ঢাকা, শুক্রবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বসন্ত বাতাসে ভালবাসার অপেক্ষায় ফুল কারিগররা!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৭
বসন্ত বাতাসে ভালবাসার অপেক্ষায় ফুল কারিগররা! গাঙ্গিনারপাড় রোডস্থ ফুলের দোকান/ছবি: অনিক খান

ময়মনসিংহ: পিচঢালা ব্যস্ত সড়কের পাশেই ছোট্ট টুলে বসে বসন্ত বরণের গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ নানা রঙের বাহারি ফুলে মুকুট তৈরির কাজ করছেন কারিগর তাপস সরকার (৩৪)। ছোট্ট টেবিলের ওপরেই সাউন্ড বক্সে বেজে চলছে জীবনমুখী গানের শিল্পী বারী সিদ্দিকীর ‘ভবের দেশে চল রে মানুষ...’ গানটি।

বসন্ত বাতাসে ফুলের সুবাসে মনটা আনচান করছে ঠিকই। তবুও হাসি নেই তাপস ও আরেক কারিগর জাহাঙ্গীরের (২৮) মুখে।

শীতের শুষ্ক দিনে ফুল ফুটার পুলকিত দিনের আকাঙ্খিত সময়েও তরুণ-তরুণীদের ফুল কেনার প্রতিযোগিতা না থাকার কারণেই হাসি উবে গেছে এ কারিগরদের। অবশ্য এ নিয়ে খুব একটা আক্ষেপ নেই তাদের।

প্রেম আর ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হবার দিন বিশ্ব ভালবাসা দিবসের অপেক্ষায় নগরীর গাঙ্গিনারপাড় রোডস্থ মালা স্টোরের এ কারিগর।

একদিন পরেই মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ভালবাসা প্রকাশে তরুণ-তরুণীদের হাতে থাকতে হবে লাল গোলাপ।

সেদিন যে প্রিয়জনকে পাশে বসিয়ে ফুলের তৈরি মাথার ব্র্যান্ড, হাত বা গলার মালা জড়িয়ে টুক করে বলে ফেলতে হবে হৃদয়ের গভীরে লালিত সেই না বলা কথাটি। আর তাই কিনা ভালাবাসার সুগভীর অনুভূতির দিনটির জন্যই তাদের এমন অপেক্ষা।
গাঙ্গিনারপাড় রোডস্থ ফুলের দোকান/ছবি: অনিক খানরোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে বাঙালির চিরন্তন বসন্ত উৎসবকে সামনে রেখে নগরীর গাঙ্গিনারপাড় সড়কের মালা স্টোর, রজনীগন্ধা পুষ্প কেন্দ্র ও পুষ্পমেলাসহ কয়েকটি দোকানে এমন ঘটনা প্রবাহ চোখে পড়ে।

ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বসন্ত। বিপুল ঐশ্বর্যের অধিকারী ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নিতে তরুণ-তরুণীদের হাতে ফুল তুলে দিতে আগে থেকেই প্রস্তুত নগরীর ফুল ব্যবসায়ীরা।

যশোরের গদখালি আর রাজধানীর শাহবাগ থেকে আনা ফুলে তরুণীরা সাজিয়ে তুলেন নিজেদের।

ফাগুনের প্রথম দিনেই বাসন্তী রাঙা শাড়ি পড়ে পথে নামবে তরুণীরা। খোঁপায় গাঁদা ফুল আর কপালে লাল টিপে বাঙালি নারীরা নিজেদের পূর্ণ রূপ ফুটিয়ে তুলেন।

ফলত তরুণ প্রাণের এক অপূর্ব মিলন মেলায় পরিণত হয় ব্রক্ষপুত্র নদঘেষা জয়নুল উদ্যান আর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বোটানিক্যাল গার্ডেন।

বসন্ত মানেই ফুলের সৌরভে রঙিন হওয়ার দিন। কিন্তু প্রিয়জনকে ফুল উপহার দিতে উপচে পড়া ভিড় নেই নগরীর ফুলের দোকানগুলোতে।

বছরজুড়ে যেমন ফুলের চাহিদা থাকে শুধুমাত্র তার চেয়ে কিছুটা বেশি গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা ফুলের বিক্রি হচ্ছে। এ অর্থে ফুলের বিক্রিতে ভাটা পড়ায় দোকানি বা কারিগরদের মাঝে বসন্ত উত্তাপ নেই।
গাঙ্গিনারপাড় রোডস্থ ফুলের দোকান/ছবি: অনিক খাননগরীর মালা স্টোরের ফুল কারিগর তাপস সরকার বাংলানিউজকে জানান, বেচা-কেনা তেমন একটা নেই। অন্যান্য বছর এ সময়টাতে অনেক চাপ থাকে। গাঙ্গিনারপাড় এলাকায় যানজট বেঁধে যায়। আর এবার সড়ক ফাঁকা।

চলতি বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা চলার কারণে তরুণ-তরুণীরা ফুলের দোকানে তেমন ভিড় করছেন না। ফলে বেচা-বিক্রিতে ভাটা পড়েছে।

তবে সোমবার দুপুরের পরপরই ফুলের দোকানগুলো জমে উঠবে বলেও মনে করেন তিনি।

‘পহেলা ফাল্গুন বা বিশ্ব ভালবাসা দিবসে প্রতি বছর একদিনে অর্ধ লক্ষাধিক টাকার ফুল বেচা-কেনা হয়। এবার মাত্র ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে।

আমরা ভালবাসা দিবসের অপেক্ষায় আছি। সেদিন বেচা-বিক্রি হবে বাম্পার’ বলছিলেন কারিগর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।

তাদের সঙ্গে আলাপের সময়েই বাসন্তী রঙে বাহারি সাজে নিজেকে রাঙিয়ে তুলতে ফুলের এ দোকানটিতে আসেন তিন তরুণী।

কংক্রিটের নগরীতে কোকিলের কুহু ধ্বনি শুনতে না গেলেও বাঙালিয়ানা সাজে নিজেকে সাজাতে ফুলের বিকল্প নেই, বলেই ফুল নিয়ে যাচ্ছেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ০৬১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৭
এমএএএম/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।