গাবতলীতে গাড়ি থামা মাত্র একটি গ্রুপ দৌড়ে চলে আসে বাসের কাছে। যাত্রীরা হাতে বহনকারী ব্যাগ নিয়ে নামলেও সিটি কর্পোরেশনের টোল আদায়ের নামে চাঁদা দাবি করেন তারা।
শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে দেখা গেছে, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, অ্যাশ কালারের ফুলহাতা গেঞ্জি পরা ছাত্তার নামের এক যুবক বাসের যাত্রীদের সঙ্গে টাকা নিয়ে বির্তকে জড়িয়ে পড়েন। তার পেছনে ফুলহাতা প্রিন্টের শার্ট পরা জুম্মন দাঁড়িয়ে আছেন টাকা নিতে। জুম্মনের মুখেও ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি।
সরকার পরিবহনে রাজবাড়ী থেকে আসা যাত্রী শরিফ মো. রেজাউল খান বিল্লাল গাবতলীতে নেমে গাড়ি থেকে দু’টি ব্যাগ নামিয়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশা খুঁজছিলেন। এ সময় ছাত্তার ও জু্ম্মন এসে টাকা চান। কুলিদের সঙ্গে বিতর্কে গেলে মান ইজ্জত থাকবে না- এ ভয়ে বিল্লাল দু’টি দশ টাকার নোট ধরিয়ে দেন ছাত্তারের হাতে। দ্রুত টাকা নিয়ে সটকে পড়েন ছাত্তার।
এভাবে এক গাড়ি থেকে আরেক গাড়ির কাছে দৌড়ে যাচ্ছেন ছাত্তার ও জুম্মন। যাত্রীদের কেউ টাকা দিতে না চাইলে তাকে মালপত্র নিয়ে বের হতে দিচ্ছেন না।
ছাত্তারকে টাকা দেওয়ার পর কথা হয় শরিফ মো. রেজাউল খান বিল্লাল বাংলানিউজকে বলেন, ‘কি করবো, টাকা না দিলে তারা বাজে বাজে কথা বলে। আবার অনেক সময় ব্যাগ নিয়ে টানাটানি করে। তাই ঝামেলায় না গিয়ে টাকা দিয়ে দিলাম’।
ছাত্তারকে লক্ষ্য করে একটু এগোতেই দেখা যায়, সেবা গ্রিন লাইনের একটি বাস গাবতলীতে পৌঁছেছে। দ্রুত উপস্থিত ছাত্তার ও জুম্মন। সেখানেও যাত্রী সিহাব উদ্দিনের সঙ্গে টাকা নিয়ে তর্ক করছেন তারা। এরপর টাকা নিয়ে চলে যান।
সিহাব উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘তারা (কুলি নামধারী ওই চক্র) আসলে টোল আদায় করে, নাকি চাঁদাবাজি করে, বুঝি না। জোর করে টাকা নেয়, না দিলেই গালিগালাজ করে। তাই মান-ইজ্জতের ভয়ে দিতে হয়’।
এরপর ছাত্তারকে সিটি কর্পোরেশনের লোক কি-না? এমন প্রশ্ন করাতে বলেন, হ্যাঁ। কার্ড দেখাতে বললে বলেন, ‘আমার কাছে কোনো কার্ড নেই’। যাত্রীর কাছ থেকে টাকা নিলেন কেন? জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি টাকা চাই নাই। যাত্রীকে জিগান, টেহা চাইছি নাকি? খুশি হইয়া যেইডা দিছে, লইছি’।
শুধু ছাত্তারই নন, তার সঙ্গে জুম্মন ছাড়াও রয়েছেন রফিক ও কাশেম। এ চক্রের কথা বাংলানিউজকে ছাত্তারই জানান। তারা সবাই যাত্রীদের কাছ থেকে সিটি কর্পোরেশনের নামে টাকা উত্তোলন করেন, কিন্তু সিটি কর্পোরেশন আদৌ এ টাকা পায় না।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (অঞ্চল-৪) গুল্লাল সিংহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘তারা যাত্রীদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করে, যাত্রীদের টাকা দিতে বাধ্য করে। এটা আসলে আমাদের দেখার কথা নয়। আমরা ইজারা দিয়েছি, তারাই দেখবেন। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আছে, তাদের কাছে অভিযোগ দিলে তারা ব্যবস্থা নেবে। আমাদের কিছু করণীয় নেই’।
গাবতলীতে মালামালের টোল আদায় ঘর রয়েছে বাস টার্মিনালের কাছেই। সেখানে ক্যাশিয়ার মো. জয়নাল শেখ বলেন, ‘আমরা কোনো যাত্রীর কাছ থেকেই টাকা নেই না। এটা যারা করে, তারা নেশাখোর। এসব অভিযোগে প্রায় প্রতিদিনই দুই চারজনকে ধরে মারপিট করি। তারপরেও বন্ধ করতে পারছি না’।
তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র তালিকায় যেসব পণ্যের দর নির্ধারণ করা আছে, সেগুলোর জন্যই কুলি চার্জ আদায় করা হয়। এর বাইরে যা কিছু নেওয়া হয়, সবই অবৈধ। এজন্য যাত্রীদের প্রতি আমার অনুরোধ, যারা টাকা চাইবে, তাদের পরিচয়পত্র দেখে টাকা দেবেন’।
যাত্রী ছাউনির নিচে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মালামাল ওঠা-নামার কুলি মজুরি আদায়ের তালিকা রয়েছে। তালিকায় যেসব মালামালের বিবরণ রয়েছে, তাতে কোথাও হাতে বহনকারী ব্যাগের উল্লেখ নেই।
তালিকা অনুসারে পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, আদা, মরিচ, আলু, ডিম ও মাছের বড় বস্তা ২০ টাকা ও ছোট বস্তা ১০ টাকা, পানের বড় খাচি ৪০ টাকা ও ছোট খাচি ২০ টাকা, মুরগির বড় খাচি ৩০ টাকা ও ছোট খাচি ২০ টাকা, কাপড়ের বড় বান্ডিল ৫০ টাকা ও ছোট বান্ডিল ২৫ টাকা এবং টিভির জন্য ২০ টাকা ধরা রয়েছে। এগুলোও কুলিদের দিয়ে ওঠাতে-নামাতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৭
এসএম/এএসআর