ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মাঘের শীতে জ্যৈষ্ঠের ফল!

শরীফ সুমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭
মাঘের শীতে জ্যৈষ্ঠের ফল! রাজশাহীর বাজারে উঠেছে আগাম জাতের তরমুজ। ছবি: সৌরভ হোসেন

রাজশাহী: গরমে প্রাণ জুড়ানো দেশি ফল তরমুজ। তৃষ্ণার্ত মনকে তৃপ্ত করতে রসালো এই ফলের জুড়ি নেই। কিন্তু শীতে? এ সময় তরমুজের নামেই যেন ঠাণ্ডা বেড়ে যায় শরীরে। তবুও শীতের বাজারে এসে হাজির হয়েছে গরমের এ তরতাজা ফল।

পঞ্জিকার অনুশাসন মেনে এখন শীত যেমন পড়ছেনা। তেমনই মাসের দিনক্ষণ দেখে আর বাজারে ফল-ফলাদিও উঠছেনা।

শীতের উঞ্চ কাপড় পড়ে তরমুজ কেনার দৃশ্য চোখে বেমানান লাগলেও এটাই সত্য। মাঘের শীতেই এবার ফল বাজারের আধিপত্য নিতে চাচ্ছে জ্যৈষ্ঠের রঙিন তরমুজ। আগাম স্বাদের প্রাচুর্য ছড়িয়ে কাড়তে চাচ্ছে ক্রেতাদের নজর। তাই বাজারে রসালো ফলের বিকিকিনি শুরু হয়েছে মধুমাসের আগেই।

তবে মন ভালো নেই রাজশাহীর তরমুজ ব্যবসায়ীদের। কারণ নতুন বছরের ফল তুলেও কেনাবেচায় সাড়া নেই। হালকা শীত থাকায় তরমুজের দোকানে তেমন ভিড় নেই। তারপরও এই প্রিয় ফল বাজারে দেখে ‍অনেকেই লোভ সামলাতে পারছেন না। শীতের মধ্যেও শখ করে কেউ কেউ ঘরে নিচ্ছেন এ জ্যৈষ্ঠের ফল।

সরেজমিনে রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার, স্টেশন বাজার, উপশহর নিউমার্কেট, লক্ষ্মীপুর, হড়গ্রাম, শালবাগান ও নওদাপাড়া বাজারেও সীমিত আকারে তরমুজ বিক্রি করতে দেখা গেছে।

রাস্তার ওপর মাচা তৈরি করে সবুজ ডোরাকাটা তরমুজগুলো সারি করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ভেতরটা তেমন লাল টকটকে না হলেও স্বাদে মিষ্টি। প্রতিটি তরমুজের ওজনই প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন কেজি। তবে চার থেকে পাঁচ কেজি ওজনের তরমুজও রয়েছে। যার সবই হাইব্রিড জাতের তরমুজ।
শীতের পোশাক পড়ে আগাম জাতের তরমুজ কিনছেন ক্রেতারা।  ছবি: সৌরভ হোসেন

ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত ফাল্গুন মাসের শেষ দিক থেকে বাজারে তরমুজের মৌসুম শুরু হয়। তখনকার বাজারে ব্লাক বেবি, জেসমিন-১ ও ২ জাতের তরমুজের বেশি আমদানি থাকে। এজন্য দামও ক্রেতাদের হাতের নাগালের মধ্যে চলে আসে। কিন্তু অসময়ে বাজারে আসায় এখন দাম বেশি।

মহানগরীর শালবাগান বাজারের খুচরা তরমুজ ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বাড়তি লাভের আশায় সিলেটের সুনামগঞ্জ ও বরিশালের পটুয়াখালী থেকে এসব তরমুজ রাজশাহী আনা হচ্ছে। দাম বেশি। কিন্তু নতুন ফলের স্বাদ নিতে অনেকে শীতের মধ্যেও তরমুজ কিনছেন। তবে ক্রেতার সংখ্যা কম। মার্চের শুরুতে গরম বাড়বে। তখন বিক্রিও বাড়বে বলে প্রত্যাশা এই ব্যবসায়ীর।     

শালবাগান বাজারের পাইকারি তরমুজ ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম বলেন, ট্রাক ভাড়া দিয়ে সিলেটের সুনামগঞ্জ থেকে আনা এসব তরমুজের দাম পড়ছে ১৬ থেকে ১৮শ’ টাকা মণ। সেই হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। তারা আবার ৫০-৫৫ টাকা কেজি বিক্রি করছেন। তবে ভরা মৌসুমে দাম ২৫-৩০ টাকায় নামবে বলে জানান সাইদুল ইসলাম।

এসব তরমুজে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে কীনা প্রশ্নে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী বাংলানিউজকে বলেন, এগুলো আগাম জাতের তরমুজ। সাধারণত সিলেটের সুনামগঞ্জ, বরিশালের পটুয়াখালী ও ভোলায় এসব আগাম জাতের তরমুজ চাষ হয়। স্বাভাবিক নিয়মেই এসব হাইব্রিড তরমুজ পাকে। তার পরই জমি থেকে কেটে বিক্রির জন্য তা বাজারজাত করা হয়।    

তাই এগুলোতে কোনো কেমিক্যাল মেশানোর প্রয়োজনই হয়না। ফলে এগুলোতে স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। তবে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী ব্যবসায়িক স্বার্থে এসব তরমুজে কিছু প্রয়োগ করলে কিছু বলার নেই। এজন্য কেনার আগে তরতাজা দেখে তরমুজ কেনার পরামর্শ দেন কৃষি বিভাগের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১১০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭
এসএস/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।