‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনই লাগেজ হারানোর একশ’র মতো অভিযোগ আসে। আর পুরনো অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিদিন প্রায় দেড়শ লাগেজ ফিরিয়ে দেওয়া হয় যাত্রীদের।
এ তো গেল লাগেজ হারানো, ফিরিয়ে দেওয়া ও ক্ষতিপূরণ দেবার হিসেব। এছাড়া ভিন্ন হিসেব রয়েছে ফিরিয়ে দেওয়া মালামালের। অনেক সময় যাত্রীর খোয়া যাওয়া লাগেজে তেমন কিছুই থাকে না। কিন্তু অভিযোগ করার সময় খোয়া যাওয়া লাগেজে ‘দামি মালামাল ছিল’ বলে মিথ্যা দাবি পেশ করে প্রাপ্যের বেশি ক্ষতিপূরণ আদায় করেন অনেকে। আর করে এই সংঘবদ্ধ চক্রটির সহায়তায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই চক্র যাত্রীবেশে লাগেজ চুরির জন্য তৎপর থাকে। এর সদস্যরা কেটারিং গেট দিয়ে বেল্টের উপর দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। ভেতরে ঢুকলেই ক্যামেরার আওতার বাইরে চলে যাওয়া যায়। সঙ্গে থাকে ভুয়া পাসপোর্ট, বিমানের টিকেট ও হ্যান্ডব্যাগ। শার্ট ও বেল্টের নিচে লুকিয়ে রাখে তসবি ও টুপি। দ্রুত টয়লেটে গিয়ে পোশাক পরিবর্তন করে মাথায় টুপি পরে তসবি গুণতে শুরু করে।
এক সময় লাগেজটানা বেল্টের কাছে যায়। যে লাগেজটি অনেক বার ঘোরার পরেও কেউ তুলে নেয় না, সেই লাগেজের প্রতিই থাকে নজর। এক ফাঁকে লাগেজটি নামিয়ে নিজের কাছেই রাখে। পরে ইমেগ্রেশন থেকে কৌশলে সটকে পড়ে।
পুলিশ ও গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, তিন কৌশলে লাগেজ চুরি করে থাকে এই চক্রটি। কখনো বিমানের কেটারিংয়ের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করে যাত্রী সেজে। কখনো বিদেশফেরত যাত্রীবেশে। কখনো স্টিকার পরিবর্তন করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিদেশ থেকে ফেরা অনেক যাত্রীর লাগেজে অনেক সময় মূল্যবান তেমন কিছুই থাকে না। অথচ খোয়া যাওয়ার পর এই চক্রের লোকদের পরামর্শমতো ‘মূল্যবান মালামাল ছিল’ বলে প্রাপ্যের অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়। তবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে এখন আর ততোটা সুবিধা করা যাচ্ছে না।
এই চক্রের সঙ্গে কাজ করে জয়নাল, মান্নান ও ইমদাদ নামের তিন ব্যক্তি। জয়নাল বিমানের কর্মচারি। চুরির অপরাধে চাকুরিচ্যুত। তার সহযোগী মান্নান ফুটপাতে ব্যবসা করে। আর ইমদাদ এক সময় চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট একটি অফিসে চাকুরি করত। মান্নান ও জয়নালের বাড়ি নোয়াখালীতে। ইমদাদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
লাগেজ হারানো যাত্রী সৌদি আরব প্রবাসী শ্যামল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘গত বছর নভেম্বরে দেশে ফেরার সময় আমার একটি লাগেজ খোয়া যায়। পরে আমি বিমানের লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড বিভাগে আবেদন করেও সেটি আর ফেরত পাইনি। তবে তাৎক্ষণিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।
লাগেজ সিন্ডিকেটের শিকার যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আবু সাইদ-সেঁজুতি দম্পতি। তারা খোয়া যাওয়া লাগেজের খোঁজে বিমানবন্দরে এসেছেন। এই দম্পতি বাংলানিউজকে জানান, গত ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরেন তারা। খোয়া যাওয়া লাগেজের জন্য লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড বিভাগে যোগাযোগের জন্য এসেছেন।
লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, এই সিন্ডিকেটের হাত থেকে রেহাই পাননি চিত্রনায়িকা মৌসুমীও। তার লাগেজের ভেতরে স্যুটিংয়ের জন্য কেনা বিভিন্ন কাপড় ও কসমেটিকস ছিল। লাগেজ ফিরে না পেয়ে তিনি ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন।
এ বিষয়ে এপিবিএন’র সিনিয়র এ এসপি জিয়াউল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রতিদিনই আমরা তিন থেকে চারটির মত লাগেজ পেয়ে থাকি। লাগেজ পাওয়ার পর যদি যাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা না যায়, তাহলে তা লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড বিভাগে জমা দিই। এছাড়া লাগেজ সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত কেউ ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট থানাপুলিশের কাছে সোপর্দ করি। বেশ কয়েক বছর আগে লাগেজ সিন্ডিকেটের মূল হোতা জয়নাল ধরা পড়েছিল এবিবিএন’র হাতে।
কাস্টমসের সহকারী কমিশনার আহসানুল কবির বাংলানিউজকে জানান,জয়নাল ধরা পড়ার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
এ বিষয়ে বিমানবন্দর থানার ওসি নূর-এ আজম বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিমানবন্দর থানায় আমি কাজ করছি প্রায় ৮ মাস হলো। জয়নাল, মান্নান ও ইমদাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকতে পারে। তবে এ বিষয়ে আমি অবগত নই। যে-ই ধরা পড়ুক, তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৭
আরএটি/জেএম