বিধি বাম! ভুলক্রমে উড়োজাহাজটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেনি। উঠতে পারেননি সেই ‘ডমেস্টিক যাত্রী’।
যা হওয়ার তাই হল। ফ্লাইটটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে জেনেই কাস্টমস কর্মকর্তাদের কঠোর নজরদারি। বিমানবন্দরে কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে অবস্থান নেন তারা।
যাত্রীরা নামবেন, এমন সময় উড়োজাহাজে চলে রামেজিং (কাস্টমসের ভাষায় তল্লাশি)। ঘটনা বুঝতে পেরে ধূর্ত চোরাচালানি সিটের নিচে থেকে স্বর্ণ বের করে টয়লেটে রেখে পালালেন।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে এভাবেই একটি বেসরকারি এয়ারওয়েজের ফ্লাইট থেকে প্রায় সাত কেজি স্বর্ণ জব্দ করেন ঢাকা কাস্টমস হাউজ কর্মকর্তারা।
ঢাকা কাস্টমস হাউজের যুগ্ম কমিশনার সোহেল রহমান স্বর্ণ জব্দের এ কাহিনী বাংলানিউজের কাছে তুলে ধরেছেন। ২৬ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস। এ দিবসের দু’দিন আগে এটি বিরাট সাফল্য।
সোহেল রহমানের ভাষ্যমতে, গোপন সংবাদ ছিল, ওমানের মাস্কট থেকে একটি বেসরকারি এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে স্বর্ণের বড় একটি চালান চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে যাবে। চট্টগ্রামে ‘ডমেস্টিক যাত্রী’ উঠবেন। সেই যাত্রীর মাধ্যমে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে খালাস হবে স্বর্ণ।
রাত পোহানোর আগেই তথ্য বদলে গেল। তথ্য এলো, ফ্লাইটটি চট্টগ্রামে অবতরণ করেনি। চট্টগ্রামে অবতরণ না করায় উঠতে পারলেন না সেই ‘ডমেস্টিক যাত্রী’। মাস্কট থেকে আসা চোরাচালানি যাত্রীর কাছেই রয়ে গেল স্বর্ণ। ফ্লাইটের ভুলে স্বর্ণ নিয়ে বিপদেই পড়লেন সেই যাত্রী।
তথ্য পেয়েই কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে উড়োজাহাজটির অপেক্ষায়। সকাল সাড়ে ৯টায় বিমান অবতরণের পর পরই চারপাশে অবস্থা নেন চৌকস কাস্টমস কর্মকর্তারা। ফ্লাইটটির কোথায় স্বর্ণ আছে, তথ্য আসতে থাকে।
কিছুক্ষণ পর তথ্য আসে, বিমানের সিটের নিচে রয়েছে। শুরু হয় তল্লাশি। চোরাচালানি বুঝতে পারেন, উপায় নেই। যাত্রীরা নামছেন, এর মধ্যেই ধূর্ত চোরাচালানি স্কচটেপ মোড়ানো তিনটি প্যাকেট ফেলে যান টয়লেটে।
প্রতিটি সিট তন্ন তন্ন করে খোঁজা হল। তাহলে স্বর্ণ কোথায় গেল? অতীত অভিজ্ঞতা অনুসারে টয়লেটেও চলে রামেজিং। শেষে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় স্কচটেপ মোড়ানো প্যাকেট তিনটি।
প্যাকেটগুলো খুলেই কর্মকর্তারা অবাক। প্রতি প্যাকেটে ২০টি করে মোট ৬০টি চকচকে স্বর্ণবার। যার ওজন ৬ কেজি ৯৬০ গ্রাম। বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
সোহেল রহমান জানান, কাস্টমস কর্মকর্তাদের তৎপরতা বুঝতে পেরে টয়লেটে রেখে পালিয়েছেন চোরাচালানি। তথ্য যাচাই করে দোষীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
তিনি জানান, গত সপ্তাহেও এমন তথ্য ছিল, চট্টগ্রামে অবতরণের মাধ্যমে স্বর্ণের চালান খালাস হবে। কিন্তু কুয়াশার কারণে চট্টগ্রামে অবতরণ করতে পারেনি ফ্লাইটটি। পরে ঢাকায় অবতরণের পর ওই স্বর্ণের চালান আটক করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৭
আরইউ/এএসআর
** শাহজালালে সাত কেজি স্বর্ণ জব্দ