ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ঘুষে মেলে ভাতার কার্ড, নইলে না!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৭
ঘুষে মেলে ভাতার কার্ড, নইলে না! ঘুষে মেলে ভাতার কার্ড, নইলে না/ছবি-আরিফ জাহান

সোনাতলার ছোট বালুয়া গ্রাম ঘুরে: দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শরিফুল ইসলাম। ভাতার কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে প্রায় ৩ বছর আগে তিনবার তার ছবি নেন ইউপি মেম্বার সাজু মিয়া। সেই থেকে মেম্বারের পেছনে অনেক ঘুরেছেন তিনি। কিন্তু আজও মেলাতে পারেননি প্রতিবন্ধী কার্ড।

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার বালুয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ছোট বালুয়া গ্রামের শরিফুলের অভিযোগ, ‘আমি অন্ধ মানুষ। অভাবের সংসার।

তাই মেম্বার সাহেব আমার কাছে সরাসরি ঘুষ চাইতে পারেন নাই। তবে ঘোরানোর ধরন দেখে বারবার ঘুষের টাকার কথাই মনে পড়ছে। ঘুষ দিতে পারলে হয়তো এতো ঘুরতে হতো না, স্বল্প সময়ে কার্ডও মিলে যেতো’। এ অভিযোগ শুধু শরিফুলের একার নয়, গ্রামটির দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বেশিরভাগ মানুষের। ঘুষে মেলে ভাতার কার্ড, নইলে না!তাদের অভিযোগ, ভাতার কার্ড পেতে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে বা তদবির লাগে। কিন্তু ঘুষ দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় কার্ডও মেলে না। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গ্রামটিতে শিশু-কিশোর ও নারী-পুরুষ মিলে ১৬ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রয়েছেন। তাদের মধ্যে এ পর্যন্ত বিভিন্নভাবে চেষ্টা তদবির করে ৬ জন ভাতার কার্ড মেলাতে পেরেছেন। তাদের মধ্যে আসাদ জামান মণ্ডল ও নুরুল ইসলাম মণ্ডলের বয়স্ক এবং ইউনুস আলী, মোশারফ হোসেন, মোর্শেদা ও সাহেব আলীর প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড রয়েছে। তবে কে কাকে ধরে কতো টাকা ঘুষ দিয়ে এসব কার্ড পেয়েছেন, তা বলতে অস্বীকৃতি জানান তারা। বাকিরা শত চেষ্টা করেও সংশ্লিষ্টদের চাহিদা পূরণ করতে না পারায় এখনো ভাতার কার্ড মেলাতে পারেননি। অনেকেই তাই সংশ্লিষ্টদের পেছনে ঘোরা ছেড়ে দিয়ে জীবিকার সন্ধানে মানুষের দ্বারে দ্বারে ছুটে চলেছেন। বালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য অত্যন্ত কম কার্ড বরাদ্দ আসে। সব গ্রামে কম-বেশি দিতে হয়। এ অবস্থায় ইচ্ছে থাকলেও সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ভাতার কার্ড নিয়ে কোনো রকম অনিয়ম করিনি’। তবে আগে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এসব কার্ড দেওয়া হতো বলে স্বীকার করেন তিনি। মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বার সাজু মিয়ার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। উপজেলা সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তা সামিউল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু ফোন রিসিভ না করায় এ সম্পর্কে তার বক্তব্যও পাওয়া যায়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মির্জা শাকিলা দিল হাছিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘ছোট বালুয়া গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষদের সম্পর্কে আমার জানা ছিল না। তাদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়ার ব্যবস্থা করবো। অনিয়মের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে’। সুযোগ আসা মাত্র অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের ভাতার কার্ড করে দেওয়ার কথাও জানান ইউএনও। বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৭ এমবিএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।