নিত্যদিন এ দৃশ্যের দেখা মেলে দিনাজপুর শহরের মডার্ন মোড়ের ফুটপাতে বসা সিদ্দিকের বাদামের দোকানে। সিদ্দিক দিনাজপুর শহরের গোলাপবাগ এলাকার বাসিন্দা।
বাদামের এই ছোট্ট দোকানটিতে রয়েছেন দুইজন কর্মচারী। তাদের মধ্যে বিজয় বাদামের সঙ্গে দেওয়া ঝাল-লবণ কাগজে মোড়ান। তার দৈনিক বেতন ১শ’ ৫০ টাকা। অন্যজন মোজাম্মেল হোসেন, ক্রেতাদের বাদাম মেপে পলিথিনে ভরে দেন। তার দৈনিক বেতন ২শ’ টাকা।
সিদ্দিক নিজে অশিক্ষিত হলেও শিক্ষার গুরুত্ব অনুভব করেছেন। এর ফলশ্রুতিতে বাদাম বিক্রি করে স্বল্প আয়ে যেখানে তিন বেলা খেয়ে জীবন নির্বাহ করা কঠিন, সেই অবস্থাতেও এক-আধ বেলা না খেয়ে থেকেও সন্তানদের সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন।
সিদ্দিক হোসেন বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ৫০ থেকে ৬০ কেজি বাদাম বিক্রি করেন। বিক্রি শেষে কর্মচারীর বেতন, পারিবারিকসহ সব খরচ বাদ দিয়ে দিনে ৩-৪শ’ টাকা সঞ্চয় হয়।
সিদ্দিক ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার নাসিরাবাদ ইউনিয়নের চরদৌড় গ্রামের মৃত রমজান ফরাদীর ছেলে। স্বাধীনতার পর পিতার সঙ্গে অভিমান করে স্ত্রীকে নিয়ে দিনাজপুরে পাড়ি জমান। তখন থেকে সিদ্দিক মডার্ন মোড়ের ফুটপাতে বাদাম বিক্রি করেন। বাদাম বিক্রি করে দুই ছেলে ও এক মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার পাত্রের সঙ্গে। এক ছেলে উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যায়নরত ও অন্যজন পোলার আইসক্রীম কোম্পানির কর্মকর্তা।
বাদাম কিনতে আসা দিনাজপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক মাহাতাব উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, সিদ্দিক ভাই সাধারণ একজন বাদাম বিক্রেতা হলেও, অন্য ব্যবসায়ীদের তুলনায় পরিমাণে বেশি ও সঠিকভাবে ভেজে বাদাম দেওয়ায় তার এখানে ক্রেতারা ভিড় জমায়। তার কাছ থেকে দীর্ঘ ১৩ বছর থেকে বাদাম কিনছি। এখন পর্যন্ত কোনোদিন বাদামের মান নিয়ে নিজের মনেও প্রশ্ন করতে পারিনি। সিদ্দিক ভাইয়ের সবচেয়ে বড় গুণ হলো, ক্রেতাদের সঙ্গে সুন্দর ও মিষ্টি আচরণ এবং সারাক্ষণ হাস্যোজ্জ্বল মুখ, যা আমাদের মুগ্ধ করে।
সিদ্দিক ভাই শত যন্ত্রণায় থেকেও হাস্যোজ্জ্বল মুখ দিয়ে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা জয় করেন। তার কাছ থেকে সমাজের অন্য ব্যবসায়ীদের অনেক কিছুই শেখার রয়েছে বলে যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৭
এসএনএস/এসআরএস