খালের দখল করা অংশে তৈরি করা দোকান আর বাসাবাড়ি থেকে খালে প্রতিনিয়তই ফেলা হচ্ছে ময়লা-আর্বজনাসহ নানা বর্জ্য। কালচে রঙের পানি ছড়াছে দুর্গন্ধ।
রাজধানীর খিলগাঁওয়ের ত্রিমোহনীর গুদারাঘাটের এই চিত্রই বলে দেয় কতটা লাগামহীনভাবে চলছে দখলের মহোৎসব। সরকারি জায়গা দখল করে অবাধে চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য। শুধু ব্যবসাই নয়, প্রতিনিয়ত খালে ময়লা ফেলে পুরোটাই ভরাট করার মরিয়া পাঁয়তারা চালাচ্ছে স্থানীয় দখলদাররা।
নন্দীপাড়া থেকে আসা জিরানী খাল, রামপুরা থেকে একটি এবং পূর্বদিক থেকে আসা মান্ডা খালের একটি অংশ এসে মিশেছে গুদারাঘাট–ত্রিমোহনীতে। ত্রিমোহনীর এই ঘাট থেকে এক সময় নৌকা দিয়ে নারায়ণগঞ্জ, ডেমরা ও টঙ্গীতে যাতায়াত করা যেত। এখনও বর্ষা মৌসুমে কদাচিৎ এর দেখা মেলে। কিন্তু যে অবস্থা চলছে, তাতে কিছুদিন পরেই এখানে জলাধারের কোনো নামনিশানা থাকবে না।
সরেজমিনে গুদারাঘাট ঘুরে দেখা যায়, ঘাটে সাজানো রয়েছে সারি সারি নৌকা। নৌকা দিয়ে পারাপার হচ্ছে লোকজন। খালের পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকান। বসেছে মাছ ও সবজির বাজার। ত্রিমোহিনী ঘাট থেকে পুব দিকে তাকালেই দেখা যায় অবৈধভাবে নির্মাণ করা সাঁকো দিয়ে দাসেরকান্দি, বাবুর জায়গা, বালুর পাড়, ঈদের কান্দিসহ পাঁচটি গ্রামের মানুষের যাতায়াতের ব্যবস্থা হয়েছে।
গুদারাঘাটে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নৌকায় ওপার-ওপার করেন চুন্নু মিয়া।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি দাসেরকান্দি। এই এলাকায় যাতায়াতের ব্রিজ না থাকায় নৌকায় চলাচল করতে হয়। তবে খালের পাড়, খালের ভেতরের সবটাই মানুষ বর্জ্য-আবর্জনা ফেলে ফেলে দুষিত করে ফেলেছে। পচা পানি থেকে দুর্গন্ধ আসে। ’
তিনি আরো বলেন, ‘এইখানে আগে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এক সময় নন্দীবাজার পর্যন্ত নৌকাও চলত। এখন আর চলে না। অবৈধ সাঁকো হওয়ার কারণে কিছু মানুষের সুবিধা হলেও এলাকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ক্ষতি হয়েছে। যারা মাছ ধরে জীবিকা চালাতো তারা আর তা করতে পারে না। সব যেন ফুরিয়ে আসছে। ’খাল থেকে দখলদার উচ্ছেদের ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উচ্ছেদ করা হবে এমন খবর শুনেছি। উচ্ছেদ করলে ভালোই হবে। খালটি আবার নতুন জীবন ফিরে পাবে। আমরাও দুর্গন্ধ থেকে বাঁচবো। ’
গুদারাঘাটে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হোটেলের কর্মচারী লতিফ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা জানি এইডা সরকারি জায়গা। নোটিশ দিলে ছাইড়া দিমু। ’
গত ২২ জানুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাইদ খোকন রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল, বক্স কালভার্ট ও রাস্তা দখলমুক্ত করা হবে বলে জন্য ঘোষণা দেন। প্রাথমিকভাবে আগামী ৬ এবং ৯ ফেব্রুয়ারি নন্দীপাড়া ত্রিমোহিনী খাল ও হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ এলাকার রাস্তা দখলমুক্তির অভিযান চালানো হবে বলে জানান তিনি।
** সারি সারি সেতু-সাঁকোয় নির্যাতিত খাল
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৭
আরএটি/আরআর/জেএম