এছাড়া এ মামলায় অজ্ঞাত আরও সাত-আটজনকে আসামি করা হয়েছে।
বুধবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে ভিকটিম আসমা বেগমের স্বামী ফজলু বিশ্বাস বাদী হয়ে নাটোর সিনিয়র জুডিশিয়াল আমলি আদালত-২ এর সামসুল আল আমিনের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
এসময় বিচারক ঘটনার ভিকটিম এবং বাদীকে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) স্বশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী সার্জন ডা. এম এ হান্নান, নাটোর জনসেবা হাসপাতালের মালিক ডা. আমিরুল ইসলাম, পরিচালক রফিকুল ইসলাম ও হাসপাতালের অজ্ঞানকারী চিকিৎসক ডা. এস বি হালদার।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত দেড় বছর আগে সিংড়া উপজেলার ছোট চৌগ্রাম গ্রামের ফজলু বিশ্বাসের স্ত্রী আসমা বেগম (৪৮) পেটে ব্যথা অনুভব করলে ২০১৫ সালের ১০মে শহরের মাদ্রাসা মোড়ের জনসেবা হাসপাতালে নিয়ে যায় তার স্বজনরা।
সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য জনসেবা হাসপাতালের সনোলজিস্ট ডা. আশিকুর রহমান আসমার আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে দু’টি কিডনি স্বাভাবিক ও সুস্থ রয়েছে মর্মে রিপোর্ট দেন। পরে আবারও একই বছরের ৩০মে রাজশাহীর লক্ষ্মীপুরে গ্রিন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি স্বাভাবিক এবং সুস্থের রিপোর্ট দেন।
কিছুদিন পরে আসমা অসুস্থ বোধ করলে জনসেবা হাসপাতালের ডা. এম এ হান্নান তাকে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। পরে ২০১৫ সালের ১২ জুন রাত ৮টার দিকে আসমার পিত্ত থলিতে পাথর অপারেশন করেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগী সহকারী সার্জন ডা. এম এ হান্নান।
মামলায় আরও বলা হয়, আসমার অপারেশনের পর কিছুতেই তিনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেনি। বরং দিন দিন আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আবারও জনসেবা হাসপাতালে নিয়ে যান।
সেখানে চিকিৎসক সনোলজিস্ট ডা. এ বি সিদ্দিক আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে রিপোর্ট দেন ডান কিডনি না থাকার বিষয়টি। পরে আবারও বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য শহরের আইডিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কেয়ার হাসপাতাল এবং সর্বশেষ বগুড়ার পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় একই ফলাফল আসে।
কিন্তু বিষয়টি গত ৩ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্ত ডাক্তারসহ অন্যদের জানানো হলে তারা উল্টো হুমকি ও বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য চাপ দিতে থাকে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট বকুল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আদালত মামলাটি পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। যার কারণে সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ভিকটিম, মামলার বাদীকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ স্বশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য বিচারক নির্দেশ দিয়েছে।
মামলার বাদী ফজলু বিশ্বাস বাংলানিউজকে জানান, তার স্ত্রী আসমাকে হত্যা করার জন্য এবং উচ্চ মূল্যে কিডনি বিক্রির জন্য চিকিৎসক, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডান কিডনি সরিয়েছেন। অভিযুক্তদের উপযুক্ত শাস্তির জন্য আদালতের দারস্ত হয়েছেন তিনি।
মামলার বিষয়ে জনসেবা হাসপাতালের পরিচালক রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আদালত যা করবে সেটাই তারা মেনে নিবেন।
এদিকে, পুলিশ হেফাজতে রোগীকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বোর্ডে হাজিরের জন্য জেলা পুলিশ সুপার বরাবার আবেদন করেছেন অভিযুক্ত চিকিৎসক, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং বিএমএ নেতারা।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) জেলা শাখার সভাপতি ডা. এস এম জাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ঘটনার দিন ৩ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) ভিকটিমের স্বামী উচ্চতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের পক্ষ থেকে ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা আসেনি। এ অবস্থায় রোগীকে পুলিশি হেফাজতে মেডিকেল বোর্ডে হাজির হওয়ার জন্য জেলা পুলিশের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
নাটোরের পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বাংলানিউজকে জানান, এ ধরনের কোনও অভিযোগ তার কাছে আসেনি। পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৭
আরবি/এসএসইচ