প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসন জারির পর সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে গ্রেফতারের জন্য তার বাসায় যাওয়া হয়। তখন বুট পায়ে সৈন্য আর বাবাকে নির্যাতনের শিকার হতে দেখে সহ্য করতে পারেনি ১০ বছরের শিশু সৌমেন।
রোববার (০৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে দশম জাতীয় সংসদের ১৪তম অধিবেশনে সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য (এমপি) সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ওপর আনা শোক প্রস্তাবের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আলোচনা শেষে শোক প্রস্তাবটি ভোটে দিলে তা সর্বসম্মতক্রমে গৃহীত হয়। এরপর সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ আসনে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। শোক প্রস্তাব গ্রহণ শেষে সাংবিধানিক রেওয়াজ অনুযায়ী দিনের অন্যান্য কার্যসূচি স্থগিত রেখে সংসদ অধিবেশন সোমবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আজ একটা পর্যায়ে এসেছে। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করেছি।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরতে গিয়ে সংসদ নেতা বলেন, রাজনৈতিক জীবনে অনেক জেল-জুলুম সহ্য করতে হয়েছে তাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ বর্তমানে এখানে থাকা অনেক মন্ত্রী-নেতাও আহত হন। কিন্তু হামলার পর সংসদে আমাদের একটি কথাও বলতে দেওয়া হয়নি বরং প্রধানমন্ত্রী হয়ে সংসদে খালেদা জিয়া যখন বলেন- আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে গ্রেনেড নিয়ে হামলা করেছি, তখন বিএনপির নেতারা হাত তালিও দিয়েছিলেন।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করেছি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাগ্রত করেছি। সেই সংগ্রাম ও সামগ্রিক কাজে আমাদের অন্যতম সঙ্গী ছিলেন বাবু সুরঞ্জিত।
গণপরিষদে বিরোধীদলের নেতা হিসেবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ভূমিকার কথা তুলে ধরতে গিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, জনগণকে আকর্ষণ করার এক চমৎকার গুণ ছিল তার মাঝে। গণপরিষদে সংবিধান রচনার সময় অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। তখন বিরোধীদলের সদস্য হিসেবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ভূমিকা ছিল ‘একাই একশ’। বঙ্গবন্ধু তাকে সবসময়ই উৎসাহ দিতেন। বারবার বলতে বলতে, উৎসাহ দিতে দিতেই বঙ্গবন্ধু মনে হয় সুরঞ্জিতকে সৃষ্টি করে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭০-এর নির্বাচনে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিরা একে একে সবাই চলে যাচ্ছেন। এখন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ইমাজ উদ্দিন প্রমাণিক এবং রাজিউদ্দিন রাজু- এই ছয়জন মাত্র রয়েছেন সংসদে। সবাই হারিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু নতুন প্রজন্মের যারা এমপি হয়ে কাজ করছেন, তাদের বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার উপযোগী করেই নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৭
এসএম/আইএ