এর ফলে আরও একবার প্রমাণ হলো, দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত (দুদক) সঠিক ছিলো। ফলে পদ্মাসেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি ছিলো না এমনটি বলছেন দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) বাংলানিউজকে তিনি একথা জানান।
দুদক সচিব বলেন, ওই সময় যে মামলাটি দায়ের করা হয়। তখন তদন্ত শেষে দুদক সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না পাওয়ায় আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ার অনুরোধ করে। এছাড়া তখন অনেকেই আমাদের কার্যক্রমকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছিলেন। শুধু তাই নয়, আমরা বরাবরই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম কমিশন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে কোনো ভুল করেনি।
সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, সমালোচনাকারীদের প্রতি কমিশনের অনুরোধ শুধুমাত্র জনশ্রুতির বসবর্তী হয়ে সমালোচনা করবেন না। সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ও সাক্ষ্য প্রমাণাদির ভিত্তিতে সমালোচনা করবেন। এছাড়া সমালোচনাকারীদের দুদকের প্রতি আস্থা রাখতে হবে এবং কমিশন তাদের প্রত্যাশা অবশ্যই পূরণ করবে।
অন্যদিকে, তখনকার দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান ২০১৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, পদ্মাসেতু দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ পায়নি দুদক। এ কারণে সব আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এছাড়া আরও বলেন, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
শুধু তাই নয়, বিশ্বব্যাংকের চাপে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররাফ হোসেন ভূঁইঞাকে প্রধান আসামি করে ৭ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে কমিশন। মামলায় সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে সন্দেহভাজন হিসেবে রাখা হয়।
দীর্ঘ ২২ মাস তদন্ত শেষে দুদকের তদন্তকারীরা তদন্তে অভিযোগের প্রমাণাদি না পাওয়ায় মামলার ৭ আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে ২০১৪ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশে পদ্মাসেতু দুর্নীতি মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন।
এছাড়া ২০১১ সালের এপ্রিলে পদ্মাসেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের একটি ঋণচুক্তি হয়। সেতুর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দরপত্রে অংশ নেওয়া এসএনসি-লাভালিনের সঙ্গে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক ২০১২ সালের ২৯ জুন পদ্মাসেতুতে ঋণচুক্তি বাতিল করে।
সরকারের অনুরোধে একই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর এ প্রকল্পে পুনরায় সম্পৃক্ত হতে রাজি হলেও তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থায়ন করতে অসম্মতি জানায় সংস্থাটি। ফলে নিজ অর্থায়নে পদ্মাসেতু প্রকল্পের কাজ শুরু করে বর্তমান সরকার।
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, যে তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মামলাটি করা হয়েছিলো সেটি ভিত্তিহীন। কানাডার আদালতের রায় বাংলাদেশের জন্য বড় একটি সুসংবাদ। শুধু তাই নয়, সরকারের পক্ষ থেকে এখন বিশ্ব ব্যাংকের ওপর একটি জবাবদিহিতা নিশ্চিতের প্রয়োজন রয়েছে।
কেননা বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ার আগেই তারা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। যা বাংলাদেশের জন্য সম্মানহানিকর।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন দেশে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় যে সমস্ত প্রকল্প চলমান রয়েছে। তাতে যেকোনো ধরনের দুর্নীতি হচ্ছে না, সেটি কি বিশ্ব ব্যাংক বলতে পারবে? সেটি নিশ্চয় বিশ্ব ব্যাংকের পক্ষে বলা সম্ভব নয়। তাই সরকারের উচিত কোনো তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো এবং এর পেছনে অন্য কোনো উপাদান কাজ করেছে কিনা, তার একটা জবাবদিহিতা বিশ্ব ব্যাংকের কাছে চাওয়া। কেননা বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশের যে সম্মানহানি হয়েছে সেটি দুঃখজনক।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৭
এসজে/পিসি