সর্বসাধারণের জন্য গণপরিবহনের সুবিধাদির আধুনিকায়নে ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে মেট্রোরেল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় বোর্ড। মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে জাইকা ঋণ দিচ্ছে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
এর প্রথম ধাপে রাজধানীর মিরপুর-১০ থেকে শেরে বাংলানগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সড়কের নিচের ১২টির বেশি ইউটিলিটি স্থানান্তরের কাজ চলমান আছে। এ খাতে মোট বরাদ্দ ২০১ কোটি টাকা। ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্টদের ৬০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্প এলাকায় ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি), তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (তিতাস), বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি (বিটিসিএল), ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যুয়ারেজ অথরিটি (ওয়াসা), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), গ্রামীণফোন, মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস (এমইএস), সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেড (এসসিএল), এফঅ্যান্ডএইচ এবং ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নানা ইউটিলিটি লাইন ও ফাইবার হোমস ইউটিলিটি স্থানান্তরের কাজ এগিয়ে চলেছে।
যানজটমুক্ত রাখা ছাড়াও প্রকল্প এলাকার বাসিন্দারা যেন ধুলো-বালির ভোগান্তিতে না পড়েন, সে লক্ষ্যে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার পানি ছেটানোর কথা ছিলো। কিন্তু সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ইউটিলিটি স্থানান্তরের স্থানগুলোতে সরকারি ছুটির দিনেও দীর্ঘ যানজট। পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধুলো-বালি নিরসনে পানি ব্যবহার করা হয় না। ফলে প্রকল্প এলাকায় জনদুর্ভোগও চরমে পৌঁছেছে।
মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়ার রাস্তায় ছোট সাদা ব্যানারে লাল অক্ষরে লেখা- ‘বাঁচবে সময়, বাঁচবে তেল, জ্যাম কমাবে মেট্রোরেল’। এ ব্যানারের কাছে চলছে ইউটিলিটি স্থানান্তরের কাজ।
এলাকাটির বাসিন্দা শামসুল হক গত কয়েকদিন ধরে ধুলো-বালির কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রায় দুই মাস ধরে কষ্ট করছি। রাস্তার পাশেই আমার বাসা, সব সময় ধুলো-বালিতে ভরে থাকে। এ কারণে প্রতিদিন দুই-তিন ঘণ্টা কাশি হয়। রাতে অনেক সময় ধুলো-বালিজনিত রোগের সমস্যায় ঘুমাতে পারি না। আমি এ এলাকায় কখনো পানি ছেটাতে দেখিনি’।
রাস্তার পাশের দোকানগুলোতেও বেচা-কেনা কমে গেছে ধুলো-বালির কারণে। দোকানিরাই নিজ উদ্যোগে পানি ব্যবহার করে পরিবেশ ঠিক রাখার চেষ্টা করছেন।
শেওড়াপাড়ার ফুল বিক্রেতা ডালিম আহমেদ বলেন, ‘ধুলো-বালি উড়ে কষ্টের কোনো শেষ নেই। মানুষের চলাচলের জায়গায়ও মাটি পড়ে আছে। রাস্তায় ঠিকমতো গাড়ি চলতে পারে না, মানুষ যেতে পারে না। ওরা কখনও পানি দেয় না, পানি আমাদেরকেই দিতে হয়। প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করলে আমাদের জন্য ভালো হয়’।
রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কের অর্ধেকটাই সব সময় বন্ধ থাকে। ফলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এলাকায় সব সময় লেগে থাকে জটলা। যানবাহন চলাচলের পথে তৈরি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা, সব সময় লেগে থাকছে যানজটও।
দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে প্রকল্পের পরিচালক মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, নিয়মিত পানি না দেওয়ায় সব সময় ধুলো-বালিতে অন্ধকার হয়ে থাকে। আমরা বলেছি, যাদের ইউটিলিটি তাদেরকেই স্থানান্তর করতে হবে। আমরা শুধু তাদের অর্থায়ন করবো। সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একাধিক মিটিংও করেছি। বার বার তাদের তাগিদ দিয়ে যাচ্ছি, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির সময় নিয়মিত পানি ছেটাতে হবে। আমরা যখন পরিদর্শনে যাই, তখন তারা পানি ছেটায়। কিন্তু যখন যাই না, তখন কেউ পানি দেয় না’।
‘আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ নিরাপত্তা, জটলা না সৃষ্টি করে নিরাপদে ইউটিলিটি স্থানান্তর। কিন্তু ওয়াসা ও ডেসকোসহ সংশ্লিষ্টরা নিয়ম মেনে ইউটিলিটি অপসারণ করছে না। এ বিষয়ে নতুন পদক্ষেপ নেবো’।
তবে প্রকল্প পরিচালকের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘সব কিছু মেনেই আমরা ইউটিলিটি স্থানান্তর করছি। এতে যেন জনদুর্ভোগ না হয়, সেটিই থাকে আমাদের ফার্স্ট প্রায়োরিটি। জিআইএস (জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম) ম্যাপ অনুসারে যেটুকু ইউটিলিটি আছে, আমরা সেটুকু ভালোভাবেই স্থানান্তর করছি। কোথাও কোনো দুর্ভোগ হচ্ছে না’।
ধুলো-বালি নিরসনে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ধুলো-বালির সমস্যা নিরসনে পানি ছেটানো একটি সিলি প্রশ্ন’।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর