কূপটি তৈরিতে লোহার অ্যাঙেল, খুঁটি, বাঁশ, নাটবল্টুসহ আনুসাঙ্গিক আরো অনেক কিছুর ব্যবহার রয়েছে। বড় সড় জায়গা নিয়ে বানানো এই মৃত্যুকূপে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল নিয়ে খেলা দেখানো হয়।
খেলাটি যখন চলে তখন দর্শককে তা দমবন্ধ করে দেখতে হয়। চালক অত্যন্ত দক্ষভাবে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে পুরো দশ মিনিট মৃত্যুকূপে গাড়ির ঘুর্ণি ছোটান। এ জন্যই বলা হয় ‘মৃত্যুকুপে দশ মিনিট’।
বগুড়ার গাবতলীতে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় এ খেলার আয়োজন করা হয়েছে।
বুধবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মেলার মাঠে দেখা যায়, মৃত্যুকূপের মাঝখানে দু’টি রঙ চটা টোপ খাওয়া মোটরসাইকেল ও একটি প্রাইভেটকার। দশ মিনিটের এ খেলা দেখতে ৩০ টাকায় টিকেট কাটতে হয়।
এরপর দর্শকরা কাঠের সিঁড়ি বেয়ে মৃত্যুকূপের উপরে চারপাশে কাঠের তৈরি ছাদের মত অংশে দাঁড়িয়ে যান। সময় হওয়া মাত্র চালক শামীম রেজা প্রথমে মোটরসাইকেল ওঠে পড়েন। মাইকে ঘোষণা দেওয়া মাত্র মোটরসাইকেল চালু করে সেই মৃত্যুকূপের চারপাশে ঘুরতে থাকেন।
কখনো কখনো এক হাত ছেড়ে কখনোবা দু’হাত ছেড়ে নানা কসরত দেখাতে থাকেন। ফটফট শব্দ তুলে মোটরসাইকেল ঘুর্ণি খেতে থাকে তীব্র গতিতে। কিছুক্ষণ মোটরসাইকেল চালানোর পর এবার শুরু হয় প্রাইভেটকারের ঘূর্ণি। একইভাবে মৃত্যুকূপ দাপিয়ে বেড়ান শামীম রেজা। বেপরোয়া গাড়ি চালানোটাই দর্শকদের আনন্দ খোড়াক।
শামীম রেজা জয়পুরহাটের সদর উপজেলা থেকে এসেছেন। ১১ বছর ধরে জীবনবাজী রাখা এই খেলা তিনি খেলে আসছেন বিভিন্ন মেলা আর উৎসব আয়োজনে। এ দিয়েই জোটে তার ও পরিবারের জীবিকা।
আলাপচারিতায় শামীম রেজা বাংলানিউজকে জানান, এটা কোন যাদু বা মন্ত্র বিদ্যা নয়। স্রেফ দক্ষতা। চাচাতো ভাই সম্রাট মাহফুজের কাছ থেকে তিনি এ খেলা রপ্ত করেছেন। এ জন্য তাকে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়েছে। ভয়কে করতে হয়েছে জয়।
তিনি আরো জানান, জীবনকে অনেকটা হাতের মুঠোয় নিয়ে এ খেলা খেলতে হয়। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটি খেলা। পুরো বিষয়টি দক্ষতা ও ক্ষিপ্রতার ওপর নির্ভর করে।
দুর্ঘটনা ঘটে কি না? এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার ১১ বছর খেলোয়াড় জীবনে তেমন কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। সামান্য যেটুকু সমস্যা হয়েছে তা গাড়ির যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, ফ্রেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৭
এমবিএইচ/