বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জাতীয় সংসদের অধিবেশনের শুরুতেই খসড়া আইনটি পরীক্ষা করে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপন করেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি রেবেকা মমিন।
বিভিন্ন মহলের আপত্তির মধ্যেই ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ মেয়েদের বিয়ের বয়সে ছাড়ের বিধান রেখে আলোচিত ‘বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল-২০১৬’ সংসদে ওঠে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর।
সংসদে উত্থাপিত বিলে বিশেষ বিধান সম্পর্কে বলা হয়, এই আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাক্রমে এবং বাবা-মার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিয়ে সম্পাদিত হইলে তা এ আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হবে না।
সংসদীয় কমিটি বিশেষ বিধানে ‘...কোনো নারীর’ শব্দটি বাদ দিয়ে শুধু ‘অপ্রাপ্ত বয়স্ক’ এবং ‘মা-বাবার সঙ্গে ‘প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের’ সম্মতির শব্দটি যোগ করেছে।
অর্থাৎ বিলটি পাসের সময় সংসদে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করা হলে, নারীর পাশাপাশি পুরুষের ক্ষেত্রেও বিশেষ প্রেক্ষাপটের বিধান প্রযোজ্য হবে। একই সঙ্গে ওই বিধানে মা-বাবা বা যেখানে প্রয়োজন সেখানে অভিভাবকের সম্মতির বিধান রাখা যুক্ত হবে।
এছাড়া ‘বিশেষ প্রেক্ষাপট’ বিধি দ্বারা নির্ধারিত রাখারও সুপারিশও করা হয়েছে, যা সংসদে উত্থাপিত খসড়া আইনে উল্লেখ ছিলো না।
ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ‘চাইল্ড ম্যারেজ রেসট্রেইন্ট অ্যাক্ট-১৯২৯’ বাতিল করে নতুন আইন করতে বিলটি সংসদে তোলা হয়ে। প্রস্তাবিত আইনে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স আগের মতো ১৮ বছর রাখা হলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রাখা হয়।
এই বিধানের সুযোগে বাংলাদেশে বাল্য বিয়ে উৎসাহিত হবে আশঙ্কা করে তা বাতিলের দাবি তোলে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
এর জবাবে বিলটি সংসদে তোলার একদিন আগেই সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিরোধিতাকারীরা বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে ‘অজ্ঞাত’। সমাজ বাস্তবতার কথা বিবেচেনায় রেখেই এই আইন করা হচ্ছে।
সংসদে উত্থাপিত বিলে বলা হয়, কোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষ বাল্যবিয়ে করলে তিনি সর্বোচ্চ ১৫ দিনের আটকাদেশ বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের সম্মুখীন হতে পারেন। আগের আইনে এই অপরাধে নারীর কারাদণ্ডের বিধান মওকুফ থাকলেও এবার তা নেই।
তবে সংসদীয় কমিটি ১৫ দিনের পরিবর্তে এক মাসের কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজারের বদলে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখার সুপারিশ করেছে।
সংসদে উত্থাপিত বিলে বাল্যবিয়ে পরিচালনা বা সম্পাদনের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে শাস্তির মাত্রা বাড়ানো হয়। বাল্যবিয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাবা-মাসহ অন্যদের সর্বোচ্চ দুই বছর থেকে সর্বনিম্ন ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। আগের আইনে একমাসের কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। প্রস্তাবিত আইনে বাল্যবিয়ে নিবন্ধকের জন্য একই শাস্তির পাশাপাশি সনদ বাতিলের বিধান রাখা হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে, বাল্যবিয়ের জন্য উদ্যোগী অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি আদালতের নির্ধারিত ফরমে যদি মুচলেকা দেয় যে, সে তার এলাকায় বাল্যবিয়ে বন্ধে উদ্যোগী হবেন এবং নিজে ভবিষ্যতে এ কাজে সম্পৃক্ত হবেন না তবে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে। এই আইনের অধীন আরোপিত জরিমানা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
বিলে বলা হয়, এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য এবং অ-আপসযোগ্য হবে। এ আইনের অধীনে বিচার হবে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৭
এসএম/জিপি/আরআই
** একাদশ সংসদের প্রস্তুতি নিচ্ছি
** মহাকাশে ন্যানো স্যাটেলাইট ছাড়া নিয়ে নিরাপত্তা শঙ্কা
** প্রাথমিকে ৪৫ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য