সোমবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আতিকুরের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারি থানায়।
আত্মহত্যার আগে আতিক ‘শেষ কথা’ নামের চার পৃষ্ঠার একটি চিরকুট লিখে রেখে গেছেন। আতিকের ওই চিরকুটের প্রতিটি শব্দ ছিলো আবেগমাখা দুঃখ যন্ত্রণার কথা।
আতিকের লেখা সেই চিরকুটের প্রথম অংশ তুলে ধরা হলো বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য:-
‘শুরুতেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও দয়া প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ আমি জানি, আমি যা করতে চাচ্ছি তা মহা অন্যায় ও মহাপাপ। আল্লাহ তুমিতো অসীম দয়াময় ও করুনাময়। তুমি তোমার দয়া ও করুনা দিয়ে আমাকে ক্ষমা করে দিও। আল্লাহ আমাকে মাফ করে দিও। আল্লাহ আমি আর সহ্য করতে পারছিনা আমার অসুখের যন্ত্রণা। আজ কতদিন থেকে একটানা ভুগছি। জানিনা আর কতদিন ভুগতে হবে। যদি এইভাবে চলতে থাকে তাহলে আমি আমার পরিবার ও আমার নিজের স্বপ্ন পূরণ করব কিভাবে? আমার স্বপ্ন ছিল একজন আদর্শ মেজিস্ট্রেট হওয়ার। আমি জানি আমার ভেতর তুমি (আল্লাহ) সেই সামর্থ্য দিয়েছো। কিন্তু আমার অসুস্থতা দিন দিন আমাকে হতাশ করে তুলছে। আমি আমার চারদিকে শুধু অন্ধকার দেখি। আমার পরিবারকে নিঃস্ব করে যদি আমাকে বোঝা হয়ে থাকতে হয়, তাহলে আমি যে এত কষ্ট করে এতদূর পর্যন্ত আসলাম তার সফলতা কোথায়? আমি পাইনা একটু শান্তি। ’
আতিকের বন্ধুদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পেটের আইবিএস আলসারে ভুগছিলেন তিনি। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছলতা থাকায় তার বন্ধুরা মিলে বিভিন্নভাবে আতিকের চিকিৎসায় সহযোগিতা করেছেন। এমনকি ক্যাম্পাস, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ থেকেও আতিকের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে চিকিৎসা করানো হয় তাকে। আতিক বর্তমানে কিছুটা সুস্থ ছিলো। তবে হঠাৎ এভাবে বন্ধুর চলে যাওয়া মানতে পারছেন না তারা।
আতিকের বন্ধু মেসবাহ, জনি, কামরুজ্জামান, তিতুমির বাংলানিউজকে জানান, আতিক অনেক ভালো বন্ধু ছিল আমাদের। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ছিলো আতিক। আমরা ওর চিকিৎসার জন্য বিভিন্নভাবে অর্থ সংগ্রহ করেছি। চিকিৎসার পরে বর্তমানে কিছুটা সুস্থও ছিলো। কিন্তু আজ হঠাৎ করে কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে এভাবে চলে যাবে আমরা ভাবতেও পারিনি।
জানা যায়, বিকেল ৪টার দিকে রোকেয়া ভিলায় কয়েকজন শিক্ষার্থী আতিকের কক্ষে সিলিং এর সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। বিষয়টি তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমাকে জানালে প্রক্টর দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে কুষ্টিয়া সদর থানা পুলিশের সহায়তায় আতিকের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানালে তাৎক্ষণিক আমি কুষ্টিয়া পুলিশ প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে আতিকের মরদেহ উদ্ধার করি। বিষয়টি খবুই দুঃখজনক। প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী আমাদের সন্তানের মতো। এ ধরনের মৃত্যু সহ্যের মানসিক ক্ষমতা আমাদের নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৭ আপডেট: ২১৪৩ ঘণ্টা
এজি/এনটি/আরএ