ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

থানাগুলো যেন অলিখিত ভেহিকল ডাম্পিং স্টেশন!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৭
থানাগুলো যেন অলিখিত ভেহিকল ডাম্পিং স্টেশন! থানাগুলো যেন অলিখিত ভেহিকল ডাম্পিং স্টেশন / ছবি: শাহরিয়ার

ঢাকাঃ বিভিন্ন মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট জব্দ করা বহু গাড়ি থানাগুলোতে পড়ে আছে বছরের পর বছর। আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় এসব গাড়ি থানার হেফাজতে পড়ে থাকে অযত্ন-অবহলোয়। দেখে যেন মনে হয়, থানাগুলো যেন অলিখিত ডাম্পিং স্টেশন।

বৃহস্পতিবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, পল্লবী, শাহআলী, কাফরুল, পল্টনসহ মহানগরের বেশ কয়েকটি থানা ঘুরে দেখা যায় জরাজীর্ণ বহু গাড়ির এমন দশা।

মামলা-হামলা, দুর্ঘটনা, মাদক পরিবহন, অবৈধ মালামাল বহনসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে পুলিশের হাতে আটক হয়, বাইক, ট্রাক, প্রাইভেট কার, সিএনজি ও মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি।

মামলা শুর থেকে তার নিষ্পত্তি না হওয়া  পর্যন্ত থানাগুলোতে শেড বা ছাউনিহীন খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে অযত্নে পড়ে থাকে এসব জব্দকৃত গাড়ি। এক পর্যায়ে এসব যানবাহন নষ্ট হতে হতে ব্যবহার উপযোগিতা হারায়। থানাগুলো যেন অলিখিত ভেহিকল ডাম্পিং স্টেশন

এই বিষয়ে মোহাম্মাদপুর থানায় জব্দ হওয়া নিজের মোটরবাইক সম্পর্কে আব্দুর সাত্তার নামের একজন বাংলানিউজকে বলেন, ‘তিন মাস আগে আসাদগেটের কাছে দুর্ঘটনায় পড়েছিলাম। নিজের ক্ষতির পাশাপাশি বাইকটাও খোয়ালাম। খোলা আকাশের নিচে, ঝড়ে বৃষ্টিতে চোখের সামনে ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে শখের গাড়িটা। মামলা চলছে, শেষ হবে কবে ধারণা করতে পারছি না। । ’  

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘বাইকের একটা গ্লাস সম্ভবত চুরি হয়ে গেছে। তিন দিন আগে এসেও দেখেছি। আজ দেখলাম না।   এখন আর গাড়ির প্রতি আগ্রহ খুব একটা কাজ করছে না। ’

এদিকে এইসব জব্দকৃত গাড়ি রাখার জন্য রাজধানীর আগারগাঁওয়ে,  মিরপুরে ও কাঁচপুরে গাড়ির ডাম্পিং স্টেশন থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত বলছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

মহানগর ট্রাফিক পশ্চিমের সহকারী কমিশনার শফিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রতিটি থানায় একটি করে বড় শেড থাকে যেটা ডাম্পিংয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু জব্দকৃত গাড়ির সংখ্যা এত বেশি যে সেখানে গাড়ি আর ধরে না। এ কারণে এসব যানবাহনকে থানা ত্বরে ফেলে রাখা হয়। ’থানাগুলো যেন অলিখিত ভেহিকল ডাম্পিং স্টেশন

সরেজমিনে মোহাম্মদপুর থানা ঘুরে দেখা যায়, থানার সামনে-পিছনে, আনাচে কানাচে জব্দকৃত অচল গাড়ি, এমনকি থানার সামনেও রাস্তার পাশেও ফেলে রাখা হয়েছে ২টা মিনি ট্রাক। কোনোটির সিট নেই, কোনোটির দরজা নেই, কোনোটির চাকা চুরি হয়ে গেছে, কোনোটির আবার গ্লাস উধাও, আবার কোনোটির শুধু বডিটুকু পড়ে আছে। এগুলো এতোটাই বেহাল ও ভাঙাচোরা যে ভাঙ্গারির দোকানে বিক্রির যোগ্য।  

থানা সূত্র থেকে জানা যায়, ১০ বছরের পুরনো গাড়িসহ প্রায় ৩০০’র অধিক গাড়ি থানার চত্বরে পড়ে আছে। যেসবের অধিংকাশই ব্যক্তিগত কার ও মোটরবাইক। সেগুলো সিরিয়াল নাম্বার বসিয়ে তালিকাভুক্ত করে রাখা হয়েছে।

এই বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর বাংলানিউজকে বলেন,’বেশিরভাগ গাড়ি আমরা ডাম্পিং স্টেশনে পাঠিয়ে দিই। আর বেশ কিছু গাড়ি মামলার আলামত হিসেবে রাখা হয়, মামলা চলা অবধি সেগুলো ঐভাবেই পড়ে থাকে। ’থানাগুলো যেন অলিখিত ভেহিকল ডাম্পিং স্টেশন

এইভাবে অরক্ষিত অবস্থায়, চরম অযত্নে-অবহেলায় ফেলে রাখার ফলে গাড়িগুলো নষ্ট হতে হতে বহারের অনুযোগী হয়ে যাচ্ছে। মালিক গাড়ি ফেরত পেলেও তা ব্যবহার করতে পারবে কিনা জানতে চাওয়া হলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তো মালিককে গাড়ি ফিরিয়ে দেয়া যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন পড়ে থেকে গাড়িগুলো নষ্ট হচ্ছে এটা স্বীকার করি। তবে আমাদের দিক থেকে যতটুকু করার আমরা করি, তবে দীর্ঘদিন হবার ফলেই এই হাল হয়েছে। ’

আদালতের নির্দেশ না পাওয়ায় এসব গাড়ি নিলামেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। অথচ এসব গাড়ি থানাপ্রাঙ্গণের অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল করে রাখছে। এতে একদিকে যেমন গাড়ির মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে থানার পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭
এসটি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।