শিক্ষক সংকট, উচ্চ শিক্ষা, ছাত্রাবাস ও একাডেমিক ভবনসহ নানা সংকটে জর্জরিত প্রতিষ্ঠানটি। বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রমও।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি সররকারি কলেজটি ১৯৭৪ সালের ১০ মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে মাত্র ৬০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা এ কলেজের বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। পরে ১৯৮০ সালে কলেজটি জাতীয় করণের আওতায় আসে। এ কলেজের ওপর নির্ভর জেলার ৯টি উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রাঙামাটি জেলার তিন উপজেলার শিক্ষার্থীরা। কলেজটি জাতীয়করণের সময় যে পদ ছিল পরবর্তীকালে শিক্ষার্থী ও কোর্সের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও নতুন করে শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়নি।
কালের বিবর্তনে দিনদিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি ক্লাস রুম। ১০০ জনের ধারণ ক্ষমতার ক্লাস রুমে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫০ জন। এতে গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করে শিক্ষার্থীরা। অনেকে আসন সংকটের কারণে নিয়মিত ক্লাস করা থেকে বিরত থাকে।
২০০৮ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর, স্নাতক (সম্মান) ও এইচএসসি কোর্স চালু হলেও মাত্র তিনজন শিক্ষক দিয়ে চলছে ক্লাস। অন্যদিকে ২০১০ সালে চালু হওয়া ইতিহাস বিভাগে স্নাতক সম্মান কোর্স চালু থাকলেও শিক্ষক রয়েছেন মাত্র চারজন। অথচ এনাম কমিশনের সুপারিশ হিসেবে ১২ জন করে শিক্ষক থাকার কথা।
খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ মোট ৪৬টি শিক্ষকের পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৩৪ জন। বাংলা বিভাগের চারজন শিক্ষকের বিপরীতে একজন প্রভাষক থাকলেও তিনি চার মাসের ট্রেনিং-এ থাকায় বর্তমানে একজন অতিথি শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে। হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের চারজন শিক্ষকের বিপরীতে একজন সহকারী অধ্যাপক, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে চারজন শিক্ষকের বিপরীতে দু’জন শিক্ষক, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে দু’জন শিক্ষকের বিপরীতে একজন প্রভাষক এবং জীববিজ্ঞান বিভাগে দু’জন শিক্ষকের বিপরীতে একজন প্রভাষক কর্মরত রয়েছেন। ফলে শিক্ষকের অভাবে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
শ্রেণি কক্ষের অভাবে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অনেককেই ক্লাস চলাকালীন বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। শিক্ষক ও একাডেমিক ভবনের সংকট থাকায় শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শুধু তাই নয় কলেজটিতে একটি গ্রন্থাগার থাকলেও পর্যাপ্ত পাঠ্য বইয়ের অভাব রয়েছে।
এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী প্রান্তিকা নাথ ভাবনা বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস থাকা সত্বেও আসন সংকটের কারণে করা হয়না। প্রায় সময় একই বেঞ্চে ৪/৫ জন করে বসে ক্লাস করতে হয়। অনেক সময় দাঁড়িয়েও থাকতে হয়।
বিদ্যমান কম্পিউটার ল্যাবরেটরিতে প্রয়োজনীয় কম্পিউটার না থাকায় তথ্যপ্রযুক্তিতে পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। নেই কোন ক্যান্টিন ও হল রুম। কলেজে তৃতীয় শ্রেণির ১০টি পদের বিপরীতে মাত্র একজন কর্মরত। ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীর ১৭টি পদের বিপরীতে রয়েছে ১১ জন।
খাগড়াছড়ি সরকারি কলজের অর্নাস চতুর্থ বর্ষের ছাত্র স্বাগতম চাকমা জানায়, কলেজের এসব সমস্যা নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু এখনো সুফল পাইনি। দেশ এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থাকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে বলে জানান তিনি।
জেলা পর্যায়ে টানা তিনবার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মর্যাদা পায় খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ। এছাড়া ১৯৯৭ সালে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, ১৯৯৮ সালে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ, একই সালে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষকের মর্যাদা অর্জন করেন উক্ত কলেজের শিক্ষকবৃন্দ।
খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের বিবিএস শিক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম রাশেদুল হক জানান, দিনদিন কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে সে তুলনায় অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়েনি। যেহেতু খাগড়াছড়িতে এটিই অন্যতম বিদ্যাপীঠ সেহেতু এই কলেজের সমস্যাগুলো দ্রুত নিরসন করা প্রয়োজন।
খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসার ড. মো. আব্দুস সবুর খান বলেন, এ বিষয়ে বার বার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। তবে এখনো সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। এ জনপদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাইরে গিয়ে পড়ার সামর্থ্য নেই বললেই চলে। তাই এই কলেজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিতে পারলে ভবিষ্যতে আরো ভালো এবং সমৃদ্ধ হবে কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা। এতে দুর্গম জনপদের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবেন বলেও জানান তিনি।
খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের বিদ্যমান সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেবে এমনি প্রত্যাশা জেলাবাসীর।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৭
আরএ