ঢাকা, রবিবার, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বারবার উচ্ছেদেও হকারদের দখলে গুলশান লেকের ওয়াকওয়ে

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৭
 বারবার উচ্ছেদেও হকারদের দখলে গুলশান লেকের ওয়াকওয়ে উচ্ছেদ পরবর্তী পরিস্থিতি, ছবি: সুমন শেখ

ঢাকা: গুলশান লেকের শাহজাদপুর, গুদারাঘাটসহ আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ স্থাপনা, বস্তি ও টংঘর উচ্ছেদ করার পরে আবারও দখল নিয়েছে হকার ও বস্তিবাসীরা। এতে করে গুলশান লেকের ধারে নির্মিতব্য ওয়াকওয়ে আবারও হকারদের দখলে চলে গেছে।

গুলশান ৬ নম্বর সড়কের পাশে, শাহজাদপুর ঝিলপাড় বাজার, গুদারাঘাট এলাকায় লেকের ধারে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে উঠেছে দোকান-পাট, টংঘর, বস্তিসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) থেকে বেশ কয়েকবার উচ্ছেদে অভিযান চালালেও কখনোই সফল হয়নি তা।

উচ্ছেদের পর বারবার ফিরে এসেছে হকার ও বস্তিবাসিরা। পুনবার্সনের ব্যবস্থা না হওয়া পযর্ন্ত তারা এভাবেই দোকান-পাট নিয়ে বসবেন বলে জানিয়েছেন।

গুলশান-১ এর হাতিরঝিল অংশ গুদারাঘাটে রাস্তা ও নির্মাণাধীন ওয়াকওয়ে দখল করে কাঁচাবাজারের ব্যবসা চালাচ্ছিল হকাররা। এই এলাকায় গুলশান লেকের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। চলতি মাসে এ এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় রাজউক। তবে উচ্ছেদ অভিযানের রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও দোকানপাট নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।

রেজাউল নামে এক ফল ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাজই হলো, উঠায় দিলে আবার বসা। যখন উঠায় দিবে, চলে যামু। যতক্ষণ সুযোগ রয়েছে ততক্ষণ ব্যবসা চালায় যামু। কিছু কইর‍া তো খাইতে হবে? একটা ব্যবস্থা তো করে দিতে হবে, আমাদের যাওনের তো জায়গা নাই।

গুলশানে ফুটপাত দখল করে সবজির বাজার, ছবি: সুমন শেখ

আবেদিন নামে অপর এক সবজি ব্যবসায়ী বলেন, সব তো ভাইঙা দিছে। উপায়ান্তর না পাইয়্যা আমরা কয়জন অস্থায়ীভাবে আবার শুরু করছি। প্রত্যেকদিন পুলিশ আসে, চলে যেতে বলে। দেখি আবার কবে ওঠায় দেয়!

গুলশান শাহাজাদপুর ঝিলপাড়েরও দেখা গেল একই দৃশ্য। এ মাসেই উচ্ছে‍দ অভিযান চালিয়েছে রাজউক। এখনও অভিযানে ভাঙা দোকান-পাটের জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এর মধ্যেই গুলশান লেকের ওয়াকওয়ের ওপরেই বেশ কয়েকজন হকার আলু-পেঁয়াজ, ফল, সবজি ও চায়ের দোকান নিয়ে বসেছেন।

রহিম নামে এক চা বিক্রেতার দোকানে বসে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে সম্প্রতি সময়ে চালানো অভিযান নিয়ে আলোচনা করতেও শোনা যায়। তাদের মধ্যে একজন বলে ওঠেন, আমি ভয়ে দোকান নিয়ে বসতে পারছি না। যদি জরিমানা ও সব ভেঙে ফেলে দেয়। তখন তো মালামাল ও টাকার ক্ষতি হয়ে যাবে। গরিবের ওপর দিয়ে যায় সব। একবারও ভাবছে না এতদিন ধরে ব্যবসা করে খাচ্ছি, এখন আমরা যাব কই?

উচ্ছেদের পরেও ফুটপাতে বসেছে বাজার, ছবি: সুমন শেখরাজউক সূত্রে জানা যায়, হকারদের কারণে গুলশান লেকের উন্নয়ন কাজ বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে গুলশান লেকের দখল-দূষণের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে লেকটি। প্রতিদিনই টনে টনে ময়লা ফেলানো হয় এখানে। মাঝে মাঝে উদ্ধার কাজ চালিয়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজ হলেও র‍াস্তা নির্মাণের কাজে কোনো গতি নেই।

সরকার প্রায় ৪১০ কোটি টাকা ব্যয়ে গুলশান-বনানী-বারিধারা লেকের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। এ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হবে আগামী ২০২০ সালের জুন মাসে। ২৯৮ দশমিক ১৫ একর জমির অবৈধ দখল উচ্ছেদ, লেক দূষণমুক্ত করা, লেকের পানির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করা, পরিবেশ উন্নয়ন ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ বৃদ্ধি করা হবে এ প্রকল্পের আওতায়।

গত বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, গুলশান লেক আর দখল করতে দেওয়া যাবে না। যথাসময়ে এর উন্নয়ন কাজ সম্পূর্ণ হবে। শিগগিরই সব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে ফেলা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৭

এমসি/ওএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।