শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে ঘুরে ঢাকা সিটির যানজট নিরসনে করণীয় কী? এ নিয়ে কথা হয় কয়েকজন সাধারণ নাগরিকের সঙ্গে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র মো. নুরুল ইসলাম তানিম বলছিলেন, ‘সারাবিশ্ব যখন গতিময় হয়ে ওঠছে।
যানজটের কথা যে নাগরিকরা বলছেন, সমাধানও যেনো তাদের জানা। কেবলই বাস্তবায়ন প্রয়োজন। অনেকগুলো সমাধানের কথা তারাই বললেন। যার মধ্যে উঠে এলো- রাস্তার প্রতিটি ক্রসিং এ যেনো সিগন্যাল না পড়ে তার ব্যবস্থা করা, রাস্তার ক্রসিংয়ে ইউলুপ তৈরি করা, গাড়িগুলোকে নির্দিষ্ট গতিসীমা মেনে চলতে বাধ্য করা, ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে অত্যাধুনিক গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা, স্কুলের বাচ্চাদের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের গাড়ি ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা, স্টপেজ মেনে গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা করা, যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং না করে প্রত্যেক বড় মার্কেট ও বাড়িতে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা, ফুটপাতে জনগণের হাটার ব্যবস্থা করা, শহরকে বিকেন্দ্রিকরণ করা বা শহর থেকে কিছু প্রতিষ্ঠান শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়া, ঢাকার আশপাশের নদীগুলো যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে রাস্তাগুলো ব্যবহার না করা বা রাজনৈতিক প্রোগ্রামের দিন সরকারি সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র জিল্লুর রহমান বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করে জনগণকে হাঁটার ব্যবস্থা করে দেওয়া, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধ করা, ট্রাফিক আইন মেনে চলা নিশ্চিত করলে যানজট কিছুটা হলেও কমবে বলে আমি আশা করি।
ভূঁইয়া একাডেমির গ্রন্থাগারিক সাহানা জাহান মনে করেন ব্যক্তিগত গাড়ির (প্রাইভেটকার) প্রতুলতা, ট্রাফিক আইন না মানা, স্কুল-কলেজের নিজস্ব পরিবহণ না থাকা, রাস্তাঘাট দীর্ঘমেয়াদে খোঁড়াখুঁড়ি করার কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
সমাধানের উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধ করে দ্বিতল বিশিষ্ট গাড়ির সংখ্যা বাড়ানো, ট্রাফিক আইন মেনে চলা, স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য নিজস্ব গাড়ির ব্যবস্থা করা, দীর্ঘমেয়াদে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করে প্রশাসনের সঙ্গে আন্ত সম্পর্ক রেখে কাজগুলো দ্রুত শেষ করা এবং ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া।
যানজট নিরসনে বনানী এলাকায় বসবাস করা অতিশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যাণ্ড টেকনোলজির ছাত্র এফ রাশেদুল পিয়াস বলেন, মেট্রোরেলপথ ব্যবহার করা, ঢাকার আশপাশের নদীগুলো যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা, ফুটপাতে জনগণের হাঁটার ব্যবস্থা করা, যত্রতত্র স্টপেজ পরিহার করা, সিএসজি চালিত ছোট যানবাহন এবং রিকশা চলাচলের জন্য আলাদা লেন তৈরি করা, দ্বিতল বিশিষ্ট গাড়ির সংখ্যা বাড়ানো, রাস্তা পারাপারের সময় ওভারব্রিজ ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলেই যানজট কমবে।
গুলিস্থান শপিং কম্পপ্লেক্সে মোবাইল এক্সেসরিজের ব্যবসায়ী নাজমুল মোল্লা বলেন, যানজট নিরসনে রিকশা ও ভ্যান গাড়ির জন্য আলাদা লেন তৈরি করতে হবে আর উল্টা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করতেই হবে।
প্রায় ২৫ বছর ধরে ঢাকায় গাড়ি চালান ইউনুস হাওলাদার। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, যেখানে রাস্তা ভাঙা সেখানেই যানজট লেগে থাকে তাই রাস্তার দুই পাশ পরিস্কার রাখা, রাস্তা পুরোটা যাতে ব্যবহার করা যায় তার ব্যবস্থা করা, বাস, প্রাইভেটকার আর সিএনজির জন্য যদি ঢাকার অর্ধেক রাস্তাও ব্যবহার করা নিশ্চিত করা যায় তাহলেও যানজট অনেকাংশে কমে যাবে বলে যোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে রমনা জোনের ট্রাফিক সার্জেন্ট একেএম সামছুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, মানুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা। কিন্তু সে হারে রাস্তা বাড়ছে না। তাই যানজটের মূল কারণ হচ্ছে মানুষ।
ঢাকায় আসলেই কাজ পেয়ে যাবো এই ধারণা পাল্টাতে হবে। আর যানজট কমাতে হলে ঢাকায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনতেই হবে, বলেন এই ট্রাফিক সার্জেন্ট।
বাংলাদেশ সময় : ১৯১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৭
এমএইচকে/এমএমকে