পারিবারিক স্নেহবঞ্চিত প্রবীণদের ঠাঁই দিতে বাগেরহাটের মাঝিডাঙ্গা মৌজায় মাজার মুনিগঞ্জ সেতুর অ্যাপ্রোচ রোডে তৈরি করা হচ্ছে একটি বৃদ্ধাশ্রম। বৃদ্ধাশ্রমটি তৈরি করছে সাবিল গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড।
গত বছরের শেষদিকে বৃদ্ধাশ্রমটি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করবে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে।
বৃদ্ধাশ্রম মানে বৃদ্ধদের আশ্রয়স্থল হলেও বাগেরহাটের এ বৃদ্ধাশ্রমটি হবে ভিন্নধর্মী। স্বজনদের থেকে আলাদা হওয়া বৃদ্ধদের প্রয়োজনীয় সেবা ও আশ্রয়ের পাশাপাশি তাদের মধ্যে যদি কোনো আচরণগত ত্রুটি থাকে- তা সংশোধনের ব্যবস্থা করা হবে। একইসঙ্গে বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে রাখা সন্তানদের কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে বোঝানো হবে বাবা-মায়ের গুরুত্ব ও মর্যাদা। বোঝানো হবে যে বাবা-মা তিলে তিলে নিজেদের সবকিছু বিসর্জন দিয়েছেন, সন্তানকে মানুষ করার জন্য, সেই বাবা-মায়ের শেষ বয়সের ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম হওয়ার পরিণতি সম্পর্কেও। তাদের সন্তানেরাও একদিন তারা বৃদ্ধ হলে এভাবে আঁস্তাকুড়ে আবর্জনা ফেলার মতো করে ফেলে দিতে পারে, সে বিষয়ে জ্ঞান দেওয়া হবে।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল অসহায় মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এ বৃদ্ধাশ্রম।
সাবিল গ্রুপ ও নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ মো. আব্দুল মান্নান তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘মানুষ মানুষের জন্য’ ভেবে বাগেরহাট জেলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের যাদের কোনো মাথা গোজার ঠাঁই নেই বা দেখা-শোনার কেউ নেই- তাদের জন্য আমার এ উদ্যোগ। এলাকার পথে-ঘাটে, রাস্তার পাশে অনেক মানুষকে দেখা যায়, অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছেন। তাদের দেখলে আমার হৃদয়ে অনেক ব্যথা অনুভূত হয়, বাকরুদ্ধ হয়ে যাই, পথ চলতে কষ্ট হয়। দিন-রাত কাটে অনেক চিন্তা-ভাবনার মধ্যে’।
‘তারাওতো আমার মতোই মানুষ। তাদের পাশে দাঁড়ানো আমার নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব। আমাদের নবীজী (স.) যেভাবে অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করেছেন এবং আমাদেরকে যেভাবে করতে বলেছেন, সেদিকটি ভেবে চিন্তা করেছি যে, আমারও একটা কিছু করতে হবে। তাহলেই আমি মানসিকভাবে শান্তি পাবো’।
‘তাই বাগেরহাটে এ বৃদ্ধাশ্রমটি করছি। সকলের সহযোগিতায় আমি এটিকে একটি আদর্শ ও শান্তিপূর্ণ বৃদ্ধাশ্রমে পরিণত করবো’।
তিনি আরও বলেন, ‘সম্পূর্ণ বিনামূল্যে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে এখানে। এ বৃদ্ধাশ্রমে যারা আসবেন, তারা কখনোই পরিবার ও জনবিচ্ছিন্ন হবেন না। তাদেরকে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে সহযোগিতা করবো। বৃদ্ধদের ভালো রাখতে আধুনিক ও উন্নত বাসস্থান ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। তাদের আনন্দ বিনোদনের জন্যও থাকবে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। অবসর সময় কাটানোর জন্য থাকবে বিভিন্ন ধরনের পশু-পাখির সমারোহ, সঙ্গে ফল ও ফুলের বাগান’।
‘আশা করি, এ বৃদ্ধাশ্রমে যারা আসবেন এবং যাদেরকে এখানে স্থান দেওয়া হবে সবাইকে আল্লাহ শান্তিতে রাখবেন’।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাগেরহাটের মুনিগঞ্জ সেতু অ্যাপ্রোচ রোডের পাশে ১০ একর জমিতে তৈরি হচ্ছে এ বৃদ্ধাশ্রম। শ্রমিকরা মাটি ভরাটের কাজ করছেন।
অনেকেই দাঁড়িয়ে বৃদ্ধাশ্রমের সাইনবোর্ড ও শ্রমিকদের কাজ দেখছেন। প্রশংসা করছেন মহতি এ উদ্যোগের।
পূর্ব হাড়িখালী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ বলেন, ‘অবহেলিত বৃদ্ধেরা জীবনের শেষ দিনগুলো যেন একটু ভালোভাবে কাটাতে পারেন, সে উদ্যোগ নেওয়ায় সাবিল গ্রুপ ও নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ মো. আব্দুল মান্নান তালুকদারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি’।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৬
এমআরএম/এএসআর