নিজের নামে প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠা মৃৎশিল্পী বিশ্বজিৎ পাল। বিক্রমপুরের ‘জি পাল অ্যান্ড সন্স আর্টিস’ নামে তার মৃৎশিল্পের যাত্রা শুরু।
বিশ্বজিতের হাতে তৈরি নানা ভাস্কর্য এবং বাহারি ডিজাইনের মূর্তি বা প্রতিমা ছোট-বড় সবাইকে আকৃষ্ট করে। তার অপূর্ব নির্মাণ শৈলী আর হাতের ছোঁয়ায় হয়ে সৃষ্টিকর্মগুলো হয়ে উঠে জীবন্ত।
সনাতন ধর্মানুসারে বিদ্যার দেবী সরস্বতী। অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে ভক্তদের জ্ঞানের উজ্জ্বল আলোয় প্রজ্জলিত করতে প্রতিবছর শুক্লাপঞ্চমী তিথিতে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। চন্দনের সঙ্গে পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলি দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয় সরস্বতী মায়ের চরণে।
শ্রীমঙ্গলে সরস্বতী প্রতিমাগুলোতে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের নির্মাণপ্রস্তুতি। প্রতিটি মূর্তির রং করা হয়ে গেছে। এখন তুলি দিয়ে চলছে শেষ পর্যায়ের কাজ।
শ্রীমঙ্গলের শ্রী শ্রী শ্রীমঙ্গলেশ্বরী কালিবাড়িতে শোভা পাচ্ছে বিশ্বজিতের তৈরি সরস্বতী প্রতিমাগুলো। ৪৭ বছরের অভিজ্ঞতা আর নিখুঁত শিল্পগুণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বিশ্বজিতের হাতে তৈরি প্রতিমাগুলোতে।
প্রতিটি প্রতিমাই আপন সৌন্দর্যে প্রস্ফুটিত। নানা রংয়ের উজ্জ্বলতা আর মায়াবি মুখশ্রীর চাহনি সবকটি প্রতিমাকে নান্দনিক করে তুলেছে। যা পরিশ্রম, নিষ্ঠা আর দরদমাখা প্রচেষ্টারই ফল।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাবার সঙ্গে বিশ্বজিৎ বিক্রমপুর থেকে প্রতিমা নির্মাণ করতে কিশোরগঞ্জ গিয়েছিলেন। তখন তার বয়স ছিল বারো কিংবা তের বছর।
নির্মাণ প্রসঙ্গে বিশ্বজিৎ পাল বলেন, ‘২৬ বছর আগে প্রথমে ১৯টি সরস্বতী প্রতিমা দিয়ে শ্রীমঙ্গলে কাজ শুরু করি। আগামী পহেলা ফেব্রুয়ারির সরস্বতী পূজা উপলক্ষে তিন শতাধিক প্রতিমার অর্ডার রয়েছে। ৫০০ টাকা থেকে ১৮ হাজার পর্যন্ত একেকটির মূল্য। বর্তমানে ছয়জন মিলে আমরা এ কাজ করছি। শুধু শ্রীমঙ্গল নয়, দূর-দূরান্ত থেকেও কাজের অর্ডার আসে। ’
জীবনের উজ্জ্বলতম স্মৃতি উল্লেখ করে বিশ্বজিৎ বলেন, “২০০৭ সালে কমলগঞ্জ উপজেলার সমশেরনগরে ব্যতিক্রমী দুর্গা-প্রতিমা তৈরি করেছিলাম। শিবের জটার ভেতর ছিল মূর্তির অবস্থান। মৌলভীবাজার শহরের ম্যানেজার স্টলে আমি যখন চা খেতে বসলাম, তখন এক পরিচিত লোক আমাকে বলছে, ‘সমশেরনগরের মূর্তি দেখে আসেন, ইন্ডিয়া থেকে কারিগর এনে বানিয়েছে। অপূর্ব সুন্দর সেই মূর্তি। ”
আমি ওই লোকের কথা শুনে হেসে একাধিকবার বললাম, ‘দাদা, ওই মূর্তি কিন্তু আমিই বানিয়েছি। তিনি আমাকে তখন উত্তর দিলেন ‘পরের নাম দিয়ে চইলেন না’।
এটা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। পরবর্তীতে ওই লোক এবং আমার পরিচিত অপর একব্যক্তি ম্যানেজার স্টলে এলে তাকে জিজ্ঞেস করে তিনি নিশ্চিত হলেন যে, ‘আমিই বানিয়েছি ওই মূর্তি। ’
বাংলাদেশ সময়: ১০৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৭
বিবিবি/টিআই