বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি’র ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না আসার পেছনে কমিশনের ব্যর্থতা রয়েছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমাদের কোনো ব্যর্থতা নেই।
তিনি আরো বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সব ধরনের প্রচেষ্টার পরও সমঝোতায় পৌঁছাতে পারলো না দলগুলো। তাই যেসব দল গণতান্ত্রিক উপায়ে জনগণের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা বদলের পক্ষে ছিলো, তাদের নিয়ে শেষ মুহূর্তে এসে নির্বাচন করতে হয়েছে। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় এ ছাড়া আমাদের কাছে আর কোনো পথ খোলা ছিলো না। ’
কাজী রকিবউদ্দীন বলেন, যেসব দল নির্বাচনে আসেনি, তারা নির্বাচনকে ভণ্ডুল করতে নানা প্রচেষ্টা চালিয়েছে। যে সহিংসতার সৃষ্টি করেছিলো তার মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করা যে কত দুষ্কর ছিলো, তা খুব কম লোক অনুধাবন করতে পারবেন।
ওই সময় যদি নির্বাচন না করা যেতো, তাহলে দেশে অসাংবিধানিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। সেই মুহূর্তে আমরা নির্বাচনটা করেছি বলেই দেশে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আমাদের মেয়াদে আমরা একটি সংসদ নির্বাচন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনসহ ৭ হাজার ৪০৭টির বেশি নির্বাচন সম্পন্ন করেছি। ছয়টি সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সে সময় বিরোধী দলীয় নেতারা আমার সঙ্গে দেখা করে ধন্যবাদ দিয়েছেন, যোগ করেন তিনি।
বিদায়ী সিইসি আরও বলেন, সংসদ নির্বাচনও পরবর্তী সময়ে নির্বাচনগুলোতে যে সহিংসতাগুলো হয়েছে, সেগুলো রাজনৈতিক কারণে। গণতান্ত্রিক চর্চাটা আমাদের দেশে সেভাবে নেই, কেননা বারবার কালো থাবা এসে পড়েছে। ভারতের মতো গণতান্ত্রিক চর্চা এখানে থাকলে আমাদের নির্বাচনেও সহিংসতা অনেক কমে আসতো। নতুন কমিশন ইতোমধ্যে নিয়োগ পেয়েছে। তাদের জন্য আমার কোনো পরামর্শ নেই। তবে আশা করবো আগামীতে তারা সফলভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে।
দশম সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ইতিহাসে বিরল, একে কি সুষ্ঠু নির্বাচন বলা যায়-এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা আইনেই আছে। এছাড়া নির্বাচনে ইতিহাসে এটাই প্রথম ঘটনা নয়, ১৯২০ সালের নির্বাচনে এর চেয়েও বেশি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া এটা পৃথিবীর সব দেশেই এমনকি উন্নত দেশগুলোতেও হয়।
এ সময় ইসি’র সফলতা তুলে ধরেন তিনি। সিইসি বলেন, আমরা পাঁচ বছর মেয়াদে স্মার্টকার্ড দিয়েছি, নতুন ভবন উদ্বোধন করেছি, ভোটারতালিকা হালনাগাদ করেছি। এছাড়া ছিটমহলবাসীদের ভোটার করেছি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা উপজেলায় নিয়ে যেতে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ করেছি। রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মতামত নিয়ে সংসদীয় আসনের সীমানা পুর্ননির্ধারণ ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করেছি। তাদের পরামর্শে সুষ্ঠু কাজ করতে আমাদের সহজ হয়েছে।
নির্বাচনের সময় যারা আহত-নিহত হয়েছেন, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেছেন, তাদের আত্মদানের কারণেই দেশে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ইদানিং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনেক ইতিবাচক বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আশা করি, দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়বে।
“একটি নির্বাচন কখনও লাথি মেরে, বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে সুষ্ঠু করা যায় না। এ জন্য গণতন্ত্রিক চর্চার উন্নয়ন দরকার”।
রকিব কমিশনের সময় নির্বাচন ব্যবস্থা দুর্বল হয়েছে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে বিদায়ী সিইসি বলেন, মোটেই আমরা দুর্বল অবস্থায় নিয়ে যাইনি। আমাদের দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক যে অবস্থা, সহিংসতার মাত্রা... প্রতিবেশী দেশ ভারতেও এমন।
ইতিহাসে রকিব কমিশনের স্থান কোথায় হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী রকিব বলেন, ইতিহাস একদিনে রচনা হয় না। আর এটা ভবিষ্যতই বলবে। মূল্যায়নটা নিজেরা না করে বরং বাইরে থেকে হলেই ভালো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ, জাবেদ আলী ও মো. শাহ নেওয়াজ, ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান, জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে যখন সিইসি ওঠে যাচ্ছিলেন তখন নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আমরা সবাই রাজা। ২০১৩ সালে সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা ‘বর্তমান কমিশনের মেরুদণ্ড নেই’ এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমের সামনে তার চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়িয়ে মেরুদণ্ড দেখিয়েছিলেন জাবেদ আলী। তিনি বলেছিলেন- ‘মেরুদণ্ড আছে এবং সোজাই আছে’। দিনটি ছিলো ২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রকিব কমিশনের শেষ কার্যদিবস ছিলো। তবে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ ২০১২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ায় তিনি আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্বীয় পদেই থাকছেন। এ সময় তিনি রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত থাকলে দেবেন।
এদিকে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ কেএম নুরুল হুদাকে সিইসি করে নতুন পাঁচ সদস্যের নতুন কমিশন গত ৬ ফেব্রুয়ারি গঠন করেছেন। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি নতুন কমিশন শপথ নিয়ে দায়িত্ব নেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৭/ আপডেট: ২০৪৮ ঘণ্টা.
ইইউডি/এটি