ঢাকা, রবিবার, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মিঠা পুকুরে ময়লা ফেলে, পচা দিঘীর পানি খায়!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৭
মিঠা পুকুরে ময়লা ফেলে, পচা দিঘীর পানি খায়! মিঠা পুকুরে ময়লা ফেলে, পচা দিঘীর পানি খায়-ছবি: মানজারুল ইসলাম

বাগেরহাট  ঘুরে: নামে মিঠা পুকুর (মিষ্টি পানির পুকুর)। কিন্তু পুকুরটি যেন ময়লা আবর্জনার নির্ধারিত স্তুপে পরিণত হয়ে পড়েছে। ময়লা আবর্জনা আর ড্রেনের নোংরা পানিতে কালো হয়ে গেছে পুকুরের পানি। সেই পানিতেই শহরবাসীর চলছে আয়েসি গোসল।

অপরদিকে নামে পচা দিঘী হলেও তার পানি তৃপ্তি নিয়ে পান করছেন হাজারও মানুষ। এ যেন ‘আতর আলীর গায়ে দুর্গন্ধ আর নজর আলীর চোখে না দেখার মতো’।

নামের বিপরীত কাজের এ পুকুর ও দিঘীটি পর্যটন শহর বাগেরহাটের বহুল পরিচিত। মিঠা পুকুরটি অবস্থিত শহরের প্রাণ কেন্দ্র খান জাহান আলী রোডের পাশে। আর মহাসড়কের পাশে পচা দীঘি অবস্থিত। এর উত্তরে দশানী গ্রাম। পূর্বে বাদে কাড়াপাড়া, দক্ষিণে ফুলতলা এবং পশ্চিমে দেয়াবাড়ি ও ফুলতলা গ্রাম।

বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরবাসীর সাঁতার শেখা ও গোসল করার পুকুরটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। পুকুরে নেই ভালো পানি। তাছাড়া পানি আবার ময়লা আবর্জনায় দূষিত হয়ে আছে যা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পাড়ে ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো রয়েছে। তাতে যে কারও পা কাটতে পারে। যত্রতত্র পানিতে ভাসছে ব্যবহৃত অনটাইম প্লেট। ময়লা আবর্জনার পাশাপাশি পুকুরে রয়েছে কচুরিপানা।
মিঠা পুকুরে ময়লা ফেলে, পচা দিঘীর পানি খায়-ছবি: মানজারুল ইসলামবাগেরহাট শহরের অন্যতম বৃহৎ মিঠা পুকুরের চারপাশের অনেক স্থায়ী বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা এটিকে ময়লা ফেলার স্তুপে পরিণত করেছে। এই রং নষ্ট হওয়া দুর্গন্ধ পানিতে ঘাট বান্ধানো সিঁড়িতেই আবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে বিভিন্ন বয়সী মানুষের অজু, গোসল, সব ধরনের ধোয়ার কাজ। ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধযুক্ত স্তুপের পাশের সড়ক দিয়ে দৈনিক শত শত যাতায়াতকারী সাধারণ জনগণ, শিক্ষার্থী ও মুসল্লিদের চরম দুর্গন্ধ পোহাতে হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসন দেখেও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
 
পুকুরে গোসলরত আব্দুল্লাহ নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, আমাগে কিছুই করার নেই। পুকুরের পানি নোংরা, অজুসহ সব কাজ করতে অয় এই পানি দিয়ে।
 
আক্ষেপ প্রকাশ করে পুকুর ঘাটে বসা সরকারি পিসি কলেজের ছাত্র রাহুল দাস বাংলানিউজকে বলেন, নামে মিঠা পুকুর হলেও ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান হিসেবে বেঁচে নিয়েছে এখানকার লোকেরা। তাতে আবার গোসলও করেন তারা।
মিঠা পুকুরে ময়লা ফেলে, পচা দিঘীর পানি খায়-ছবি: মানজারুল ইসলামপুকুর সংলগ্ন সড়কের পাশের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহান শেখ বলেন, মিঠা পুকুর এখন খোলা ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। পুকুরটা রক্ষা করা গেলে গোসলসহ সাঁতার অনুশীলন করা যেতো। একই সঙ্গে বিপজ্জনক মুহূর্তে পুকুরের পানি ব্যবহার করতে পারবে ফায়ার সার্ভিস।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, রাতের অন্ধকারে এক শ্রেণীর মানুষ পুকুরে ময়লা ফেলে। বর্ষার সময় সব ড্রেনের পানি এসে নামে এ পুকুরে। এ গুরুত্বপূর্ণ পুকুরের প্রতি কারো সুদৃষ্টি না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
মিঠা পুকুরে ময়লা ফেলে, পচা দিঘীর পানি খায়-ছবি: মানজারুল ইসলামস্থানীয় প্রবীণরা জানান, বাগেরহাট শহরের সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন অনেক পুকুর এখন আর নাই। বছরে বছরে সেগুলো ভরাট করে সেই সব স্থানে দালান কোঠা তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মসজিদের পুকুর, পিটি আইয়ের পুকুর, মিঠা পুকুরের সামনের পুকুর, রেল রোডে মমতাজ হোটেলের পেছনে আবু কাজির পুকুর ভরাট করা হয়েছে। এইসব পুকুরে বৃষ্টির পানি জমা হতো। কিন্তু পুকুর ভরাট হওয়ার পর এখন সামান্য বর্ষা হলেই শহর তলিয়ে যায়।
 
অন্যদিকে পচা দিঘী একটা ঐতিহাসিক বিশাল দিঘী। তার চারপাশে অনেক গাছ-গাছালী রয়েছে। আর দিঘীর ভেতর রয়েছে চুনো পুটি থেকে বড় বড় রুই কাতলা। মাছেরা পরম সুখে দিঘীতে বসবাস করছে। বছরের বিভিন্ন সময় টিকিট দিয়ে এ দিঘী থেকে মাছ ধরার উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। শুধুই কি তাই পচা দিঘী নাম হলেও এর পানি স্বচ্ছ ও সুমিষ্টি। আশপাশের গ্রাম ও শহরের হাজারও মানুষ এই পানির উপর নির্ভরশীল। মিঠা পুকুরে ময়লা ফেলে, পচা দিঘীর পানি খায়-ছবি: মানজারুল ইসলামপচা দিঘী বাগেরহাটের এক উল্ল্যেখযোগ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন হওয়ায় প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী এখানে আসেন। আয়তনে খাঞ্জেলি দিঘী, ঘোড়া দিঘীর পর এর অবস্থান। কোনো কোনো ঐতিহাসিকদের মতে এ দিঘী হয়রত খানজাহান (র.) খনন করেন। কারও কারও মতে খানজাহানের ভাগনে এ দীঘি খনন করেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৬
এমআরএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।