মতিঝিল থেকে ইত্তেফাক মোড় ও পল্টন থেকে মতিঝিল যাওয়া সড়ক-ফুটপাতে কয়েকজন হকার ছাড়া পুরো রাস্তাই হকারমুক্ত। তবে রাস্তা-ফুটপাত হকারমুক্ত হলেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে রাস্তা দখল করে দাঁড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য গাড়ি।
গাড়ি পার্কিং এর এই দৃশ্য দেখেই ক্ষোভের কথাগুলো বলেন ফুটপাত ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান। শুক্রবার ও শনিবার ছুটি হওয়ায় এই সুযোগে আবার ফুটপাতে বসেছেন আনিসুর। এছাড়া বাকি দিনগুলো পুলিশের ভয়ে দৌড়ের উপরেই থাকতে হয় তাকে।
গত নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের ফুটপাত দখলমুক্ত করার ঘোষণার পর থেকে হকাররা উচ্ছেদের মুখে রয়েছেন। ১০ মিনিটের জন্য ফুটপাতে বসলেই পুলিশ এসে উঠিয়ে দেয়।
শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, গুলিস্তান, মতিঝিল ও পল্টন এলাকায় যত্রতত্র রাস্তার পাশে পার্কিং করে থাকতে দেখা যায় শত শত গাড়িকে। সড়কের তিন ভাগের এক ভাগ পার্কিংয়ের দখলে। তিন মাস আগেও এসব এলাকায় রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে হকারদের রমরমা ব্যবসা চলতো। উচ্ছেদ অভিযানের পর হকাররা উঠে গেলেও প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল বিআরটিসি বাসসহ বিভিন্ন পরিবহনের অবৈধ পার্কিং বেড়ে গেছে।
ফুটপাতে বসা স্যান্ডেল বিক্রেতা তারেক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে রাস্তা-ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য। ’
পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা মটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার দেখিয়ে তিনি বলেন, দেখেন, কত গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। ছুটির দিন না হলে আরো কত দেখতেন! হকারদের থেকে গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে রাস্তা বেশি দখল হয়। তাহলে আমাগো কি দোষ? –বলে প্রশ্ন তোলেন তারেক।
হকার উচ্ছেদের পরেও ফুটপাত-রাস্তা দখলমুক্ত না হওয়া ক্ষোভ প্রকাশ করেন এসব এলাকায় চলাচলকারী পথচারী,চাকরিজীবী ও বাসিন্দারা।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিংয়ের কর্মকতা আরিফুজ্জামান আরিফ বলেন, ‘সুযোগ পেলে হকাররা বসতেছে। তবে নিয়মিত অভিযানের কারণে প্রায় কমে গেছে। গাড়ি পার্কিংয়ের উৎপাত অনেক বেড়েছে। অফিসগুলোতে পার্কিং স্থান নেই। সব রাস্তায় দাঁড় করানো থাকে। রাস্তার উপর গাড়ি রাখা হকারদের জ্বালাতন থেকে কম না বলে জানান তিনি।
ঢাকা চেম্বার অব কর্মাস, ফেডারেল ভবনের সামনে অনেকগুলো গাড়িকে পার্কিংয়ে থাকতে দেখা যায়। এতে সড়কের অর্ধেক পার্কিংয়ের দখলে চলে গেছে। ইত্তেফাক মোড় থেকে মতিঝিলের দিকে একটু এগুলে রহমান চেম্বারের সামনে রাস্তার মধ্যে গাড়ির লাইন।
এছাড়া মতিঝিলের শিপিং করপোরেশন, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা টাওয়ার, জীবন বিমা ভবন, অফিসপাড়া, মতিঝিল-টিকাটুলী সড়কের দু’পাশে অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ের চিত্র চোখে পড়ে। ফুটপাতে লাইন করে দাঁড় করানো রয়েছে মোটরসাইকেল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনে এসব গাড়ি পার্কিং করা রয়েছে। পুরো মতিঝিলের বিভিন্ন সড়কের দিকে তাকালে চোখে পড়ে হকারের বদলে অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিংয়ের এই চিত্র।
শাপলা চত্বরে ট্রাফিক কন্ট্রোলের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশ প্রসেনজিৎ কুমার বাংলানিউজকে বলেন, ট্রাফিক আইন অনুসারে পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া রাস্তা বা জনসাধারণের দুর্ভোগ হয় এমন স্থানে গাড়ি রাখা নিষেধ। অনুমতি নিয়ে সর্বোচ্চ দশ মিনিটের জন্য গাড়ি রাখতে পারবে। এর বেশি হলে মামলা বা জরিমানা গুনতে হবে।
মতিঝিলে গাড়ি পার্কিংয়ের অবৈধ চিত্র নিয়ে বলেন, এখানে অনেক বিষয় আছে। অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গাড়ি পার্ক করা থাকে। এ কারণে আমাদের কিছুই করার থাকে না।
মতিঝিলে মঈন উদ্দিন ফাউন্ডেশনের গাড়িচালক শিহাব বলেন, আমাদের অফিসে গাড়ি পার্কিং করার কোনো ব্যবস্থা নেই। দেড় বছর ধরে এখানে গাড়ি চালাই, রাস্তায় পার্ক করি। রাস্তায় পার্কিং নিষেধ কি না জানি না।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৭
এমসি/আরআই