এখনই যেন বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে শীত বুড়ির। তাই শিমুল ও পলাশ না ফুটলেও আমের মুকুল ফুটেছে গাছে গাছে।
আমের মুকুলে তাই এখন মৌমাছির জটলা। মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণ কাছে টানছে তাদের। গাছের প্রতিটি শাখা প্রশাখায় তাই চলছে ভ্রমরের সুর ব্যাঞ্জনা। এতেই ব্যাকুল হয়ে উঠছে আমপ্রেমীদের মন।
বছর ঘুরে আমের শহর রাজশাহীর মানুষের কাছে ঋতু বৈচিত্র ধরা দিয়েছে অনেকটা এভাবেই। ফাগুন আসেনি, তীব্রতা না থাকলেও শীত শেষ হয়নি। অথচ এরই মধ্যে রাজশাহীর আম গাছগুলোয় আসতে শুরু করেছে মুকুল। তাই চলার পথে ঘুরে ফিরে আমগাছের মগডালেই উঠছে পথচারীর চোখ।
নগরের পথে প্রান্তরে চোখ মেললেই দেখা যাচ্ছে সদ্য মুকুল ফোটার এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য। রাজশাহীর পুলিশ লাইন, ভেড়িপাড়া, মালোপাড়া, ছোটবনগ্রাম, ভদ্রা ও মেহেরচণ্ডী এলাকার অধিকাংশ গাছেই আমের মুকুলে ভরে গেছে। তবে সময় বাকি থাকায় গ্রামের আম বাগানগুলোয় এখনও মুকুল আসেনি।
রাজশাহীর ছোটবনগ্রাম এলাকার আমচাষি ফরিদ আলী শেখ বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর শুরু থেকেই শীতের তেমন তীব্রতা নেই। মধ্য ডিসেম্বরে তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল। তবে তা স্থায়ী হয়নি। এছাড়া ঘন কুয়াশার আধিপত্য নেই গোটা শীত মৌসুম জুড়েই। তাই এবার গাছে আগাম মুকুল এসেছে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলীম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর শীত কম পড়ছে। দিনের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে মধ্য মাঘেই।
ফলে রাজশাহী অঞ্চলের আম গাছগুলোতে একটু আগেই মুকুল চলে এসেছে। সাধারণত ফেব্রুয়ারিতে আম গাছে মুকুলের এমন সমারোহ দেখা যায়। তবে এতে সমস্যা নেই। প্রতি বছর টানা শৈত্য প্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় আমের মুকুলের ক্ষতি হয়। এবার তেমনটির আশঙ্কা নেই। ধীরে ধীরে সব গাছেই মুকুল আসবে।
শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া এমন থাকলে ফলনে ক্ষতি হবে না বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) দেব দুলাল ঢালী বাংলানিউজকে বলেন, রাজশাহীতে গত বছর ১৬ হাজার ৫শ’ ৮৩ হেক্টর জমিতে আমের বাগান ছিল। কিন্তু বিভিন্ন উপজেলায় প্রতি বছরই নতুন নতুন আম বাগান গড়ে উঠছে। তাই এবার আবাদের পরিমাণও কিছুটা বাড়াবে।
তিনি বলেন, রাজশাহী ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জসহ আশপাশের প্রায় সব জেলাতেই এখন বড় বড় আমের বাগান রয়েছে। লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই আম বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। তবে নতুনভাবে গড়ে ওঠা আমবাগানগুলোর অধিকাংশই বনেদি জাতের। বিশেষ করে নিয়মিত জাত গোপালভোগ, ল্যাংড়া, ক্ষিরসাপাত ও আশ্বিনা জাতেরই গাছ বেশি হচ্ছে।
রাজশাহী অঞ্চলে প্রায় আড়াইশ’ জাতের আমের ফলন হয়। তবে এবার জাত আম গোপালভোগ, ল্যাংড়া, ক্ষিরসাপাত, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলি, আম্রপলি, আশ্বিনা, ক্ষুদি, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ, কালীভোগ, তোতাপরী, দুধসর, লকনা ও মোহনভোগ জাতের আম বেশি চাষ হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৭
এসএস/জিপি/আরআই