ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

১৫ বছর ধরে উত্তরায় চলছে ‘গ্যাং কালচার’

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৭
১৫ বছর ধরে উত্তরায় চলছে ‘গ্যাং কালচার’

ঢাকা: রাজধানীর উত্তরায় উঠতি বয়সি কিশোরদের নিয়ে ‘গ্যাং কালচার’ শুরু হয় ২০০১ সালে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে উত্তরা এলাকায় কমপক্ষে ৩০টির মত ছোট বড় গ্যাং বা কিশোর সন্ত্রাসীগ্রুপের সন্ধান পাওয়া গেছে। এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে এসব গ্রুপের সদস্যরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত।

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, শুরু থেকে সক্রিয় গ্রুপগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল কাঁকড়া গ্রুপ, জি ইউনিট গ্রুপ, ব্ল্যাক রোজ গ্রুপ, রনো গ্রুপ, কে নাইট গ্রুপ, ফিফটিন গ্রুপ, ডিসকো বয়েজ গ্রুপ, নাইনস্টার গ্রুপ, নাইন এম এম বয়েজ গ্রুপ, পোটলাবাবু গ্রুপ, সুজন গ্রুপ, আলতাফ গ্রুপ, ক্যাসল বয়েজ গ্রুপ, ভাইপার গ্রুপ ইত্যাদি। এসব গ্রুপে প্রায় শতাধিক সদস্য সক্রিয়।

এরা সবাই কিশোর-বয়সি।

শুধু তা-ই নয়, ২০১৫ সালে গ্যাংগুলো সংগঠিত-একীভূত হয়ে বৃহৎ আকারে “ফিফটিন গ্রুপ” নামে আত্মপ্রকাশ করে। পরবর্তী সময়ে এদের নিজেদের মধ্যেই শুরু হয় ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, রেষারেষি ও সহিংস কোন্দল। এই অন্তর্কোন্দলের ফলে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে যায় এরা। এগুলো হল ডিস্কো বয়েজ ও এর সহযোগী (বিগবস), নাইন স্টার এবং নাইন এমএম গ্রুপ।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুসন্ধানে এসব গ্যাং ও গ্রুপের তথ্য বেরিয়ে আসে।

চলতি বছরেই এমন দুইটি গ্রুপের অন্তর্কোন্দলের জেরে খুন হয় আদনান কবির নামের ১৩ বয়সী এক কিশোর। গত ০৬ জানুয়ারি উত্তরা ১৩ নং সেক্টর, ১৭ নং রোডের ১৫ নং বাড়ির সামনে কুপিয়ে খুন করা হয় এই কিশোরকে। নিহত আদনানের বাবা কবির হোসেন উওরা পশ্চিম থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেন। মঙ্গলবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) এ খুনের সাথে জড়িত ডিসকো বয়েজ ও বিগবস গ্রুপের ৮ সদস্যকে আটক করে র‌্যাব। এর আগে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ এই মামলার ৩ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছিল।

র‌্যাব জানায়, এসব গ্রুপের সদস্যদের কেউ কেউ উত্তরা এলাকার বিভিন্ন নামিদামি স্কুল-কলেজের ছাত্র। এসব গ্রুপে ছাত্র-নয়-এমন বখাটেও রয়েছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, স্কুল-কলেজে র‌্যাগিং করা, শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, ছিনতাই, উচ্চ শব্দ করে মোটরসাইকেল বা গাড়ি চালিয়ে জনমনে আতংক সৃষ্টি করা, অশ্লীল ভিডিও শেয়ার করা এদের নিত্যদিনের কাজ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এদের প্রত্যেক গ্যাং-এর নিজস্ব লোগো রয়েছে। এলাকার দেয়ালে দেয়ালে এসব লোগো এঁকে এরা নিজস্ব সীমানা চিহ্নিত করে থাকে। একেক এলাকায় একেক গ্রুপের ‘শাসন’ ও দৌরাত্ম্য। শুধু তাই নয়, নিজেদের গ্যংয়ের বিভিন্ন অপকর্মের কথা গর্বভরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশও করতো এসব গ্রুপের সদস্যরা।

২০০৯ সালে সেতুর নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে ডিস্কো বয়েজ গ্রুপ। উত্তরা এলাকায় এই গ্রুপের বেশ আধিপত্য রয়েছে।

অন্যদিকে,২০১৬ সালের শুরুর দিকে ছোটনের নেতৃত্বে ডিস্কো গ্রুপের সহযোগী গ্রুপ হিসেবে বিগবস্ গ্রুপের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এরা মূলত উত্তরার আব্দুল্লাহপুর, বেড়িবাঁধ, কোটবাড়ি, ফায়দাবাদ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার শুরু করে।

এদিকে, এদের প্রতিদ্বন্দ্বী নাইন স্টার গ্যাং গ্রুপ  প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০১৩ সালের দিকে। এই গ্রুপের নেতৃত্ব দেয় তালাচাবি রাজু। এই গ্যাংটি উত্তরার ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর  সেক্টরসহ, খালপাড়, দিয়াবাড়ি এবং বাউনিয়া এলাকায় আধিপত্য খাটিয়ে থোকে। প্রতিটি গ্যাংয়েই ২০ থেকে ২৫ জন করে সদস্য রয়েছে।

এ বিষয়ে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডর মুফতি মাহমুদ খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘ইঁচড়েপাকা, বিপথগামী কিশোরদের এসব গ্যাং পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করে এমনসব কর্মকান্ডে যারাই জড়াবে তাদেরকেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ’

কিশোর অপরাধী ও অপরাধচক্রের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বাবা-মাদেরও নজর দেওয়া উচিত। ছেলে কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে কী করছে এ ব্যাপারে বাবা-মা’দের আরো মনোযোগী হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

‘এতোদিন ধরে এরা অপকর্ম করে এলাকায় দাপিয়ে বেড়ালেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসেনি কেন?’ –মর্মে তার কাছে প্রশ্ন রাখা হলে জবাবে তিনি বলেন, ‘পাড়ামহল্লায় এমন ধরনের ‘ভাইয়া-গ্রুপ’ যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। তবে বড় ধরনের কোনো অপরাধমূলক কর্মকান্ডে আগেকার গ্রুপগুলোর ততোটা অংশগ্রহণ ছিল না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৭
এসজেএ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।