ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ পৌষ ১৪৩১, ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

দু’টি সাবমেরিন বাংলাদেশের ফোর্সমাল্টিপ্লায়ার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৭
দু’টি সাবমেরিন বাংলাদেশের ফোর্সমাল্টিপ্লায়ার সাবমেরিন

ঢাকা: মায়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি হয়েছে।

বঙ্গোপসাগরে দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর ধরে চলা এ বিরোধের অবসান ঘটায় বাংলাদেশ এখন লাভ করেছে একটি স্থায়ী সমুদ্রসীমা, যার আয়তন প্রায় আরেকটি একটি বাংলাদেশের সমান। এ সমুদ্রসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

এসবের মধ্যে আছে চীনের কাছ থেকে দুটি সাবমেরিন কেনা। সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে এক একটি সাবমেরিন বা ডুবো যুদ্ধজাহাজকে দশটি ভাসমান যুদ্ধজাহাজের সমান বলে গণ্য করা হয়।

২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশের নৌবাহিনীপ্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমদের কাছে চীনের রিয়ার অ্যাডমিরাল লিউ জি ঝু সাবমেরিন দুটি হস্তান্তর করেন। সাবমেরিন দুটি নাম বনৌজা নবযাত্রা এবং বনৌজা জয়যাত্রা।

এ দুটি সাবমেরিনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বাংলা নিউজের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম, এনডিসি, পিএসসি।

মো. খুরশেদ আলম বলেন, সাবমেরিন সশস্ত্রবাহিনীর জন্য একটা বিরাট বিষয়। সামরিক সক্ষমতার বিচারে এক একটি সাবমেরিনকে দশটি যুদ্ধজাহাজের সমান বলে মনে করা হয়। যে কোনো নৌবাহিনীর জন্য বড় এক সম্পদ এটি। কারণ এ সাবমেরিন দিয়ে শত্রুপক্ষের (এখনতো আমাদের শক্র কেউ নাই) উপকূলভাগের (কোস্টলাইনের) একেবারে কাছে যাওয়া যায়। যে এ সাবমেরিন দুটি থেকে মিসাইল মারা যায়, মাইন স্থাপন করা যায়। এ দুটি সাবমেরিনকে সহজেই যুদ্ধজাহাজ থেকে ডিটেক্ট(শনাক্ত)করা যাবে না। আমদের এ দুটি সাবমেরিন খুবই আধুনিক। ৭৬ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থের ডিজেল ইলেকট্রিক সাবমেরিন দুটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য তৈরি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এ সাবমেরিন দুটি পানির ভিতর দিয়ে ডুবে ডুবে যে কোনো জাহাজের কাছাকাছি যেতে পারে যে কোনো দেশের তীরের কাছেও যেতে পারে। একটা সাবমেরিনকে ধরতে গেলে তার অবস্থান জানতে প্রায় ১০টা জাহাজ লাগে। বাংলাদেশের মত অল্প সংখ্যক জাহাজের নৌবাহিনীতে সাবমেরিন সংযোজন একটা ফোর্সমাল্টিপ্লায়ার হিসেবে কাজ করবে।

সাবেক এ রিয়ার অ্যাডমিরাল বলেন, যদিও আমাদের এখন কোনো শক্র নেই কিন্তু ভবিষ্যতের কথা মাথায় রাখতে হবে। বাংলাদেশের সাবমেরিন দুটিকে প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করে প্রশিক্ষিত লোকবল সৃষ্টি করতে সমর্থ হব। এ মুহূর্তে যার ঘাটতি আমাদের আছে।

 

তিনি বলেন, যুদ্ধকে সরিয়ে রেখেও বলা যায়, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় কোনো জাহাজ ড্রাগ, অস্ত্র বা অবৈধ মাল নিয়ে যাওয়ার সময় পানির ওপরের জাহাজ যত সহজে তাকে ধরতে পারবে তার চেয়েও সহজে সাবমেরিনের পক্ষে ডুবে গিয়ে জাহাজটিকে অ্যারেস্ট করা সহজ হবে। এ সাবমেরিনগুলো ভূমি থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে তারা স্বতন্ত্রভাবেও চলতে পারে। আমাদের অবকাঠামো তৈরি করা আছে। এ সাবমেরিন দুটি বেশ আধুনিক। এ দুটি সাবমেরিন সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের নৌসেনারই চালাচ্ছেন। এ সাবমেরিন শুধু বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় নয় বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে যে কোনো দেশের সীমানার কাছবরাবর যেতে পারবে। এর ব্যাপ্তিটা অনেক বড়। তাকে অভিযোজিত হতেই অন্য সীমায় যেতেই হবে। তাতে বিশ্বের কোনো বাধা নেই। আমাদের ভারত মহাসাগরে বিশ্বের অন্য মহাদেশের অনেক সাবমেরিন এসে বসে আছে। ট্রেনিং এর জন্য সমুদ্র সম্পর্কে জানার জন্য তাকে যেতেই হবে।  

মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় প্রায় ২৪ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ রয়েছে। তার মধ্যে সারাদেশ ব্যবহার করে মাত্র আড়াই ট্রিলিয়ন ডলারের মত সম্পদ। কিন্তু আমাদের এ বিশাল সমুদ্র অঞ্চলের ওপর আইনগত অধিকার অর্জন করার পরও আধুনিক জাহাজের অভাবে বাংলাদেশের মাছ আহরণকারীরা বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। ৬০ কিলোমিটারের উপরে সমুদ্রে আমাদের নৌকাগুলো যেতেই পারে না। তবে এখন মাছ ধরার ওপর আরো জোর দেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে জাহাজনির্মাণ শিল্প গড়ে তুলে আমরা সমৃদ্ধ হতে পারি। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশের এ বিশাল সমুদ্রসীমায় যে জাহাজগুলো চলে তার প্রায় সবই বিদেশি। আমরা আমদানি-রফতানি করতে এ বিদেশি জাহাজগুলোকে প্রতিবছর ভাড়া দেই ৫ বিলিয়ন ডলার। এ ৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে আমরা ২ বিলিয়ন ডলার দেশেই রাখতে পারি যদি বাংলাদেশ মালিকাধীন জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যায়। এর ফলে বাংলাদেশের জিডিপিতে বিরাট পরিবর্তন আসবে। শুধু মাছ নয়, অন্যখাতেও সম্ভাবনা অফুরান ।

খুরশেদ আলম বলেন, আন্তর্জাতিক রুটে বাংলাদেশের মালিকাধীন জাহাজ চলে মাত্র ২৭টি। আর বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরে প্রতিবছর বিদেশি জাহাজ আসে ২হাজার ৬০০টি। ধীরে ধীরে আমাদের জাহাজ বাড়বে। বিদেশি ও দেশি জাহাজের নিরাপত্তা একটা বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িযেছে এখন। পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের প্রাথমিক কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। এ সকল কিছুর মাঝে আমাদের নৌবাহিনী শক্তি বাড়াতে সাবমেরিনের বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৭

কেজেড/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।