আশ্চর্যের বিষয় - ‘জংসন’ নামের সার্থকতা আজ হারিয়েছে ‘শায়েস্তাগঞ্জ জংসন’ রেলওয়ে স্টেশনটি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য মতে, কমপক্ষে ৩দিকে ৩টি রেললাইন পরিচালিত হলে সেই স্টেশনটি ‘জংসন’ বলে বিবেচিত হবে।
স্থায়ী স্টেশনমাস্টারসহ অন্যান্য লোকবল সংকটের কারণে পূর্বাঞ্চল রেলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন শায়েস্তাগঞ্জ জংসন আজ নানা সমস্যায় জর্জরিত।
স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, এক বছর আগে জাহাঙ্গীর আলম (গ্রেড-১) শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনে বদলি হওয়ার পর উনার জায়গায় নতুন কোনো স্থায়ী স্টেশন মাস্টার আসেননি। শাহজিবাজার রেলওয়ে স্টেশন বন্ধ ঘোষণা করে শাহজিবাজারের স্টেশনমাস্টার মোয়াজ্জেল হককে (গ্রেড-৪) শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনে নিয়ে আসা হয়।
ঠিক একইভাবে, লংলা রেলওয়ে স্টেশন বন্ধ ঘোষণা করে লংলা স্টেশনমাস্টার জামাল উদ্দিনকেও (গ্রেড-৪) শায়েস্তাগঞ্জ জংসনে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছে। অপর অবসরপ্রাপ্ত স্টেশনমাস্টার তফিজ উদ্দিনকে (গ্রেড-৩) শায়েস্থাগঞ্জ জংসনে ‘চুক্তিভিত্তিক’ ভারপ্রাপ্ত স্টেশনমাস্টার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। চলতি মাসের ২৪ ফেব্রুয়ারি তার এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ শেষ হবে।
বুধবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সরেজমিনে শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন ঘুরে নানা সমস্যা চোখে পড়েছে। যাত্রীদের বসার আসনগুলো ভাঙা। যেখানে-সেখানে খাবারের পরিত্যাক্ত অংশ বা আবর্জনা পড়ে রয়েছে। বড় বড় শুভেচ্ছা আর শ্রদ্ধার রাজনৈতিক ব্যানারে ঢেকে গেছে রেলওয়ে স্টেশনের আপন সৌন্দর্য।
এছাড়াও বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হলো - স্টেশনসংলগ্ন এলাকায় মাইক লাগিয়ে উচ্চ:স্বরে সভা-সমাবেশ করার ফলে কর্তব্যরত স্টেশনমাস্টারকে পার্শ্ববর্তী স্টেশনগুলো থেকে ট্রেনের নানান খবরাখবর আদান-প্রদানে প্রচন্ড সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টিসি (টিকেট কালেক্টর) পদে একজন লোকও নিয়োগ দেয়া হয়নি। ওয়েটিং রুমে (যাত্রীদের বসার ঘর) দু’জন বেয়ারার এর পদ থাকলেও একজনকেও নিয়োগ দেয়া হয়নি।
শাহজিবাজার রেলওয়ে স্টেশন বন্ধ থাকার কারণে ‘ব্লক অপারেশন’ (কম্পিউটার সিগন্যালিং) সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনের স্টেশনমাস্টাররা ল্যান্ড ফোন কিংবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ট্রেন আসা-যাওয়া পাস দিয়ে থাকে।
শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন থেকে ৪টি লেভেলক্রসিং গেট কন্ট্রোল করা হয়। এগুলো হলো বিশ্বরোডের অলিপুর গেট, লস্করপুর গেট এবং কলেজ গেট ও হবিগঞ্জ গেট।
শায়েস্তাগঞ্জ জংশন স্টেশনের কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার মো. জামাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এই স্টেশনের উপর দিয়ে প্রতিদিন আন্তঃনগর ও লোকাল মিলে আপ এবং ডাউনে প্রায় ২০টি ট্রেন আসা-যাওয়া করে। দৈনিক প্রায় ৮০ হাজার টাকার টিকেট বিক্রি হয়ে থাকে। প্রায় এক বছর ধরে এ স্টেশনটি অভিভাবকহীন অবস্থায় রয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের কোনো সাপ্তাহিক এবং বাৎসরিক ছুটি নেই। ঈদের দিনেও দায়িত্ব পালন করতে হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও), ঢাকা এর মো. মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, শায়েস্তাগঞ্জ জং এর বিষয়টি আমাদেরও নজরে আছে। কিছু দিনের মধ্যে আমাদের রেল বিভাগের স্টেশন মাস্টারদের পদোন্নতি হবে। তখন গ্রেড-১ একজনকে শায়েস্তাগঞ্জ জংশনে নিয়োগ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৭
বিবিবি/বিএস