ঢাকা, রবিবার, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

হাইকোর্টের নির্দেশনা উপেক্ষিত, বায়ুদূষণ বাড়ছেই

রেজাউল করিম রাজা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২৫
হাইকোর্টের নির্দেশনা উপেক্ষিত, বায়ুদূষণ বাড়ছেই বায়ুদূষণ

ঢাকা: রাজধানী ঢাকার বায়ু প্রতিনিয়ত দূষিত হয়ে উঠছে। চলতি শীতেও টানা কয়েক সপ্তাহ ঢাকার বাতাসের মান ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ ছিল।

এরই ধারাবাহিকতায় টানা কয়েক দিন ধরেই ঢাকায় বইছে খুব ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু।

ঢাকা এখন বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে একটি। প্রায়ই এ শহরের বায়ুদূষণের মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএমের (২ দশমিক ৫) উপস্থিতি। রাজধানীর বাতাসে এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মান মাত্রার চেয়ে ২৮ গুণ বেশি।

বায়ুদূষণের নিয়মিত পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা আন্তর্জাতিক সংস্থাটির এই তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বায়ু কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেওয়া ও সতর্ক করা। ঢাকাবাসীর উদ্দেশ্যে আইকিউ এয়ারের পরামর্শ- বাসার বাইরে বের হলে সুস্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত নগরায়ন, ইটভাটা, জৈবশক্তি পোড়ানো, অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণকাজ, পুরনো ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল, নিম্নমানের জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ও আন্তঃসীমান্ত দূষণ বাংলাদেশে বায়ু দূষণের প্রধান কারণ।

এ দূষণরোধে হাইকোর্টের ৯ দফা নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সেই নির্দেশনা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। বারবার উপেক্ষা করা হচ্ছে হাইকোর্টকে। পাশাপাশি দূষণরোধে তেমন কোনো কার্যকর-দৃশ্যমান ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়নি বলে মনে করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।

হাইকোর্টের ৯ দফা নির্দেশনায় বলা হয়, ঢাকা শহরের মধ্যে যেসব ট্রাক বা অন্যান্য যানবাহনে বালু বা মাটি পরিবহন করা হয়, সেগুলো ঢেকে বহন করতে হবে। যেসব জায়গায় নির্মাণ কাজ চলে সেসব জায়গা ঢেকে রাখতে হবে। ঢাকার সড়কগুলোয় পানি ছিটানোর যে নির্দেশ ছিল, সে নির্দেশ অনুযায়ী যেসব জায়গায় এখনও পানি ছিটানো হচ্ছে না, সেসব এলাকায় পানি ছিটানোর যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব উন্নয়ন প্রকল্প আছে সেগুলোর যথাযথ সেফটি মেজারস মেন্টেইন করে তাদের কাজগুলো পরিচালনা করতে হবে। যেসব গাড়ি কালো ধোঁয়া ছাড়ে সেগুলো বন্ধ করতে বলা হয়েছে। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ির ইকোনোমিক লাইফ নির্ধারণ করতে হবে এবং যেসব গাড়ি পুরাতন হয়ে গেছে সেগুলো চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। যেসব ইটভাটা অবৈধভাবে চলছে, সেগুলো বন্ধ করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া টায়ার পোড়ানো এবং ব্যাটারি রিসাইকিলিং একমাসের মধ্যে বন্ধ করতে হবে। মার্কেট ও দোকানের বর্জ্য প্যাকেট করে রাখতে হবে এবং তা মার্কেট ও দোকান বন্ধের পরে সিটি কর্পোরেশনকে ওই বর্জ্য অপসারণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বায়ুদূষণ রোধে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ কিংবা হাইকোর্টের নির্দেশনার বাস্তবায়ন কতটুকু হচ্ছে জানতে চাইলে, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ডিন এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, যে উদ্যোগগুলো গ্রহণ করা দরকার ছিল সেগুলো গ্রহণ করা হয়নি। এক্ষেত্রে আমরা স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের কথা বলেছি। মহামান্য হাইকোর্ট বায়ুদূষণ রোধে যে নির্দেশনাগুলো দিয়েছিল, তার মধ্যে তিনটি নির্দেশনা হচ্ছে, যেকোনো নির্মাণ কাজ ঢেকে করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে পরিবহন করা এবং নির্মাণ কাজ স্থলে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়া।

তিনি আরও জানান, আমরা ঢাকা শহরে প্রায় পঞ্চাশটির মতো নির্মাণ কাজ স্থল পরিদর্শন করেছি। এটি আমাদের একটি সাম্প্রতিক সময়ের চলমান গবেষণা। আমরা দেখেছি অধিকাংশ স্থানে হাইকোর্টের নির্দেশনাগুলো মানা হচ্ছে না। নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রাখা হচ্ছে না, নির্মাণ সামগ্রী রাস্তার ওপর রাখা হচ্ছে। নির্মাণ সামগ্রী খোলা অবস্থায় পরিবহন করা হচ্ছে। রাস্তায় কাজ বলি আর যেকোনো নির্মাণ কাজই বলি না কেন সবকিছু উন্মুক্ত ভাবেই করা হচ্ছে। নির্মাণ বিধিমালা না মেনেই এসব করা হচ্ছে। ফিটনেসবিহীন যান চলাচল করছে, অননুমোদিত ইটভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে।

বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর বায়ু দূষণ রোধে যে নির্দেশিকার কথা বলেছে, সেই ব্যবস্থাগুলোও তারা নিতে পারছে না। এক্ষেত্রে বায়ু দূষণ রোধে একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রয়োজন। মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের টাকায় যেসব উন্নয়ন কাজ হচ্ছে, যেমন শিল্প মন্ত্রণালয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পলিউশন রোধে দায়িত্ব নিতে পারে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় রাস্তা সংস্কার কাজে যে দূষণ হয় সেটা কমানোর দায়িত্ব নিতে পারে। স্থানীয় সরকার বর্জ্য পোড়ানোয় যে দূষণ হয় সেটা রোধ করতে পারে। পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তর সকল কার্যক্রম মনিটরিং করতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা মনিটরিংও দেখি না এবং মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের দূষণ রোধে কোনো পদক্ষেপও দেখছি না। উল্লেখিত কার্যক্রম গ্রহণ করলে বায়ু দূষণ কমানো সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২৪
আরকেআর/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।