর ওপর জেদ, তার বশে দুই শিশু সন্তানকে হত্যা, এরপর আত্মহত্যা করেন অভিমানী আনিকা। আত্মহননকারী আনিকার স্বামী শামীমকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশ। 

পুলিশকে শামীম আরও জানায়, মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সকালে নাস্তায় বাসি ভাত দেয়ার কারণে তিনি রাগের বশে স্ত্রীকে গালমন্দ করে বাসা থেকে বের হয়ে যান। তার সূত্র ধরেই এমন মর্মান্তিক ঘটনা।

তবে এই ঘটনায় আত্মহননকারী অানিকার মা নাদিরা বেগম বাদী হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে নিহতের স্বামী শামীম হোসেনকে (৩৩) আসামি করে দারুস সালাম থানায় একটি মামলা করেছেন।  

দারুস সালাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফারুক উল আলম বাংলানিউজকে বলেন, এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে একটি মামলা হয়ে। আসামি শামীম হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত কার্যক্রম চলছে।  

আত্মহননকারী নিহত আনিকার ফুফাতো ভাই রশিদুল একজন ভ্যানচালক। খবর পেয়ে তিনি আনিকার পরিবারের সঙ্গে থানায় আসেন।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার মামাতো বোন আনিকা ছিল খুব জেদী স্বভাবের মানুষ। কেউ তাকে বকাঝকা করলে ওই জেদ নিজেই পুষে রাখতো। তবে কাউকে কিছু বলতো না।  

আমরা কখনও শুনি নাই যে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে। তারা খুব সুখী জীবন-যাপন করছিলো। আত্মহননকারী নিহত আনিকার স্বামী সম্পর্কে তিনি জানান, শামীম ছেলে হিসেবে খুব ভালো। তার স্বভাব আচরণ ভালো। দীর্ঘদিন থেকেই আমরা শামীমকে চিনি। তবে আমার বোন খুব জেদী স্বভাবের ছিল।  

এ ঘটনায় বুধবার (১১ জানুয়ারি) সকাল ৭টার দিকে ছোট ডিয়াবাড়ি এলাকার মাস্টার বাড়িতে আসেন শামীমের স্বজনেরা। শামীমের বৃদ্ধ বাবা ইয়াসিন কবির ও মা সামেলা বেগম ছেলের বৌ ও দুই নাতি-নাতনির মৃত্যুর খবর শুনে অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছে। পরিবারের ৬ ভাই বোনের মধ্যে শামীম দ্বিতীয়।  

ওই বাড়ির (ঘটনাস্থল) প্রতিবেশীদের কাছে খবর শুনে শামীমের স্বজনেরা বেলা ১১টার দিকে দারুস সালাম থানায় আসেন।  

আনিকার স্বামী শামীমের ছোট বোন মুন্নি বেগম বাংলানিউজকে জানান, আমার ভাই ও ভাবি দু'জনই খুব ভালো। তাদের মধ্যে অনেক মিল ছিল। আমার ভাই তার স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতেন।  

পারিবারিক ইচ্ছায় দুইজনকে বিয়ে দেয়া হয়। প্রায় ১২ বছর ধরে তারা সংসার করে আসছিল। আজ পর্যন্ত ভাই ভাবি কোনো দিন ঝগড়া করেছে বলে আমরা শুনি নাই।   'আমার ভাইয়ের দুটি সন্তান দেখতে খুব সুন্দর ছিল। দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করতো' -যোগ করেন তিনি।  

দারুসসালাম ছোট ডিয়াবাড়ির ২৯/১ মাস্টার বাড়ির মালিকের ছেলে সাদিক বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের বাড়ির ২৪ জন ভাড়াটিয়া আছে। সবার মধ্যে শামীম খুব ভালো ছেলে। যদিও তার সংসারে আর্থিক সংকট ছিল। ৫ মাসের বাড়ি ভাড়া অাটকে যাওয়ায় শামীমকে অালাদা ডেকে বলি প্রতিদিন ১০০ করে দিয়ে দিতে। সে কিছুদিন দিয়ে পরে আর দেয় নাই। পরে প্রতি সপ্তাহে ৫০০ টাকা দেওয়ার জন্য বললে সে কিছুদিন পর তাও দেয়নি।  

এদিকে, পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আত্মহননকারী আনিকা নওগাঁর মহাদেবপুরের একটি ব্র্যাক স্কুলে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। পারিবারিক ভাবেই শামীমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ছোট বেলায় আনিকার বাবা আইনুল হক গেদু মারা যায়। পরে মায়ের কাছেই মানুষ হন তিনি।  

ঘটনাস্থলে ঘুরে শামীমের সেলুনের দোকানের পাশেই এআর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের মালিক মো. রাসেল বাংলানিউজকে বলেন, শামীম ছেলে ভালো, আমি ওর দোকানের কাস্টমার। প্রায় সময় আমি ওর দোকানে গিয়ে বসতাম। কয়েকটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছে বলে শুনেছি। প্রতি সপ্তাহে কিস্তি পরিশোধ করতো।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর দারুসসালাম থানার ছোট দিয়াবাড়ি এলাকার টিনশেড বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় শিশু কন্যা শামীমা (৫) ও ছেলে আব্দুল্লাহ (৩) সহ মা আনিকার (২০) লাশ।

বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৭
এসজেএ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।